somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"পরিবেশের তিক্ত তামাশা-পতিতা "

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কলিমুদ্দিনের রোডে রাণী হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে বিলবোর্ড দেখছিলাম।২ বছরে এই প্রথম বারে মদ না খেয়ে এখানে এসেছি।উদ্দেশ্য ছিল কোন এক পতিতার সাথে রাত কাটাবো।এই হোটেলটা সরকার অনুমোদিত তাই এখানে পুলিশের সাথে ঝামেলা কম হয়।পকেটে এক প্যাকেট সিগারেট।অনেকক্ষণ বিলবোর্ডের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।তারপর হোটেলটার ভিতরে ঢুকলাম।রাত প্রায় ১২ টার মতো বাজে।ভিতরে অনেক কোলাহল না থাকলেও মানুষের অভাব ছিল না।

ভিতরে ঢোকামাত্র বিভিন্ন বয়সের মেয়ে আর মহিলারা আমাকে তাদের কাছে ডাকছিল।হাত ধরে টানাটানি করছিল।আমি তাদের কারো ডাকেই সাড়া দিচ্ছিলাম না।একেবারেই চুপচাপ দক্ষিণের দিকে একটা কালো মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল আমি ওইদিকে এগিয়ে গেলাম।যদিও আমি এইসব জায়গায় কখনও আসি নি তবুও প্রফেশনালদের মতো মেয়েটার দিকে এগোতে থাকলাম।সবার থেকে মেয়েটা কালো।পতিতাদের ব্যাপারে যতটুকু শুনেছিলাম যে,তারা সবসময় সেজেগুজে থাকতে পছন্দ করে যাতে তারা পুরুষদের আকর্ষিত করতে পারে।কিন্তু মেয়েটার ক্ষেত্রে সম্পূর্ন উল্টা দেখলাম।মুখে কোন মেক আপ ছিল না।ঠোঁটে লিপস্টিক ছিল না।এই ব্যাপারটাই আমাকে মেয়েটার প্রতি আকর্ষিত করেছে।
...
আমি ধীরে ধীরে মেয়েটার দিকে এগোলাম আর মেয়েটা মুচকি হাসছিল।সামনে যেতেই আমার কিছু বলার আগে মেয়েটা বলে উঠলঃ
>পাঁচশো মাত্র।
বলে আবার মুচকি হাসে।আমি কিছু বললাম না।আমি গত দু বছরে কখনো অফিস থেকে বাসায় ডাইরেক্ট ফিরে যাই নি।তাই সবসময় গলায় ভদ্রের প্রতীক টাইটা বাধা থাকতো।মেয়েটা আমার টাই ধরে ঘরের ভিতর নিয়ে গেল।মেয়েটা বেগুনি রঙের একটা শাড়ি পড়া।শাড়িটা এমনভাবে পড়াছিল যাতে ওর বুকের খাঁজ আর কমড়টা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল।আমি খাটে গিয়ে দুহাত পিছনে ভর দিয়ে হেলানের মতো বসে পরলাম।ঘরে ঢুকে মেয়েটা ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলো।
ব্লাউজের সাথে শাড়িটা সেপ্টিক পিন দিয়ে আটকানো ছিল।মেয়েটা ওটা খোলার জন্য চেষ্টা করছিলো।ওখানেই ধ্যান ছিল হঠাৎ আমি বলে উঠলামঃ
>লাইটটা বন্ধ করে দিন।
মেয়েটা শাড়ির দিক থেকে নজর সড়িয়ে আমার কথাকে খেয়াল করে হেসে বললঃ
>সবাই লাইট জ্বালিয়ে করে তুই কোন পাকা খিলারি লাইট নিভিয়ে করবি।
আমি মেয়েটার কথার কোন উত্তর দিলাম না।আমার উত্তর না পেয়ে মেয়েটা নিজেই আবার বলে উঠলঃ
>একটু অপেক্ষা কর শাড়িটা খুলে নেই।
আমি তার কথার সাথে সাথেই বলে উঠলামঃ
>শাড়ি খোলা লাগবে না।আপনি লাইটটা নিভিয়ে এদিকে আসুন।
মেয়েটা বাম চোখের ভ্রু-কুচকে বললঃ
>আয় হায়!!সহ্য হইতাসে না বুঝি।আইতাসি অপেক্ষা কর।
...
