somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মা-ই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা

০৫ ই মে, ২০০৯ সকাল ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার মা-ই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা (মাকে নিয়ে এলোমেলো ভাবনা)

মা যে দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধরিয়া
করেছেন আমাদের ঋণী
গায়ের চামড়া কাটিয়া দিলেও
সেই ঋণ শোধ হবেনা জানি।

গ্রামের ছোট্ট কিশোরটি যখন বৃত্তি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে কিংবা জীবনের প্রথম পরীক্ষা এসএসসিতে নাম লেখাতে চলেছে, দুটি স্নেহের হাত দিয়ে ছোট্ট মাথাটি ধরে চুমু খেয়ে মা-ই তো বলেন, যা, বাবা। আল্লাহর নামে পরীক্ষা শুরু করিস। সন্তান বাড়ী না ফিরে আসা পর্যন্ত এ এক অবর্ণনীয় অপেক্ষার যন্ত্রনায় ভোগেন মা। কেমন পরীক্ষা দিচ্ছে আমার খোকা? ফিরে আসে সন্তান হাসতে হাসতে। ভরে ওঠে মায়ের বুক। আচঁলটি দিয়ে ঘর্মাক্ত খোকার মুখটি মুছে দেন।
-কেমন দিলি বাবা?
-খুব ভালো মা। হাত মুখ ধুয়ে েেখতে দেন সন্তানকে।
-মা! তুমি খাবে না”
-না। বাবা তুমি আগে খেয়ে ওঠো। কি যেন লুকাতে চান মা।
-আরে বস তো। আমার সাথেই খেতে হবে।
মা বাধ্য হয়ে বলেন, না! বাবা। আজ আমি রোজা। সন্ধ্যায় ইফতার করব।
-কেন?
-তোমার পরীক্ষা না। সেজন্য।
সন্তানের সামান্য পরীক্ষায় সারাটি দিন যিনি না খেয়ে থাকার কষ্ট অনুভব করতে পারেন, তিনি মা ছাড়া আর কে হবেন, বলুন তো। এই জন্যই তো তিনি অতুলনীয়।
সামান্য বিষয় নিয়ে সন্তান যখন মায়ের সাথে প্রচন্ড বেয়াদবী করে, ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যায়। হঠাৎ করেই আঘাত করে বসেন সন্তানকে। সন্তান রাগ করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। মা তখন ভোগেন মনকষ্টে।
আহারে আমার বাছা। তোকে কেন মারলাম। তুই কষ্ট পেলি?
দুপুর গড়িয়ে রাত হলো। মা চিন্তায় ভোগেন, কোথায় বাছা আমার। দুপুর শেষ হয়ে এল, কোথায় কি খেয়েছে সে? হয়তো না খেয়ে আছে?
পাগল হয়ে খুজতে থাকেন মা। কোথায় যে নেই.............
পাগলীনি মা দুয়ারে দুয়ারে খোঁজেন তাকে। কোথায় তার নাড়ী ছেঁড়া ধন।
গভীর রাতে দরজার এপারে না ঘুমিয়ে বসে থাকেন মা। যদি সন্তান আসে। রাতে তারও যে খাওয়া হয়নি। বুকে কষ্ট; ইস! কেন মারলাম বাছাকে।
গভীর রাতে ঠক্ ঠক্ করে কড়া নাড়ে। হন্তদন্ত হয়ে দরজা খুলে দেন মা। সোনার মাণিক দাড়িয়ে।
-বাবা! কই ছিলি সারাদিন? বুকে জড়িয়ে ধরেন মা। ‘কি খেয়েছিস?” মাথা নাড়ে সন্তান, কিছু খাওয়া হয়নি তার। মাকে জড়িয়ে ধরে সে, অনুতপ্ত। মা-ও আরও পরম স্নেহে বুকে টেনে নেন। নিমিষে কোথায় মিলিয়ে যায় সেই রাগ। মোমের মত গলে যায় সব, উবে যায় কর্পুরের মতো।


এ অনুভূতির কোন তুলনা নেই। যত কষ্ট, যত বেদনা, সব এক নিমিষে দূর হয়ে যায় মায়ের দিকে তাকালে। হে আল্লাহ! তুমি আমার মাকে এত সুন্দর করে কি করে তৈরী করলে? কি দিয়েছ, তার মাঝে?

