somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধু মিলনে @ ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক

১০ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বন্ধুর ডাক। ৯ তারিখ শুক্রবার চট্টগ্রামের হালিশহরের গরীবে নেওয়াজ স্কুলের ক্লাসমেটরা মিলে প্ল্যান করল ডুলাহাজরা সাফারি পার্কে পিকনাক কাম গেট টুগেদারের। গতবছরও এই প্ল্যান ছিল কিন্তু আমার যাওয়া হয় নি। এবার মনে হল দেখে আসি স্কুলের বন্ধুদের। প্রোগ্রাম শুক্রবারে আর কক্সবাজারের কাছাকাছি হবে তাই ভাবলাম স্ত্রী আর ছেলেকে নিয়ে কক্সবাজারও ঘুরে আসি। এই জন্য বৃহস্পতিবার বিকেল ৩.৩০টার সুবর্ন ট্রেনের ২টি টিকেট কেটে রাখলাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আর তারা গেল না আমার সাথে। আমি একাই গেলাম। আগেরদিন আমার বন্ধু ব্লগার 'সমকালের গান' স্বপরিবারে চট্টগ্রামে চলে গেল। আমরা ঠিক করে রেখেছিলাম যে বৃহস্পতিবার বন্ধু আরিফের বাসায় একসাথে রাতে আড্ডা দিব।

বৃহস্পতিবার এয়ারপোর্ট স্টেষনে বেশ আগেই পৌছে গেলাম। অনেককাল পর ট্রেনে চড়ছি আর এই স্টেষনে এই প্রথম। না ভুল হল। এই স্টেষনে আমি এর আগেও একবার এসেছিলাম। সে বড় কষ্টের গল্প। ঐ গল্প এখানে আর করলাম না। স্টেষনে গিয়েই শুরু হল পুরোন অভ্যাসমত 'খারাপ বই' খোজা। কিন্তু আফসোস, এই স্টেশনে আর বইয়ের দোকান নেই। ৩.৫০ এ ট্রেনে উঠলাম। তার আগে আমার এক্সট্রা সিট বিক্রি করতে চাইলাম। টিকেট ছিল স্নিগ্ধা কম্পার্টমেন্টের, ভাড়া ৬৭৫ টাকা জনপ্রতি। শীতকাল বলে আমি নন এসি সাধারন কম্পার্টমেন্টই চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার প্রিয় কলিগরা আমার কিছু টাকা খসানোর জন্য নিজেরাই গিয়ে এই কম্পার্টমেন্টের টিকেট কেটে এনেছে। এখন এই টিকেট বিক্রি করতে হবে। কিন্তু সংকোচও হচ্ছে কারুকে এই অফার করতে। কারন আমার চোখে মুখে টিকেট ব্ল্যাকারের ছাপ স্পষ্ট। যে কেউ এই সন্দেহ করে পুলিশ ডাকতে পারে আর চোখ-মুখ দেখে পুলিশও বিশ্বাস করবে যে আমি ব্ল্যাক করছিলাম। তবুও টাকার মায়ায় একজনকে জিজ্ঞেস করলাম। সে বলল সেও নাকি একই কাজে দাড়িয়ে আছে। অর্থাৎ সে তার এক্সট্রা একটা সিট সেল করবে। বিফলে শুন্য হাতে ফিরলাম। আর কারুকে জিজ্ঞেস করলাম না। আশায় থাকলাম যদি কোন সুন্দরী মেয়ে পাই তো তাকে ফ্রি নিয়ে যাব। এক্ষেত্রে আমি আজন্ম বিফল। কেন যেন আমাকে আমার বন্ধু বা পরিবারের কেউ বিশ্বাস করে না। তাই তারা আমি ট্রেনে উঠার আগ পর্যন্ত বিশ্বাস করে নি যে আমি চট্টগ্রাম যাব। ট্রেন ছাড়ার পর বিশ্বাস করেছে কারন সুবর্ন তো মাঝে আর কোন স্টেষনে থামবে না।