মেয়েটা নির্ঘাত আমার ছোট হবে,২২ কিংবা ২৩ বছর হবে।আমার বয়স ২৬।তারপরেও মেয়েটা আমাকে তুই করে বলছিলো।পতিতাদের এইটা নাকি স্বভাব।বিভিন্ন বয়সের মানুষদের সাথে মেলামেশা করতে করতে আচরণ কিছুটা এইরকমই হয়ে যায়।মেয়েটা লাইট নিভিয়ে দিয়ে আমার দিকে আসছিলো।হঠাৎ আলো থেকে অন্ধকার হয়ে গেলে কিছু দেখা যায় না।কিন্তু আমি অনুভব করলাম মেয়েটা আলতো পায়ে আমার দিকে আসছিলো।
বাইরের আলোর কারনে এবার কিছুটা দেখতে পারলাম।মেয়েটা আমার পাশে এসে বসল।আমার ডান গালে একটা চুমু খেয়ে আমার পড়নের কোর্টটা খুলে ফেলার সাথে সাথেই আমি বলে উঠলামঃ
>আপনার গল্প বলুন।
বুঝতে পারলাম অপ্রস্তুতভাবে কথাটা শুনে মেয়েটা বিরক্ত বোধ করল আর বললঃ
>তোর কি আমাক্র ঘুম পারানি মাসি পিসি মনে হয়ে যে,গল্প বলে তোকে ঘুম পারিয়ে রাখব?
>না তেমন কোন কথা না।
>তাইলে,আমি ঠাকুমার ঝুলি খুইলা বসছি নাকি যে খালি একটার পর একটা গল্প বলতেই থাকমু?করতে এসেছিস করে চলে যাবি।এত কাহিনী শুনার শখ কেন?
>না আমি ওইসব গল্প না,আমি আপনার নিজের গল্প শুনতে এসেছি।
>মানে?
>মানি,আপনি এখানে কেন এলেন,কিভাবে এইখানে দিন কাটান।এইসব ব্যাপারে?
মেয়েটা আমার কথার কি বুঝল কে জানে।হুট করে আমার পাশ থেকে খাট থেকে লাফ মেরে তারাতারি গিয়ে লাইটটা জ্বালিয়ে দিলো।লাইটটা আমার চোখে লাগাতে চোখের উপর হাত দিলাম।
মেয়েটার শরিরের শাড়ি ফ্লোরে পরে আছে।গায়ে শুধুমাত্র ব্লাউজটা দেওয়া।কমড়ে হাত দিয়ে চোখ বড় করে মেয়েটা চেঁচাতে শুরু করল।বললঃ
>তুই শালা সাংবাদিক?আমার কাহিনী শুনে পেপারে ছাপাবি?আমাদের কোন দাম নাই।ফাইজলামি পাইসো?
...
