. রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে একসময় তাৎক্ষণিক ভাবে জনগণ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠত। কিন্তু, সারা বিশ্বের কোথাও জনগণের এ সোচ্চার অবস্থান দেখা যাচ্ছেনা কেন ? জবাব দিচ্ছেন বিখ্যাত মার্কিন মনস্তত্ববিদ ব্রুস ই লেভিন। তার মতে, “সাধারণ নাগরিকেরা যখন রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয় ও কায়েমী গোষ্ঠীর ক্রমাগত মিথ্যাচার, শারীরিক- মানসিক অত্যাচার এবং অন্যায়ের শিকার হয়; তখন তাদের মনোবল ভেঙ্গে যায়, তারা হয়ে পড়ে নিষ্ক্রিয়, নিশ্চেষ্ট। আসলে মানুষ যখন ভেঙ্গে পড়ে, তখন অন্যায়ের সত্য কারণ জানতে পারলেও প্রতিবাদ করতে পারেনা। কারণ, অন্যায়কে প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ না করে হজম করার লজ্জা তাকে অনড় করে রাখে।”
তৃতীয় বিশ্বের তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে জনগণকে নানা পীড়নের মধ্যে রেখে মনোবল ভেঙ্গে দেয়া হয়। এর লক্ষ্য থাকে জনগণের মধ্যকার সোচ্চার অংশ। এদেরকে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার ছাড়াও আইনী বাধা-নিষেধের আওতায় আনা হয়।
আরেকটি পদ্ধতি হলো – সামাজিক বিচ্ছেদ। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে ক্রমাগত দোষারোপ করার মানসে বিশাল প্রচার ও আন্দোলন পরিচালনা করা হয়। উদ্দেশ্য, এই কালিমা লেপনের মাধ্যমে জনগণকে প্রভাবিত করা। একবার কাউকে কলংকিত করা গেলে, ঐতিহাসিকভাবে তা স্থিতি লাভ করে। লেভিনের মতে এর লাভ দু’টি। (১) সম্ভাব্য প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা, (২) প্রতিবাদী কন্ঠ হিসেবে জনসমর্থন অর্জনের সুযোগ না দিয়ে ভীতির কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। ফলে, জনগণ নিজেদের কথা বলতে না পারায়, কায়েমী স্বার্থবাদীরা নিজেদের লক্ষ্যে সহজেই এগিয়ে যেতে পারে।
প্রতিবাদহীন জনগোষ্ঠী সৃষ্টিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনেকাংশে দায়ী। শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো এমন মানুষ পয়দা করছে, যারা প্রশ্ন করতে পারেনা বা অন্যায়- অবিচারের প্রতিবাদী হিসেবে গড়ে উঠছেনা। এমনকি তারা গণতান্ত্রিক হিসেবেও বেড়ে উঠছেনা। তাদের সিলেবাসগুলো কিছু কর্মচারী তৈরী করছে। যারা সব শাসন – অপশাসনকে দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নেয়। প্রতিষ্ঠান গুলোতে স্নেহ মায়া মমতার স্থান নেই। আর সর্বোচ্চ শিক্ষায়তনের একমাত্র লক্ষ্য করপোরেশনের জন্য কর্মচারী বানানো।
জনগণের মনোবল ভেঙ্গে ফেলার অন্যতম প্রধান মাধ্যম সংবাদপত্র ও টেলিভিশন। মার্কিনি লেখক জেরী মানডে তার ফোর আরগুমেন্টস ফর এলিমিনেশন অব টেলিভিশন বইতে স্বৈরতন্ত্র নির্মাণে টেলিভিশনের আট(৮) টি নিখুত অবস্থার বর্নণা দেন।
১। জনগণের মানসিকতা থেকে প্রকৃতি প্রদত্ত ধারণার বদলে মানুষ ও মানবিকতার নতুন ধারণা প্রদান করে।
২। সংবেদনশীলতাকে ভোতা করে দেয়।
৩। জীবনের অর্থ আর আনন্দের নতুন পরিচয় দেয়।
৪। অন্য সভ্যতাকে হয় প্রবর্তন না হয় নিষিদ্ধ করে, যাতে জনগণ কোন তুলনা করতে না পারে।
৫। জ্ঞান ও তথ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে পড়ে
৬। কোন কিছুর ঝামেলা এড়াতে টেলিভিশন নেশায় পরিণত হয়।
৭। মানসিকতাকে আছন্ন করে রাখে
৮। পারষ্পরিক বিভেদ বজায় রাখে।
অর্থাৎ, একজন নাগরিকের দায়িত্ব ও মানসিকতা পরিবর্তন করে তাকে শুধু ক্রেতায় পরিণত করে। ধীরে ধীরে ঋণভিত্তিক জীবনধারণের অভ্যাস বাড়িয়ে দিয়ে দাসত্যের অদৃশ্য খাঁচায় জনগণকে বন্দী করে তার বিদ্রোহ করবার সকল শক্তি কেড়ে নেয়া হয়।
আমাদের মধ্যে যারা এভাবে গুটিয়ে গিয়েছে , তাদের মুল অভাব হলো আত্নবিশ্বাস। আত্নবিশ্বাসহীন জনপদ ভেঙ্গে যায়, নুইয়ে পড়ে। এটা ইতিহাসের শিক্ষা। অতএব, যদি আত্নবিশ্বাসে উজ্জীবিত ও আশাবাদী করা যায়, জনগণ তাহলে অত্যাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করার লজ্জা থেকে মুক্তি পাবে।
মুক্ত বোধের সাহসী স্বত্ত্বার জয় হোক।
(সংগৃহীত ও সম্পাদিত)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১০ সকাল ৮:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