ট্রেন ছাড়ার সাথে সাথে খাবার দিল। টিকেটের সাথে ফ্রি ভেবেছিলাম। আমি ২ টিকেট নিয়ে একা বসেছি। লোকটা যখন আমাকে একটা ফ্রি-প‌্যাক দিচ্ছিল তখন আমি চেয়ে আরেকটা প‌্যাকেট নিলাম। কারন আমার ২সিট। সেও দিয়ে দিল। একটু পরই আমার সন্দেহ হল। জিজ্ঞেস করলাম ভাই এইটা কি ফ্রি? সে বলল 'না, বিক্রি করছি'। ২প‌্যাকেট ফিরিয়ে দিলাম। এই বেলায় কিছু খাওয়ার মত ক্ষিদে নেই। প্রথমেই ব্যাকুব হলাম অজ্ঞতার জন্য। সময় যত যাচ্ছে ততই শীতে কাবু হচ্ছিলাম। কেন যে এসি সিট নিলাম। আর শীতটাও একটু বেশী পড়েছে ঢাকার বাইরে। এসি তো আর বন্ধ করা যাবে না। তাই ব্যাগ থেকে আরেকটা শার্ট বের করে পড়ে নিলাম। এভাবে আখাউড়া পর্যন্ত আসার পর দেখলাম এসির উইন্ডোতে একটা বাটন আছে যা দিয়ে এসি বন্ধ করা যায়। শুধু শুধুই আমি এতক্ষন এসিতে কষ্ট পেলাম। নিজেকে আরেকবার ব্যাকুব বলে গালি দিলাম। যদিও এই গালি এই জীবনে নিজেকে লক্ষবার দেয়া হয়ে গিয়েছে। নিয়ম এবং পুরোন অভ্যাসমত রহস্য পত্রিকা কিনলাম। সিনে ম্যাগাজিন অবশ্য আগে কিনতাম। তা এখন আর কিনলাম না।

সন্ধ্যা হল নরসিংদীতে, এলেম যেন ফেনী জেলার কাছে। বাসায় বা অফিসে অনেক সময় নামায বাদ দিই। কিন্তু এখন কেন যেন নামায পড়লাম। হয়ত ট্রেনে নামায পড়তে কেমন লাগে তা দেখার জন্য। তারপর একটু একটু ক্ষিদেও পেয়ে গেল। একসময় ট্রেনের ভিতরের চিকেন ফ্রাই ছিল খুবই মুখরোচক খাবার। সেই স্মৃতিতে করমর্দন করে নিলাম চিকেন। খেতে ভালই। খাওয়ার ১/২ মিনিটের মধ্যেই ঠোট থেকে শুরু করে পেট সবই জ্বলতে শুরু করলাম। এবং সেই সাথে আরও কিছু জ্বলছে। বুঝলাম আর বেশিক্ষন এখানে থাকলে লোকজন আমাকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিবে। তাই ট্রেনের টয়লেট গিয়ে ঠিকঠাক হয়ে আসলাম। সাথে থাকা এন্টাসিড খেয়ে কিছুটা ঠিকঠিক।

চট্টগ্রাম শহরটা সবসময়ই আমার জন্য প্রিয়। এই শহড়টাতেই আমার প্রথম সবকিছু। এখানেই আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে। সেই চট্টগ্রামের স্টেষনে নেমে আরিফের বাসায় চলে গেলাম। যে পথ দিয়ে সিএনজি গেল ঢাকা হলে ফিরতে হত খালি হাতে। কিন্তু চট্টগ্রাম অনেক নিরাপদ শহর। আড্ডা হল। অনেকের সাথে ফোনে কথাও হল। বহুপদ দিয়ে সুস্বাদু ডিনারও হল। সকাল সকাল চা-নাশতা খেয়ে চলে গেলাম মিটিং পয়েন্টে। বাসে উঠেই শুরু হল সবার সাথে আড্ডা। অনেকের সাথেই স্কুলের পরে এই দেখা। তবে ফেসবুকের কারনে কারুকে দেখে আর মনে হয় না, "বন্ধু কতদিন দেখা হয় নি"। দে
দেখা না হওয়ার কষ্টটাও তো অনেক আনন্দের।