কিছু প্রচলিত কাল্পনিক গল্প শোনা যাক,
ঈশ্বরকে দেবদূত বললেন, পৃথিবী সৃষ্টি করে এক নাগাড়ে তো ছয় দিন হলো, এবার একটু বিরতি নিন।
ঈশ্বর তাকে বললেন, প্রশ্নই ওঠেনা। আমি আমার প্রিয় জিনিসটি তৈরীর শেষ প্রান্তে চলে এসেছি।
-কি সেটা, যার জন্য আপনি এত কষ্ট করছেন?
-এটি হচ্ছে এমন একটি সৃষ্টি যার সাথে অন্যদের তুলনা করা চলেনা, যিনি অসুস্থ হলে নিজেই নিজেকে সারিয়ে তুলবেন। মাত্র এক পাউন্ড রুটি দিয়ে কিংবা এক কেজি চাল দিয়ে ঝয় সদস্যের পুরো পরিবারকে খাইয়ে অনায়াসে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে পারবেন।
মহাবিষ্মিত দেবদূত ঈশ্বরের অনুমতি সাপেক্ষে এবার ষ্পশূ করলেন সেই অতুলনীয় সৃষ্টিকে।
-হায় ঈশ্বর! আপনি এত নরম কোমল করে বানিয়েছেন তাকে?
ঈশ্বর মাথা নেড়ে বললেন, তুমি যা অনুভব করছ, সে তার চাইতেও কোমল। কিন্তু এই নরম নিয়ে তোমার কোন ধারণাই নেই। তুমি ভাবতেও পারবেনা প্রয়োজনে এ কতো কঠিন হয়ে উঠতে পারেন। এই হবে ধৈর্য্য শক্তিতে তুলনা রহিত আর ধারন ক্ষমতায় সমুদ্রও হবে তার তুলনায় অতিশয় ুদ্রাতিুদ্র।
-কি নাম এর প্রভু?
-ওর নাম হবে, মা।
দেবদূত দুচোখে অপার বিষ্ময় নিয়ে মোহাবিষ্টের মতো দেখতে থাকেন এই অপরূপ সৃষ্টিকে।