আমি বুঝতে পেরে মেয়েটাকে শান্ত করার চেষ্টা করলামঃ
>আপনি ঠিক ব্যাপারটা বুঝতে পারেন নি।আমি এমন কিছু না।আমি শুধু আপনাদের ব্যাপারে জানতে চাই।
গেটের দিকে ইশারা করে জোরে বললঃ
>যা এইখান থেকে।বের হ ঘর থেকে।
দরজার বাইরে মনে হয় অনেক লোক জমা পরে গেছে।সবাই দরজা টোকা দিয়ে কি হয়েছে জিজ্ঞাস করছে।আমি বিছানা থেকে উঠে দরজার সামনে গেলাম।যাওয়ার আগে মেয়েটার সামনে গিয়ে চোখে চোখ রাখলাম।তারপর দরজা খুলে সবার উদ্দেশ্যে বললামঃ
>কিছু হয় নি।আপনারা আপনার কাজ করুন।
সবাই উকি দিয়ে ঘরের ভিতর দেখছে।দেখছে মেয়েটাকে আমি আবার কোন ক্ষতি করলাম নাকি।মেয়েটা আর কিছু না বলাতে তারা চলে গেল।আমি দরজাটা বন্ধ করে দিলাম।
পিছনে ফিরে তাকালাম।দেখলাম মেয়েটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলছে আর আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি মেয়েটার হাতের ডানা শক্ত করে ধরে বললামঃ
>বিশ্বাস রাখুন আমি আপনার কোন ধরনের ক্ষতি করবো না।আমি শুধু আপনার ব্যাপারে জানতে চাই।
আমার কথা শুনে মেয়েটার দীর্ঘনিশ্বাস থামলো।মেয়েটা আমার চোখে চোখ রেখে কি পড়ে নিল কে জানে।এবার ও পুরোপুরি শান্ত হয়ে গেল।আমি গিয়ে বিছানায় বসলাম।আর মেয়েটাকে বিছানায় বসার জন্য ইশারা করলাম।শাড়ির আচলটা আবার বুকে উঠিয়ে মেয়েটা আমার সাথে এসে বসল।
আমি আর কিছুই জিজ্ঞাস করলাম না।বিছানার মেঝেতে গিয়ে হেলান দিয়ে বসলাম।মেয়েটাও আমাকে অনুসরণ করে আমার পাশে এসে দুই হাটু উঠিয়ে তার উপর হাত রেখে বসল।
...
মেয়েটার মন কিছুটা উদাসীন হয়ে গিয়েছিল।আমি মেয়েটার বাম দিকে ছিলাম আর মেয়েটা ডানে মাথা ঘুরিয়ে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলতে লাগলঃ
>আমার নাম ভাবনা।অনার্সে পড়তাম।স্বভাবতই কালো ছিলাম।তাই কারো কাছে এত পাত্তা পেতাম না।এসাইনমেন্ট নেওয়া দেওয়া পর্যন্তই সবার সাথে সম্পর্ক ছিল।তারপর কেউ আর চিনতো না।আর জানিস তো অনেকের চোখে কালো মানি বিষাদের রঙ।তাই আমি যাদের সাথেই বন্ধুত্ব করতে যেতাম তাদেরই ভ্রু-কুচকে যেত।
মেয়েটার কথা শুনতে শুনতে পকেট থেকে সিগারেট আর ম্যাচলাইট বের করে ধরিয়ে নিলাম।তারপর আবার মেয়েটার কথায় ধ্যান দিলাম।
>তারপর আমার জীবনে আবির আসলো।
মেয়েটার কথার মাঝেই জিজ্ঞাস করলামঃ
>আবির কে?
মুচকি হাসি দিয়ে মেয়েটা বললঃ
>আবির!!সে তো এক ইতিহাস।
কথার ভঙ্গিমা দেখে বুঝতে পারলাম ছেলেটা ওর বয়ফ্রেন্ড ছিল।আমি মেয়েটার কথার মাঝে আর প্রশ্ন করলাম না।শুধু সিগারেটে ছোট ছোট কয়েকটা টান দিচ্ছিলাম।মেয়েটা আবার বলতে শুরু করলঃ
>সারাক্ষণ ওর কথা মনে করা।ওর সাথে দেখা হলেই জড়িয়ে ধরা।মোটকথা ওর প্রতি একটা আসক্তি লেগে গিয়েছিল।৪-৫ মাস ওর সাথে চুটিয়ে প্রেম করলাম।ওর প্রতি এমন দুর্বল ছিলাম যে ওর নামে কেউ খারাপ বললে মনে চাইতো মেরে ফেলি।একদিন ও আমাকে রুমডেটের প্রস্তাব দিলো।
...
