somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদমচরিত 06

০৮ ই মে, ২০০৬ রাত ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আদম হরকরা স্বর্গদূত গিবরিলকে ভাড়া করিয়াছে কিছু ফলমূলের বিনিময়ে। গিবরিল বর্তমানে বেকার, ভবিষ্যতে নাকি ঈশ্বর তাহাকে ঘনঘন পৃথিবীতে পাঠাইবেন বলিয়া আশ্বাস দিয়াছেন। তাই সে চৌপর আড্ডা ভাঁজে, স্বর্গ অপ্সরাদের পিছে লাইন ঠোকে। আদম এমনই এক আড্ডা হইতে তাহাকে গেরেফতার করিয়াছে।

গিবরিল অবশ্য জ্ঞানবৃক্ষের ফলের জন্য লালায়িত নহে, একটি মর্তমান কদলী পাইয়াই সে ভজিয়া গেলো। আদম তাহার হস্তে ভূর্জপত্রের পুঁথি গুঁজিয়া দিয়া জিজ্ঞাসিলো, "বন্ধু গিবরিল, টোলে লেখাপড়া কিছু শিখেছিলে?"

গিবরিল লাজুক হাসিয়া রশ্মিনির্মিত মস্তক চুলকায়।

আদম আবার শুধায়, "বলি হিয়েরোগি্লফিক্স পড়তে পারো?"

গিবরিল পায়ের নখ দ্্বারা স্বর্গের মাটি খুঁটিতে থাকে অধোবদনে।

আদম মনে মনে হাঁপ ছাড়িয়া বাঁচে, যাক বাবা, গিবরিলটা মূর্খ নিকালিয়া ভালোই হইয়াছে, নতুবা বানান ও ব্যকরণে ভুলভাল ধরিয়া তাহাকে নাকাল করিয়া ছাড়িতো।

সে গম্ভীর মুখে বলে সাধু ভাষায় বলে, "তাহলে পত্রে কাজ নাই। মুখেই বলিতেছি শুনো। ঈভকে গিয়া বলিবে, আলোচনায় বসিতে আমি আগ্রহী। সে যেন তাহার প্রতিনিধি দলের নাম পাঠায়। আর আলোচনায় আমি কাহাকে সাথে রাখিবো, কাহাকে রাখিবো না, তাহা লইয়া বিবাদ উহাকে শোভা পায় না। আমি কি কখনো গিয়া বলিয়াছি, তুমি অমুক স্বর্গসখীর সহিত তমুক নদীতে স্নান করিতে যাও? সহচর নির্বাচনে তাহার যেমন অফুরন্ত স্বাধীনতা, তেমনি আমারও। কাজেই আমি শয়তানকে সঙ্গী করিয়াই আলোচনার মাদুরে বসিবো।"

গিবরিল বার কতক মুখস্থ করিয়া লয় আদমের কথাগুলি, তাহার স্মরণশক্তি মোটামুটি মন্দ নয়।

আদম কিছু চৈনিক বাদাম ধরাইয়া দেয় গিবরিলের হাতে, যাত্রাপথে চিবাইবার জন্য। গিবরিল ডানা ঝাপটাইতে ঝাপটাইতে উড়াল দেয়।

বেশিক্ষণ অপেক্ষা করিতে হয় না, গিবরিল আবার ফেরত আসে। তাহার হস্তে একটি ডাঁসা পেয়ারা, সে মন দিয়া চিবাইতেছে। প্রতীয়মান হয় পেয়ারাটি ঈভদত্ত।

"আদম," পেয়ারা চিবাইতে চিবাইতে গিবরিল বলে, "তোমার বউ মহা খাপপা। সে শয়তানের সাথে আলোচনায় বসিতে রাজি নয়। শয়তান নাকি স্বর্গদূত ভালো নয়। ঈভকে জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাইতে ব্যাপক ফুসলি দিয়াছিলো। আর তুমি তোমার ঘরে যে ভোটার তালিকা নির্মাণ করিয়াছো, দুইজনের সংসারে ভোটারের সংখ্যা তিনজন দেখাইয়াছো, ইহা সংশোধন না করিলে ঈভ তোমাকে ঘরে প্রবেশ করিতে দিবে না। সে মুড়ো খ্যাংরা হস্তে অবিরাম বাড়ি পাহারা দিতেছে।"

আদম চটিয়া ওঠে, বলে, "আরে এ যে দেখছি মহা ল্যাঠা। আমার পোষা রামছাগল ত্রিভূজ কি তবে মহাপ্লাবনের জলে ভেসে এলো? ও ভোট দেবে না? নাহয় ওর বুদ্ধিশুদ্ধি নেই এক ফোঁটা, তাই বলে কি ও ঘরের কেউ নয়? বয়সও তো ওর আঠারোর ওপরে! এ অন্যায়, এ বড় অন্যায়!"

গিবরিল পেয়ারাটা পুরোটাই খেয়ে ফেলে, বিচিগুলো থু থু করে ছিটাতে ছিটাতে বলে, "কিন্তু ঈভ বললো তুমি নাকি ঈভকেই ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছো?"

আদম বলে, "হাঁ! মেয়েমানুষ ভোট দিয়ে কী করবে?"

গিবরিল বলে, "তাহলে ভোটার তিনজন হলো কিভাবে?"

আদম হাসে। বলে, "ঐ যে শয়তান। ও তো বলতে গেলে ঘরেরই লোক। ওকেও তুলে দিয়েছি লিস্টিতে।"

গিবরিল মাথা চুলকায়।

আদম বলে, "যা-ই হোক গিবরিল, শ্রবণ কর! ঈভকে গিয়া কহ, সে যাতে তাহার খ্যাংরা নত করিয়া ঘরকে স্থিতিশীল করিতে সহায়তা করে। সমগ্র স্বর্গের চোখে আমার ঘরের ভাবমূর্তি নষ্ট হইতেছে। এ কাম্য নহে। তুমি সত্বর গিয়া তাহাকে বলিবে ....।"


দূর হইতে অন্যান্য স্বর্গদূতেরা নিজেদের মধ্যে গুজগুজ করিতে লাগিলো, গিবরিল হঠাৎ এতো উড়িতেছে কেন? স্বর্গের কোথাও কি পত্র চালাচালি হইতেছে নাকি?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×