আমরা আজকের যন্ত্র সর্বস্ব পৃথিবীতে কলকব্জার মতো চরকী খাচ্ছি। কোথায় ভালোবাসা, কোথায় স্নেহ-মমতা? কোথায় একটু দাঁড়াবার ফুরসত? নেই। ছোট্ট বেলা থেকে যে মা আমাকে এত কষ্ট করে বড় করলেন, আজ সেই মাকে আমরা ভুলে থাকি কেমন করে? জীবনে যখন অর্থ, বিত্ত কিংবা আরেক জনের আগমন ঘটে, কি সহজেই না আমরা মাকে ভুলে যাই, তুচ্ছ করি। মনে হয় ক্ষণিকের এই সম্পর্ক গুলোর চাইতে মা কোন বিষয়ই নয়। কিন্তু মা কিছু বলেন না। কারণ সন্তানের সুখ তো তার সুখ। তার সামান্য ভালোলাগার কারনে সন্তানের জীবনে এতটুকু বিঘœ ঘটুক তা তিনি কখনই মেনে নিতে পারবেন না। তাই হয়তো বালিশে মুখ গুঁজে কিংবা রাত্রিবেলা বাঁধ ভাঙা আবেগে কেঁদে বুক ভাসান, তবুও সন্তানকে জানতে দেননা মনের কষ্ট। তাকে যে তিনি ভালোবাসেন।
মায়ের আরেকটি অসাধারন গল্প আছে।
এক কিশোর তার মাকে খুব ভালোবাসে। সবকিছুতেই তার মা আছে।
ছেলে বলে মা, আমি তোমার জন্য পৃথিবীর যে কোন কাজ করতে পারি।
মা বলেন, পাগল ছেলে! তোকে কিছু করতে হবেনা। তুই শুধু আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকিস।
এই কিশোর ছেলে একদিন তরুন হলো। একদিন তার পরিচয় হলো। অনিন্দ্য সুন্দর এক তরুনীর সাথে। তারপর গভীর সম্পর্ক। এই সুন্দরীর জন্য সে পাগল। সে বলে আমি তোমার জন্য সব করতে পারি। তুমি চাইলে পৃথিবীর এমন কিছু নেই, তোমার পায়ের কাছে এনে হাজির করতে পারবনা।
তরুনী একদিন রসিকতা বললো যে, ঠিক আছে। পারলে তোমার মায়ের কলিজাটা (হৃদপিন্ড) এনে দাও। প্রচন্ড আবেগে মোহাচ্ছন্ন ছেলে, তাকে পাবার জন্য তাই করার মনস্থ করল।
বাড়িতে দৌড়াতে দৌড়াতে এস হত্যা করল সব ভালোবাসা ভুলে মমতাময়ী মাকে এবং হৃদপিন্ডটা ছিড়ে নিয়ে ঝটাপট দৌড়ে তরুনীর বাড়ির দিকে ছুটতে লাগল। তরুনীর বাি তে ঢোকার মুখে তাড়াহুড়োয় দরজায় ধাকাকা লেগে ছিটকে পড়ল ছেলেটি। হাত থেকে ছিটকে পড়া হৃদপিন্ডটি সে সময় বলে উঠলো, মানিক আমার! তোর লাগেনি তো?
মা! মাগো! তোমাকে কখনই বুঝতে চেষ্টা করিনি? তুমি কি চাও, কি ভালোবাসো, কি পছন্দ কর, জানতে চাইনি? শুধু স্বার্থপরের মতো নিয়েই গেছি? আবদারে আবদারে ব্যতিব্যস্ত করেছি? তোমার চোখে অশ্রু ঝরিয়েছি? আজ যখন আমার দেবার পালা, তখন তোমাকে মনে করতে চাইনা, নতুন সম্পর্কে গড়া মানুষগুলোকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি মা? সোসাইটি মেনটেইন করতে গিয়ে তোমার উপস্থিতি আমাকে বিব্রত করে বলে দূরে ঠেলে রাখতেই ন্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি? তোমাকে সময় দেব, মনেও আসেনা? তুমি শুধু দিতেই জান আর আমি শুধু স্বার্থপরের মতো নিয়েই গেছি? হয়ত এ ব্যথা নিয়ে দুনিয়া থেকেই চলে গেছ প্রভুর দরবারে। আজ নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে। কারও উপকার করে প্রতিদান বা ধন্যবাদ না পেলে অন্যের প্রতি কত্তো রাগ হয়? আর আমি? কতইনা অকৃতজ্ঞ? আমি অপরাধী,মা। তুমি না খেয়ে আমার জন্য রোজা রেখেছ আর তোমার জন্য দোয়াও করার একটু ফুরসত পাইনা? আমি ভুল বুঝতে পেরেছি মা। আজ অন্তত এ দিবসে তোমাকে স্মরণ করতে চাই। আগামী দিন গুলোতে যে এই ঋণের বোঝা কিছুটা লাঘব করতে পারি, সেজন্য দোয়া কোর মা।

আজ খুব পড়ছে মনে মাকে
মায়ার বাঁধনে বেঁধেছে আমাকে
স্নেহের ছায়ায় আমায় রেখে
যে মা রোদ সয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০০৯ রাত ৮:৪৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×