হুট করেই আমি জিজ্ঞাস করলামঃ
>আপনি কি করলেন?
>প্রতিদিনের নিয়ম মেনে চললাম।
>মানি।
>প্রথমে না করেছিলাম।পরে সম্পর্কের দোহাই দিতে লাগলো।আর বললাম তো ওর প্রতি আমি অনেক দুর্বল ছিলাম তাই ওকে হারানোর কথা চিন্তাও করতে পারি নি।তাই রাজি হয়ে গেলাম।এমন করে অনেকদিন আমাদের অবৈধ মেলামেশা চলতে থাকলো।একদিন বাসায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরলাম।বাবা-মা হাসপাতালে নিয়ে গেল।তারপর জানতে পারলাম আমার নাকি একটা সন্তান পেটে।মা-বাবার মাথা খারাপ হয়ে গেল।জানতে চাইলো কে এই কাজ করেছে?আমি সরাসরি আবিরের নাম বলে দিলাম।বাবা আবিরের কাছে জানতে চাইলে আবির সরাসরি না করে দিলো।
আমার সিগারেটটা শেষ হয়ে এলো।আমি সিগারেটটা বাইরে ফেলা পর্যন্ত ভাবনা চুপ করে রইল।তারপর আবার বলতে শুরু করলঃ
>বাবা আবিরের নামে ধর্ষন মামলা দিলো।আবিরের বাবা ধনী ছিল তাই টাকার জোরে কেসটা জিতে নিল।নেশা কেটে বাস্তবতায় প্রবেশ করলাম।তখন প্রশ্ন জেগেছিল পেটের সন্তানের বাপটা কে হবে?সবাই পতিতার ট্যাগ লাগিয়ে দিলো।সমাজের মানুষ বলতে শুরু করল বাবা নাকি আমাকে দিয়ে ব্যবসা করে খায়।বাবা উঠেপড়ে লেগে গেল পেটের বাচ্চাটাকে ফেলে দেওয়ার জন্য নয়ত সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না।
ভুল তো আমি করেছিলাম কিন্তু বাচ্চাটা তো নিষ্পাপ ছিলো।তারপরেও বাচ্চাটাকে মারতে হলো।এই দুনিয়া দেখা বাচ্চাটার ভাগ্যে জুটল না।
আমি হঠাৎ জিজ্ঞাস করলামঃ
>তারপর কি সব ঠিক হয়ে গেল?
ভাবনা হেসে বললঃ
>ধুর!!তুমি তো ভালো বোকা।সব ঠিক হইলে কি আমি এইখানে থাকি?
বাচ্চা ফেলাতে তো লোকেরা আরো বলতে লাগলো বাচ্চা ফেলাতে নাকি বাবার আরো সুবিধা হয়েছে।ব্যবসা বেশি করতে পারবে।মানুষের এত অপমান সহ্য করতে না পেরে বাবা আত্মহত্যা করে বসল।তারপর আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো বাসা থেকে।আমি নাকি পতিতাগিরি করে বাবাকে মেরে ফেলেছি।যাইহোক কিছুদিন পর খবর আসলো মা বেচারিও শোকের ঠেলায় মারা গেছে।
যেই কাজ না করার পরও মানুষ আমাকে পতিতার ট্যাগ দিয়ে দিয়েছিল তাই রাগে অভিমানে আজ আমি এইখানে।
...
কাহিনী টা বলে ভাবনা নিজে মনস্থির করল আর আমি দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লাম।এই মুহূর্তে ঘরের ভিতর একদম নিরবতা।হঠাৎ করেই ভাবনা আমাকে বললঃ
>তোর কি হইসে বল?
আমি আশ্চর্য হয়ে বললামঃ
>আমার আবার কি হবে?
>তোর জীবনের ঘটনাটা বল?
>আমার জীবনের আবার কিসের ঘটনা?
