somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আত্মবিশ্বাসেই লজ্জামুক্তি

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

. রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে একসময় তাৎক্ষণিক ভাবে জনগণ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠত। কিন্তু, সারা বিশ্বের কোথাও জনগণের এ সোচ্চার অবস্থান দেখা যাচ্ছেনা কেন ? জবাব দিচ্ছেন বিখ্যাত মার্কিন মনস্তত্ববিদ ব্রুস ই লেভিন। তার মতে, “সাধারণ নাগরিকেরা যখন রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয় ও কায়েমী গোষ্ঠীর ক্রমাগত মিথ্যাচার, শারীরিক- মানসিক অত্যাচার এবং অন্যায়ের শিকার হয়; তখন তাদের মনোবল ভেঙ্গে যায়, তারা হয়ে পড়ে নিষ্ক্রিয়, নিশ্চেষ্ট। আসলে মানুষ যখন ভেঙ্গে পড়ে, তখন অন্যায়ের সত্য কারণ জানতে পারলেও প্রতিবাদ করতে পারেনা। কারণ, অন্যায়কে প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ না করে হজম করার লজ্জা তাকে অনড় করে রাখে।”

তৃতীয় বিশ্বের তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে জনগণকে নানা পীড়নের মধ্যে রেখে মনোবল ভেঙ্গে দেয়া হয়। এর লক্ষ্য থাকে জনগণের মধ্যকার সোচ্চার অংশ। এদেরকে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার ছাড়াও আইনী বাধা-নিষেধের আওতায় আনা হয়।

আরেকটি পদ্ধতি হলো – সামাজিক বিচ্ছেদ। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে ক্রমাগত দোষারোপ করার মানসে বিশাল প্রচার ও আন্দোলন পরিচালনা করা হয়। উদ্দেশ্য, এই কালিমা লেপনের মাধ্যমে জনগণকে প্রভাবিত করা। একবার কাউকে কলংকিত করা গেলে, ঐতিহাসিকভাবে তা স্থিতি লাভ করে। লেভিনের মতে এর লাভ দু’টি। (১) সম্ভাব্য প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা, (২) প্রতিবাদী কন্ঠ হিসেবে জনসমর্থন অর্জনের সুযোগ না দিয়ে ভীতির কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। ফলে, জনগণ নিজেদের কথা বলতে না পারায়, কায়েমী স্বার্থবাদীরা নিজেদের লক্ষ্যে সহজেই এগিয়ে যেতে পারে।

প্রতিবাদহীন জনগোষ্ঠী সৃষ্টিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনেকাংশে দায়ী। শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো এমন মানুষ পয়দা করছে, যারা প্রশ্ন করতে পারেনা বা অন্যায়- অবিচারের প্রতিবাদী হিসেবে গড়ে উঠছেনা। এমনকি তারা গণতান্ত্রিক হিসেবেও বেড়ে উঠছেনা। তাদের সিলেবাসগুলো কিছু কর্মচারী তৈরী করছে। যারা সব শাসন – অপশাসনকে দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নেয়। প্রতিষ্ঠান গুলোতে স্নেহ মায়া মমতার স্থান নেই। আর সর্বোচ্চ শিক্ষায়তনের একমাত্র লক্ষ্য করপোরেশনের জন্য কর্মচারী বানানো।

জনগণের মনোবল ভেঙ্গে ফেলার অন্যতম প্রধান মাধ্যম সংবাদপত্র ও টেলিভিশন। মার্কিনি লেখক জেরী মানডে তার ফোর আরগুমেন্টস ফর এলিমিনেশন অব টেলিভিশন বইতে স্বৈরতন্ত্র নির্মাণে টেলিভিশনের আট(৮) টি নিখুত অবস্থার বর্নণা দেন।

১। জনগণের মানসিকতা থেকে প্রকৃতি প্রদত্ত ধারণার বদলে মানুষ ও মানবিকতার নতুন ধারণা প্রদান করে।
২। সংবেদনশীলতাকে ভোতা করে দেয়।
৩। জীবনের অর্থ আর আনন্দের নতুন পরিচয় দেয়।
৪। অন্য সভ্যতাকে হয় প্রবর্তন না হয় নিষিদ্ধ করে, যাতে জনগণ কোন তুলনা করতে না পারে।
৫। জ্ঞান ও তথ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে পড়ে
৬। কোন কিছুর ঝামেলা এড়াতে টেলিভিশন নেশায় পরিণত হয়।
৭। মানসিকতাকে আছন্ন করে রাখে
৮। পারষ্পরিক বিভেদ বজায় রাখে।
অর্থাৎ, একজন নাগরিকের দায়িত্ব ও মানসিকতা পরিবর্তন করে তাকে শুধু ক্রেতায় পরিণত করে। ধীরে ধীরে ঋণভিত্তিক জীবনধারণের অভ্যাস বাড়িয়ে দিয়ে দাসত্যের অদৃশ্য খাঁচায় জনগণকে বন্দী করে তার বিদ্রোহ করবার সকল শক্তি কেড়ে নেয়া হয়

আমাদের মধ্যে যারা এভাবে গুটিয়ে গিয়েছে , তাদের মুল অভাব হলো আত্নবিশ্বাস। আত্নবিশ্বাসহীন জনপদ ভেঙ্গে যায়, নুইয়ে পড়ে। এটা ইতিহাসের শিক্ষা। অতএব, যদি আত্নবিশ্বাসে উজ্জীবিত ও আশাবাদী করা যায়, জনগণ তাহলে অত্যাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করার লজ্জা থেকে মুক্তি পাবে।

মুক্ত বোধের সাহসী স্বত্ত্বার জয় হোক

(সংগৃহীত ও সম্পাদিত)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১০ সকাল ৮:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×