ডুলাহাজরা সাফারি পার্কে ঘুরতে ভাল লেগেছে। প্রথমেই বঙ্গবন্ধু আমাদের সাদর আমন্ত্রন জানালেন। আমাদের সাথে থাকা বাচ্চারা খুবই মজা পেয়েছে। আমরাও বেশ উপভোগ করলাম। ঝামেলার জন্য নিজের বাচ্চা নিয়ে যাই নি। কিন্তু এখানে এসে অন্যের বাচ্চা কোলে নিয়ে ঘুরতে হয়েছে। কারন খুবই সুইট একটা বাচ্চা আংকেল ডেকে তাকে কোলে নিতে বলল। এমন ছোট্ট শিশুর আবদার কি ফেলা যায়? দুপুরেও জম্পেশ খাওয়া-দাওয়া হল। খাতিরের কারনে কাচ্চির সাথে গরু-মুরগী সবই ছিল। খাওয়ার পর তাল উঠল কক্সবাজার যাওয়ার। আমাদের কয়েকটি বন্ধু পরিবারের কক্সবাজার যাওয়ার আগেই প্ল্যান ছিল। বাকিরাও কক্সবাজার গিয়ে সানসেট দেখে ফিরে আসার ইচ্ছা ব্যক্ত করল। আমার ইচ্ছা এবং একান্ত প্রয়োজন চট্টগ্রাম ফেরার। আমি সবকিছুতেই আছি, তাল দিচ্ছি। কিন্তু আমার মনটা অস্থির আমার এই প্রয়োজনের টানে ঢাকা ফেরার জন্য। আমি ঠিক করলাম একাই চট্টগ্রামের কোন একটা বাসে উঠে চলে আসব। কিন্তু তখনই কারুকে বললাম না। কারন আমার ধারনা আমার এই ইচ্ছা বললে কেউ কেউ হয়ত কক্সবাজারের প্ল্যান বাদ দিতে চাইবে। একজনের জন্য ম্যাক্সিমাম লোক কষ্ট করুক বা কিছু মিস করুক তা কখনই আমি চাই না। এরকম সময়ে নিজের ইচ্ছা বলা মানেই অন্যদের এম্বারাস করা। তাই ২/১ জনকে বলে বাস থেকে নেমে গেলাম। সেখানেই পেলাম চট্টগ্রামের বিরতিহীন বাস। বিরতি দিয়েই যেমন আমাকে বাসে তুলল এমন করে অসহায়-সহায় রাস্তার ধারের আরও অনেক যাত্রীই তারা তুলল।

আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে চট্টগ্রামে এসে ঢাকায় প্লেনে করে আসা। কিন্তু কখন যে চট্টগ্রাম পৌছব তারই কোন ঠিক নেই। বাস তার আপন গতিতে চলছে। এই করে করে একটি একটি থানা পার হয়ে কর্নফুলী ব্রিজের কাছে আসল। তখন এক স্থানীয় লোককে জিজ্ঞেস করে জানলাম এয়ারপোর্ট যেতে হলে এখানে নামাই ভাল। এতে বহদ্দারহাট যাওয়ার অযথা সময়টুকু বেচে যায়। আমি দ্রুত নেমে আমার ট্রাভেল এজেন্ট বন্ধুকে লাস্ট ফ্লাইটের টিকেট কাটতে অনুরোধ করে সিএনজি নিয়ে রওয়ানা হলাম। চট্টগ্রামের সেই সহৃদয় ড্রাইভার আমার দ্রুত যাওয়ার কথা বুঝতে পেরে মাঝিরঘাট দিয়ে সরাসরি কাস্টমস-বিশ্বরোড নিয়ে আসল। এবং আমি সময়মত প্লেন ধরতে পারলাম। তখন পর্যন্ত বাসায় জানাইনি যে আমি আসছি। বাসায় এসে সবাইকে একেবারে চমকে দিলাম।

বন্ধুদের সাথে দেখা হলে খুবই ভাল লাগে। এই বন্ধুদের অনেকের সাথে স্কুল লাইফে তেমন সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু এখন যেন আমরা খুব কাছের বন্ধু। এই বন্ধুদের সাথে আবারও দেখা হবার অপেক্ষায় থাকলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:১২
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×