>শোন বোকা তুই হতে পারিস আমি না।এইখানে আসলে সবাই হায়নার মতো ঝাঁপিয়ে পরে।কেউ গল্প শুনতে এইখানে আসে না।
আমি আশ্চর্য হলাম।এত অভিজ্ঞতা পেল কিভাবে?তারপর দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করলামঃ
>খুব ছোটবেলায় মা মারা যায়।বাবা আরেকটা বিয়ে করে ফেলে।আমি রাজবাড়ির(কাল্পনিক) একটা ছাত্রাবাসে থেকে যাই।আমি আমার মায়ের জায়গায় কাউকে দেখতে চাইলাম না তাই ওখানেই থেকে গেলাম।প্রতিমাসে একাউন্টে টাকা পাঠানো পর্যন্তই ছিল বাবার কর্তব্য।ভালবাসার মূল উৎস নাকি মা হয়।মা ছিল না তাই ভালবাসার মতোও কেউ ছিল না।ভালবাসা গুলো জমতে ছিল।একদিন একটা মেয়েকে ভালবাসার মতো পেলাম।খুব সুন্দর পরীর মতো।ছোটবেলা থেকে জমানো যত ভালবাসা ছিল তা দিয়েই ভালবেসেছিলাম।ওর পরিবারের অনুমতি নিয়ে খুব তারাতারিই বিয়ে করে ফেলেছিলাম।কারন ওকে আমি হারাতে চাইছিলাম না।
ভাবনা আমাকে ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে জিজ্ঞাস করলঃ
>তাহলে তো ভালোই হলো।তুই ঘরে না গিয়ে এখানে এসেছিস কেন?
>গল্পটা ওইখানে থামলেই হয়ত ভালো হতো কিন্তু গল্পটা আরো দীর্ঘ হয়েছিল।আমি ওকে কোনদিন অবিশ্বাস করি নি।বাবার প্রতি ভালবাসাটা ওকে দিয়েছিলাম মায়ের জন্য যে ভালবাসা ছিল তাও ওকে দিলাম।আর বাবা-মায়ের ভালবাসাতে কি কেউ অবিশ্বাস রাখে?কিন্তু ঘটনাটা তেমন ছিল না।একদিন বিনা নোটিশেই অফিস থেকে ঘরে ফিরলাম।অফিস টাইম থেকে অনেক আগেই।গেটটা পুরোপুরি লাগানো ছিল না।আমি হাসিমুখেই ঘরে ঢুকলাম কিন্তু নিজের রুমে যেতেই অবাক হলাম নিজের স্ত্রীকে অন্য এক ছেলের সাথে অন্তরঙ্গ করতে দেখে।আমার হাসিটা থেমে গেল।
...
ভাবনা ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞাস করলঃ
>তুই কিছু বলিস নি তোর বউকে?
>কি বলব?ভালবাসার মানুষকে কি কিছু বলা যায়?
>তাই বলে কিছুই বললি না?
>না।আমি ওইদিন ওইখান থেকে চলে এসেছিলাম।তারপর ও পরেরদিন আমাকে ফোন করল।বলল ও নাকি আমাকে ভালবাসে নি।ও ওই ছেলেটাকে ভালবেসেছে।কিন্তু পরিবার থেকে ওর সাথে বিয়ে না দেওয়াতে নাকি আমার সাথে মিথ্যে প্রেমের অভিনয় করে ওর সাথে চলে যেতে চেয়েছিল।ভালো হয়েছে আমি নাকি দেখে ফেলেছি।আমি কথাগুলো শুনে শুধু মুচকি হাসি দিয়ে বলেছিলাম "ভালো থেকো"।
ভাবনা এবার একটু ইমোশনাল হয়ে জিজ্ঞাস করলঃ
>তুই ওকে কিছুই বলিস নি।মনে কষ্ট লাগে নি?
