somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন শাহাবাগী নাস্তিক এবং অন্যান্য

২৬ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাহবাগের আন্দোলন এবং এর পরবর্তী সময়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাকে।ছোট-বড়,পক্ষ-বিপক্ষের অনেকেই এই আন্দোলনের নানা দিক সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।তাদের উত্তর কখনও দিয়েছি কখনও দিতে পারি নি।তাই আমার এই লেখার অবতারণা।

ভূমিকার পর এবার মূল প্রসঙ্গে আসি।বালাদেশের যুদ্ধাপরাধ এবং জামাত-শিবির কথা দুইটি প্রায় সমার্থক।যদিও মোসতাক টাইপের লোকেরাও সব সময় ছিল এবং আওয়ামীলীগ,বিএনপিতেও খুজলে অনেক যুদ্ধাপরাধী পাওয়া যাবে তবুও জামাত মানেই ১৯৭১ এর পরাজিত হায়েনার দল।এই দলের প্রায় প্রতিটি নেতাকর্মী,সদস্য জন্মগত ভাবেই স্বাধীনতাবিরোধী,পাকিস্থানপন্থী।১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে এই দলের সব সদস্যের সক্রিয় সহায়তাই পাকিস্থানি হানাদার বাহিনি এই দেশে খুন,ধর্ষণ,লুটতরাজ চালিয়েছে,যা মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক জঘন্যতম কলঙ্কিত অধ্যায়।

তারপর সময়ের পরিক্রমায় এরা আবার নিজেদের সংঘটিত করেছে,মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে,কিন্তু এখনও এরা বাংলাদেশবিরোধী হয়েই রয়েছে।ধর্মকে ব্যাবহার করে (ঠিক যেমন করেছিল ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে)সাধারণ মানুষের অনুভূতিকে পুজি করে নিজেদের শক্তিশালী করেছে।

এই দলের একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লা।২০১৩ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত আসামী আব্দুল কাদের মোল্লার বিচারের রায় ঘোষণা করে। কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা, আলুব্দি গ্রামে ৩৪৪ জন মানুষ হত্যা সহ মোট ৬টি অপরাধের ৫টি প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। কিন্তু এতোগুলো হত্যা, ধর্ষণ, সর্বোপরী গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ মেনে নিতে পারেনি। রায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকার শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে এবং এর অনুসরণে একসময় দেশটির অনেক স্থানেই সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। একসময় তা দেশব্যাপী বিক্ষোভে রূপ নেয়। দেশের অন্য যেসব স্থানে উল্লেখযোগ্য বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, চট্টগ্রামের প্রেসক্লাব চত্বর, রাজশাহীর আলুপট্টি মোড়, খুলনার শিববাড়ি মোড়,বরিশালের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বগুড়ার সাতমাথা, যশোরের চিত্রা মোড়, কুমিল্লার কান্দিরপাড়া, কুষ্টিয়ার থানা মোড় ইত্যাদি।

এই আন্দোলনের নেতৃতে ছিলেন ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টেরা।বলতে গেলে সাধারণ মানুষের এই আন্দোলন জামাত-শিবির এবং তাদের একাত্তর পরবর্তী দোসর বিএনপির ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল।এই আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ধর্মকে ব্যাবহার করে নানা মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়।আন্দোলনকারী দের নাস্তিক,নারীলোভি,গাজাখোর আখ্যা দেওয়া হয়,ঠিক যেমনি ১৯৭১ এ মুক্তিযোদ্ধাদের নানা আখ্যা দিয়েছিল ধর্মান্ধ জামাত।এছারা দেশব্যাপি জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে।কিন্তু তাতে আন্দোলন প্রভাবিত হয় নি।

প্রথমদিকে আওয়ামীলীগ এই আন্দোলনে নিজেদের রাজনৈতিক লাভ বুঝতে পেরে এতে সাপোর্ট দিয়েছিল।কিন্তু বিএনপি তাদের রাজনৈতিক সহচর জামাতেকে বাঁচাতে প্রথমে এই আন্দোলন সম্পর্কে নীরব ভুমিকা পালন করে,পরে জামাতের সুরে সুর মেলায়।এক পর্যায়ে বিএনপি জামাতের প্রত্যক্ষ মদদে হেফাজতে ইসলাম নামক ধর্মীয় উগ্র-গোষ্টির উত্থান ঘটে।এক পর্যায়ে হেফাজত এবং মঞ্চ মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে।এবং পরবর্তীতে ৫ই মে কার্যত হেফাজতের মৃত্যু ঘটে।এক সময় ধর্মান্ধ কিছু মানুষের সমর্থন থাকলেও পরবর্তীতে নেতাদের বিভিন্ন ভন্ডামি এবং জামাত-শিবিরের সম্পৃক্ততা প্রকাশ পাওয়ায় হেফাজতের জনসমর্থন শেষ হয়ে যায়।এছারা হেফাজতের নেতাদের জঙ্গি তৎপরতাও প্রমানিত।

জামাত-শিবির,বিএনপি শাহবাগ আন্দোলনকে স্থিমিত করতে ব্যাপক অপপ্রচার চালায়।এই আন্দোলনকে নাস্তিকদের আন্দোলন বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়।কয়েকজন ব্লগারকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়,সারাদেশের আন্দোলন সংশ্লিষ্ট অনেককেই হত্যা করা হয়।

পরবর্তীতে আওয়ামী সরকার দ্বিতীয় বারের মত শাসন ক্ষমতা পাওয়ার পর আবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে অগ্রগতি কমে যায়।এবার সরকারও গনজাগরনমঞ্চ বিরোধী অবস্থান গ্রহন করে।এছাড়া গনজাগরনমঞ্ছের আহ্বায়ক ইমরান-এইচ-সরকারের সাথে অন্যান্য নেতা কর্মীদের মনোমালিন্য,আওয়ামী ছাত্রনেতাদের অসহযোগিতা এবং মঞ্চ-বিরোধী অবস্থান ইত্যাদি কারনে আন্দোলন গতি হারায়।

শাহবাগের আন্দোলনের ফলাফল ব্যাপক।এই আন্দোলনের ফলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সাধারণ মানুষকে নাড়া দিয়েছিল,সাধারণ মানুষ একত্রিত হতে শিখেছিল,আন্দোলন করতে শিখেছিল।স্বাধীনতার পর সাধারণ মানুষের এমন স্ফুরণ এই প্রথম।এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় ফলাফল আদর্শিক যা কখনও শেষ হবে না বরং প্রজন্মের পর প্রজন্ম আলো দিয়ে যাবে স্বাধিনতাপ্রেমি মুক্তিকামী মানুষকে।

জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু।।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×