. পদ্ধতিগত দিক (Procedural Aspects)
মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ের তাত্ত্বিক ভিত্তি (Theoretical Basis) ও ইসলামের প্রতিষ্ঠিত অর্থ ও শ্রমনীতির সাথে তার সংঘর্ষের বিষয়টি দীর্ঘ পরিসরে আলোচনা করার পর এ পর্যায়ে আমরা কিছু পদ্ধতিগত সংঘাত নিয়ে আলোচনা করবো।
বর্ধিত মুল্যে বিক্রয়
ট্রাডিশনাল মার্কেটিংয়ে একটি পণ্য উৎপাদক থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছা পর্যন্ত হাতেগোনা কয়েকটি মধ্যস্বত্বভোগী থাকে। [যেমন, Producer → agent → whole seller → retailer → consumer/ উৎপাদক → এজেন্ট → পাইকার → খুচরা বিক্রেতা → ভোক্তা ] । কিন্তু, মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ের বাহারী প্রচারণার সময় ঐ গুটিকতেক মধ্যস্বত্ত্বভোগী বিলোপ করার শ্লোগান দিয়ে তারা নিজেরাই উল্টো ডাউনলাইন ও আপলাইন নাম দিয়ে শত সহস্র মধ্যস্বত্ত্বভোগী সৃষ্টি করে চলেছে। এই বিপুল সংখ্যক দালাল গোষ্ঠীকে কমিশনের বখরা দিতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই কোম্পানীকে বর্ধিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে হয়। কিন্তু প্রচলিত পণ্যদ্রব্যের (যেমন চাল, ডাল, তেল, সাবান সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসমূহ) দাম পাবলিকের জানা থাকায় কোম্পানী যদি এসব পণ্য বর্ধিত মূল্যে বিক্রি করে তাহলে পাবলিককে সহজে এ জালে আটকানো সম্ভব নয়। আবার প্রচলিত বাজারমূল্যে বিক্রি করলে বিপুল সংখ্যক দালাল গোষ্ঠীর মুনাফার পরিমাণ মারাত্মিক ভাবে কমে যায়। ফলে তারা এক অভিনব ফন্দি আঁটে। আর তা হলো এমন সব পণ্যের প্যাকেজ তৈরী করা যেগুলোর দাম সম্পর্কে সাধারণ জনগনের সঠিক কোন ধারণা নেই। এই প্রক্রিয়ায় সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রির বাহারী প্রচারণা ও বাস্তবে (জনগণের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে) মূল্য বহুগুণ বাড়িয়ে বিক্রি – উভয় কূলই রক্ষা করা যায়।
বাংলাদেশে প্রচলিত মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ের একটি কোম্পানী কর্তৃক “নাইজেলা” নামক তেল বিক্রির ঘটনা এখানে উল্লেখযোগ্য। গত কয়েক মাস আগে এদেশের শীর্ষস্থানীয় একটি এমএলএম কোম্পানী ঢাকা বিজ্ঞান কলেজে “ইসলামের দৃষ্টিতে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং” শীর্ষক একটি সেমিনারের আয়োজন করে। আমি সে সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছিলাম। সেমিনারের একটি বিশাল সময় জুড়ে ওলামায়ে কেরামের কূপমন্ডুকতা তুলে ধরে খানিকটা হাস্যরস সৃষ্টির প্রচেষ্টা চলে। পরে মঞ্চে হাজির হন ঐ কোম্পানীর শরীয়াহ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুস সোবহান। প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রশ্ন উঠে “নাইজেলা” প্যাকেজের দাম নিয়ে। প্রথমদিকে অস্বীকার করার চেষ্টা চললেও পরে অবশ্য স্বীকার করা হয় যে নাইজেলা তেলের এই প্যাকেজটি অনেক চড়া মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। (উল্লেখ্য, মাত্র ৬০০০ টাকার এই প্যাকেজেই কোম্পানী ২৭৭৫ টাকা লাভ করে বলে স্বীকার করা হয়)। দারিদ্র পীড়িত একটি দেশে এতো চড়া মূল্যে পণ্য বিক্রি ইসলামে জায়েজ কিনা – এমন প্রশ্নের জবাবে মাওলানা সাহেব বলেন, “জায়েজ, একশ বার জায়েজ”। কিসের ভিত্তিতে জায়েজ – জানতে চাওয়া হলে তিনি দলিল হিসেবে হযরত আলী (রাঃ) এর একটি ঘটনা উল্লেখ করেন। ঘটনাটি হলো, আলী (রাঃ) একদিন বাজারে গিয়ে ৬০ দিরহাম দিয়ে একটি ঘোড়া কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে একজন জিজ্ঞাসা করলেন –
পথিক : ঘোড়া কত দিয়ে কিনলেন ?
আলী (রাঃ) : ৬০ দিরহাম দিয়ে।
পথিক : ঘোড়াটি বিক্রি করবেন ?
আলী (রাঃ) : করবো ।
পথিক : দাম কত ?
আলী (রাঃ) : আমি কিছু বলবো না। আপনার যা খুশি দিয়েন ।
পথিক : আমি আপনাকে ১২০ দিরহাম দিবো।
আলী (রাঃ) : ঠিক আছে ।
এরপর মাওলানা সাহেব আমাদের কে উদ্দেশ্য করে বলেন, “দেখছেন, মাত্র কিছুক্ষণের মধ্যে আলী (রাঃ) ৬০ দিরহামে কিনে ১২০ দিরহামে বিক্রি করলেন। অতএব অতিরিক্ত মূল্য ইসলামে জায়েজ।” আমার পিছনের এক লোক বক্র হাসি দিয়ে বলল, “বাহ ! মাওলানা সাহেবের যুক্তির কী বহর ! এখান থেকে অতিরিক্ত মূল্য ধার্য করার বৈধতা তো প্রমাণিত হয়ই না; উলটো বরং এই ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, বিক্রেতা তার পণ্য দ্রব্যের দামই চাইতে পারে না, ক্রেতা খুশী হয়ে যা দিবে তাতেই তার খুশী থাকা উচিত”।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১০ সকাল ৮:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