>ও না হয় অভিনয় করেছে কিন্তু আমার ভালবাসা তো সত্য ছিল।ওকে যাই বলতাম আমার ভালবাসার উপর গিয়েই পরত।আর ওর ছেড়ে যাওয়াতে কষ্ট লাগে নি কষ্ট লেগেছিলম ওইদিনই আমি শেষ হেসেছিলাম।তারপর হাসিটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে আজও খুঁজে পেলাম না।
>একটা ছেলে একটা মেয়েকে কিভাবে এত ভালবাসতে পারে?
কথাটা বলার সাথে একটা ফোঁপানোর আওয়াজ পেলাম।তাই ইতস্তত বোধ করে পাশে চাইলাম।দেখলাম ভাবনার চোখ বেয়ে জল পরছে।আমি কিছু জিজ্ঞাস করার আগেই ও আমার মাথা শক্ত করে ধরে ওর ঠোঁটের সাথে আমার ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।আমি চোখ বড় বড় করে ওর চোখে চেয়ে রইলাম।আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না।কিছুক্ষণ ওর ঠোঁটের সাথে ঠোঁট থাকার পর আমি ঠোঁট সড়িয়ে নিলাম।দুজনই রীতিমতো হাপাচ্ছি।আমি ওর চোখের দিকে চেয়ে আছি আর ও আমার চোখের দিকে।
...
দুজনের চোখই কি যেন বলল কিন্তু আমরা দুজনের একজনও বুঝলাম না।চোখেরা ওদের কথা বুঝে নিল।তারপর ভাবনা নিজেকে আমার কাছে সপে দিলো।না এই সপে দেওয়াটা বাকি ১০ জন লোকের কাছে সপে দেওয়ার মতো না।কারন এটাতে আমি ওর যে ইমোশনটা অনুভব করছিলাম তা টাকা দিয়ে কেনার মতো হতে পারে না।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম ভাবনা আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।আমি ওকে সড়িয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য উঠলাম।ওর ঘুমও ভেঙ্গে গেল।আমি চলে যাওয়ার জন্য বিছানা ছাড়লাম।ভাবনা আমার হাতটা শক্ত করে ধরে জিজ্ঞাস করলঃ
>চলে যাবি?
কথাটার ওজন এত ছিল যে সরাসরি বুকে গিয়ে বিঁধল।আমি ওর দিকে চাইলাম।দেখলাম জলে চোখ ছলছল করছে।কে যেন বলেছিল চোখ। কথা বলে সেদিন প্রমাণ পেলাম।সত্যিই ওর চোখ যেন ওকে ছেড়ে না যাওয়ার মিনতি করছিল।
কেন এমন হচ্ছিল বুঝতে পারলাম না।কি হলো এই এক রাতে যে আমার মতো আগন্তুককে ও মনে জায়গা দিয়ে দিল।খাটের উপর দাঁড়িয়ে ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আর বলছেঃ
>আমাকে ছেড়ে যাসনে।

ওর চোখের জল আমার শার্টে এসে পরছিল।কিন্তু আমি ওর কথাকে কোন সাই দেই নি।ওকে আমার বুক থেকে সড়িয়ে আমি চলে এলাম।
অফিসে এসে কোন কাজেই মন বসছিলো না।আমি মনে মনে ভাবনাকে জীবন সঙ্গী বানানোর চিন্তা করলাম।তারপর আবার সমাজের কথা ভাবলাম "লোকে কি বলবে?"
