. (৫) অলস বসে থেকে মুনাফা লাভের দৃষ্টান্ত থেকে প্রমাণ সংগ্রহঃ
তাদের কেউ কেউ আবার বলে উঠছেন যে, “অলস বসে থেকে মুনাফা লাভের দৃষ্টান্ত তো খোদ ট্রাডিশনাল মার্কেটিংয়েও রয়েছে। যেমন একজন বস্ত্র ব্যবসায়ী কয়েক বছর কঠোর শ্রম দিয়ে একটি বিশাল দোকান দিয়ে বসে। কাজ কারবার মূলত সবই করছে কর্মচারীরা; মালিক শুধু আলীশান গদিতে বসে টাকা গুনে গুনে কেবল পকেটে ঢুকাচ্ছে। এটা যদি বৈধ হয়, তাহলে মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ে কয়েক বছর কঠোর শ্রম দিয়ে একটি দালাল চক্র সৃষ্টি করে ডাউনলাইনের কমিশনে বসে থেকে ভাগ বসালে অবৈধ হবে কেন ?”
এ উদাহরণে সর্বাধিক লক্ষণীয় বিষয়গুলো হচ্ছে, কিছু লোককে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেয়া, তাদের বেতন-ভাতাদি ও আইনগত দায়-দায়িত্বের একটি বোঝা মালিকের স্কন্ধে থাকা। এটা মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের আপলাইন ও ডাউনলাইনের কারবার নয়, যেখানে ডাউনলাইনের পাতি দালালদের ইনকামে আপলাইনের রাঘব বোয়ালদের অধিকার তো ঠিক ই আছে কিন্তু বেতন-ভাতা ও আইনগত দায়-দায়িত্বের কোন কিছুই তাদের ঘাড়ে নেই। অধিকার ও দায়-দায়িত্বের ক্ষেত্রে দু’টি ব্যবস্থার মধ্যে মৌলিক পার্থক্যের ফলে একটিকে অপরটির সাথে তুলনা করা ই সঠিক নয়।
এখানেও যে কথাটি অত্যন্ত জোরের সাথে উল্লেখ্য তা হলো, উক্ত উদাহরণেও (এমনকি মালিক কর্তৃক কোন রকম বেতন-ভাতা দেয়া না হলেও) শ্রমের বহু স্তর সুবিধা (multilevel benefit of labour) খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থ্যাৎ, বস্ত্র ব্যবসায়ী তার নিযুক্ত কর্মচারীর মাধ্যমে বিক্রীত পণ্যের লাভ একবারই পাচ্ছে। উক্ত কর্মচারী থেকে কোন ক্রেতা কোন পণ্য কিনে অন্য কোথাও বিক্রি করলে সেখানকার মুনাফায় উক্ত বস্ত্র ব্যবসায়ীর কোন কমিশন থাকছে না; তার পরবর্তী পর্যায়ের বিক্রয়সমুহের ক্ষেত্রে তো কমিশনের প্রশ্ন ই আসে না।
(৬) সম্মতির বাহানাঃ
একটা পর্যায়ে তারা বলে উঠেন যে, “আমরা তো আর কাউকে জোর করে এই ব্যবসায় আনছি না। প্রাপ্ত বয়স্ক লোকেরা স্বেচ্ছায় আমাদের সাথে চুক্তি করছে। পারস্পরিক সম্মতি থাকার কারণে আমাদের এই কারবার জায়েজ। কারণ, আল্লাহ বলেন-
يا ايها الذين امنوا لا تاكلوا اموالكم بينكم بالباطل الا ان تكون تجارة عن تراض منكم (النساء 29)
অর্থ্যাৎ, “হে ঈমানদাররা! তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না। তবে তোমাদের পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমে খেতে পারো।” (নিসা, ২৯)”
প্রথম কথাটি হচ্ছে, আয়াতের প্রথমাংশে “অন্যায়ভাবে” অন্যের সম্পদ খাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে; অতঃপর আলোচিত হয়েছে পারস্পরিক সম্মতিক্রমে ব্যবসার বিষয়টি। এর মাধ্যমে বুঝা গেল, কোন একটি বিষয় কুরআন ও হাদীস দ্বারা অবৈধ প্রমাণিত হলে পারস্পরিক সম্মতি তাকে বৈধ করতে পারেনা। এ ক্ষেত্রে আল্লামা আসাদ কর্তৃক উক্ত আয়াতের অনুবাদটি খেয়াল করুন-
O YOU who have attained to faith! Do not devour one another's possessions wrongfully - not even by way of trade based on mutual agreement.
অর্থ্যাৎ, “হে ঈমানদাররা! তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না- এমনকি পারস্পরিক সম্মতিক্রমে ব্যবসার নাম দিয়েও নয়।”
(Asad: The Message of the Quran, pp 142-4)
তাছাড়া একটি দারিদ্র পীড়িত দেশে মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে একতরফা যে কোন শর্ত দিলেও বেকার যুবকরা সম্মতি দিতে কুন্ঠা বোধ করে না। এরকম পরিস্থিতিতে প্রদত্ত সম্মতি ‘স্বাধীন সম্মতি’ (free consent) হিসেবে বিবেচিত হবে কিনা- তা নীচে উল্লেখিত মুফাসসিরদের বক্তব্য থেকে কিছুটা আঁচ করা যেতে পারে।
সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী (রহঃ) লিখেন-
অন্যায়ভাবে বলতে এখানে এমন সব পদ্ধতির কথা বুঝানো হয়েছে যা সত্য ও ন্যায়নীতি বিরোধী এবং নৈতিক দিক দিয়েও শরীয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েয।…… প্রতারণা ও জালিয়াতির কারবারেও বাহ্যত সম্মতিই দেখা যায়। কিন্তু এখানে সম্মতির পেছনে এই ভুল ধারণা কাজ করে যে, এর মধ্যে প্রতারণা ও জালিয়াতি নেই।
(তাফহীমুল কুরআন, সূরা নিসা, টীকা ৫০)
আল্লামা আসাদ বলেন-
The believers are prohibited from devouring another person’s possessions wrongfully even if that other person- being the weaker party – agrees to such a deprivation or exploitation under the stress of circumstances.
(Asad: The Message of the Quran, pp 142-4)
অর্থ্যাৎ, “ঈমানদারদেরকে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে খেতে নিষেধ করা হয়েছে; এমনকি অপর পক্ষ (দুর্বল হওয়ার কারণে) পরিস্থিতির চাপে এই বঞ্চনা ও শোষণমূলক চুক্তিতে সম্মতি দিলেও।”
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১০ সকাল ৮:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