নিজেকেই নিজে উত্তরঃ
>দিলাম এই সমাজ মুখোশধারী পতিতাদের পক্ষে থাকে।তাদের ভালো বলে কিন্তু তারাই যাদের পতিতা বানিয়েছে তাদের কি কারো জীবন সঙ্গি হওয়ার অধিকার নেই?আমি প্রথমে এক মুখোশধারী পতিতাকে বিয়ে করেছিলাম আজ না হয় একটা সত্যিকারের পতিতাকে বিয়ে করার কথা ভাবছি।সত্যিকারের থেকে মুখোশধারীরা বেশি ক্ষতিকারক হয়।ওকে বিয়ে করলে এতটুকু গ্যারান্টি দিতে পারবো সেচ্ছায় কারো কাছে তো নিজের দেহ বিকিয়ে দিবে না।

তিনজন কলিগকে বিষয়টা জানালাম।তারা পুরো ঘটনা শুনে আমাকে উৎসাহ দিলো।সন্ধ্যায় অফিস ছুটি হওয়ার পর আমি আর কলিগরা আবার রাণী হোটেলে গেলাম।ভাবনার রুমের ভিতর গিয়ে দেখি ও এখনো কাঁদছে।চোখ নিচ থেকে আমার দিকে চাইলো।দেখলাম চোখ লালা হয়ে আছে আর খানিকটা ফুলে গেছে।বুঝতে পারলাম সারাদিনই কেঁদেছে।
ওর অবস্থা দেখে হেসে দিলাম।অনেকদিন পর হাসিটা আবার ফেরত পেলাম।
এই ভেবে হাসছিলাম মেয়ে মানুষ বড় অদ্ভুদ হয়।তারা এক মুহূর্তে কাউকে ভালবাসতে পারে।মনের পুরো অংশ দখল করার সুযোগ দিয়ে দেয়।
আমি ওর হাত ধরে ওইখান থেকে ওকে নিয়ে গেলাম কাজি অফিসে।তিনজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন হলো।আজ থেকে ও পতিতা ছিল না ছিল আমার বউ।
...
সমাজ অনেক কিছুই বলেছিল।আমরা কোন কথার সাই দেই নি।চুপ করে ছিলাম।বলতে বলতে যখন মানুষের মুখে ফেনা উঠে গেল তখন তারা নিজ থেকেই চুপ হয়ে গেল।দেখবেন সমাজের মানুষ আপনাকে ওই বিষয়েই সবচেয়ে বেশি বলবে যেটাতে আপনার প্রতিক্রিয়া বেশি।আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাই নি তাই লোকেরা চুপসে গিয়েছিল।
৭ বছর পরঃ
-----------
ভাবনার "তুই" আর আমার "আপনি" বিক্রিয়া করে "তুমিতে" পরিনত হয়েছে।আজ ভাবনা দুই বাচ্চার মা।আমি ওদের ওর মায়ের গল্প শুনাই যে ওর মা পরী ছিল।আমাকে ওদের রাজ্য ফেরিস্তানে নিয়ে যেতে চাইছিলো কিন্তু আমি ওকে এদিকেই বেধে রেখেছি।গল্পটা শুনে ভাবনা শুধু হাসে।ছেলেরাও কৌতুহল বশত জিজ্ঞাস করে পরীরা কেমন হয়?আমি বলে দেই একদম তার মায়ের মতো।

প্রতিদিন সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গে ভাবনার কোরান তেলওয়াতের আওয়াজে।আমি নামাজ পড়ি না তাই আমাকে খুব বকে।ভাবতে পারেন একটা মেয়ে যে দেহ বিকিয়ে ফিরত সে আজ পবিত্র কোরান কতটা সচ্ছ মানসিকতা নিয়ে পড়ছে?আসলে ভালবাসার অনুপস্থিতির ফলে যদি কেউ অন্য লাইনে চলে যায় তাহলে তাকেই ভালবাসা দিয়ে তার চেয়েও ভালো অবস্থানে আনা যায়।

সবার মতো আমাদের মাঝেও খুনসুটি আর ঝগড়া হয়।কিন্তু আমি ওকে কখন গালি দেই না।কারন গালিগুলো মেয়েদের যা বলে দেওয়া হয় তার কোন অংশও মেয়েরা করে থাকে না কিন্তু ও ওই লাইন থেকেই এসেছে।এখন আমি যদি ওকে ওইসব বলেই গালি দেই মনে দ্বিগুন কষ্ট পাবে।
ও হ্যা আমার নামটাই তো বলা হলো না।আমার নাম হিমেল।
(কাল্পনিক)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×