somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃষ্টিস্নাত এক দুপুরে

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বরাবরের মতন আজো পরীক্ষার হল থেকে বের হবার আগে বৃষ্টি নামলো। একেবারে ঝুম বৃষ্টি যাকে বলে। হল থেকে বের হয়ে গেটের সামনে করিডোরে দাড়িয়ে আছে অহনা আর এ্যানী। দু'বান্ধবীর গলায় গলায় ভাব, মানিক জোড় যাকে বলে। ক্লাশ ওয়ান থেকে সেই যে পথ চলা শুরু ভার্সিটি লাইফেও কিভাবে যেনো দু'জনে এখনো একসাথে রয়ে গেছে তাই কেউ কেউ ওদের বলে জমজ বান্ধবী। একজন আরেক জনকে ছাড়া অসম্পূর্ণ! এখন এমন একটি অবস্থা দাড়িয়েছে যে স্যার-ম্যাডামরাও একজনকে ছাড়া আরেকজনকে দেখলে জিজ্ঞেস করেন জমজ বান্ধবীর আরেকজন কোথায়। ওরাও ব্যাপারটি খুব উপভোগ করে।
আজ প্ল্যান ছিলো পরীক্ষা দিয়ে দুজনে খাওয়া দাওয়া করবে। আগের দিন এ্যানী খাইয়েছে আজ অহনা খাওয়াবে। বৃষ্টি দেখে এ্যানী একটু শংকিত হলেও অহনা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ খাবেই। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বের হয়ে গেলো হল দুজনে। মনভরে খাওয়াদাওয়া করে খুশীমনে বাসায় ফেরে দুজনে যদিও অহনার মন একটু খারাপ অনেক দিন এ্যানীর সাথে দেখা হবেনা এ্যানী ওর বড় আপার বাসায় যাবে, কবে ফিরবে ঠিক নেই।
আজ দুজনে পরীক্ষার হলে বসে যা মজা করল যা হাসাহাসি হলো তা মনে করে দুজনে একচোট খুব করে আবার হেসে নিলো রিক্সায় বসে।
> আআআ....ধ্রুব চলে গেছেএএ....এটা কি হলোওওও.... অহনার ছোটখাটো চিৎকার শুনে এ্যানীর প্রশ্ন
>> আরে কি হইসে?
> আর বলিস না ধ্রুব'র দেয়া কলমের কালিটা শেষ হয়ে গেলো, শালা নিজেতো চলে গেছে শেষ পর্যন্ত কলমের কালিটাও....আমার প্রিয় কলমটা.... বিলাপের সুরে বলে দুজনের একসাথে হাসি।
পরীক্ষার খাতায় না লিখে হাসাহাসি দেখে আশেপাশের ছেলে-মেয়েরা অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো ওদের দিকে।

একরাশ আনন্দ নিয়ে যে যার বাসায় ফিরে যায়।

*********************************
>মা দেখো কি চমৎকার বৃষ্টি হচ্ছে
>> হমম ভেজার মতন বৃষ্টি, ভিজতে পারলে ভাল লাগতো
> কতদিন বৃষ্টিতে ভিজি না, যাই বাড়ীওয়ালার বাসায় গিয়ে ছাদের চাবি চেয়ে নিয়ে আসি। পরক্ষনেই বাড়ীওয়ালার চেহারাটি চোখের সামনে ভেসে উঠতেই মিইয়ে গেলো অহনা। গতবছরও বৃষ্টি একদমই পছন্দ করতো না অহনা, এই বছর খুব কম বৃষ্টি হওয়ার ফলেই কিনা কে জানে বৃষ্টির জন্যে ছটফট করতে থাকে। বৃষ্টি ওর খুব ভাল লাগে। ছাদে যেতে না পেরে মনটা ছটফট করতে থাকে এক দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায় ভেজার আশায় কিন্তু সেখানে সুবিধা করতে পারেনা। মন খারাপ করে বাইরে তাকিয়ে থাকে আর আর ভাবে এই শহরেই আর থাকবেনা চলে যায় তার কল্পনার জগতে
" ছিমছাম গোছানো নিরিবিলি একটি মফস্বল শহর যার এক কোনে বিশাল জায়গা জুড়ে পাচিল ঘেরা দোতলা বাড়ীটিতে তার বাস। বৃষ্টি নামলেই একছুটে উঠোনে নেমে যেতে পারে কিংবা কোন এক পূর্ণিমা রাতে নারকেল পাতার ছায়ার সঙ্গে খেলতে পারবে। বাধা দেয়ার কেউ থাকবে না সেখানে। মধ্যদুপুরে যখন শহর নিরিবিলি থাকবে বাসার পাশের কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াবে সে। অথবা ঝুম বৃষ্টিতে কলেজের স্টাফ কোয়ার্টারের ভেতর দিয়ে ভিজতে ভিজতে চলে যাবে কুমোর পারা পর্যন্ত। বৃষ্টি শেষে বাসায় ফেরার পথে কুমোর বাড়ীর বউয়ের সাথে গল্প করে একগাদা মাটির বাসন-খেলনা নিয়ে ফিরবে। কোনদিন হয়ত বর বকা দিবে। অহনা ভাবে দিলে দিবে হু কেয়ারস্ । এই খেলনাপাতি কেনার মাঝে যে কি মজা আছে তা তো আর কলেজের ঐ প্রফেসর বুঝবে না!"

মাঝে মাঝে অহনার খুব মন খারাপ হয়ে যায় এই শহরে পরে আছে বলে। ইট পাথরের এই খাঁচা থেকে বের হয়ে মুক্ত ভাবে কোথাও যেতে চায় যেখানে থাকবেনা গাড়ীর প্যাঁ পোঁ, মানুষের হাউকাউ শুধু থাকবে রিক্সা-ভ্যান আর সাইকেলের টুংটাং। মাঝে সাঝে গাড়ীর হর্ণ শুনে অবাক হয়ে দেখবে শহরে নতুন এসে বাচ্চা ছেলের গাড়ী দেখার মতন করে। শহরের রাস্তায় হাটাচলা করা যায় নাকি! এদিক দিয়ে রিক্সা তো সেদিক দিয়ে প্রাইভেটকার! প্রাইভেটকারের হর্ণ শুনলে অহনার মেজাজ খিচড়ে যায়, পেছন ফিরে বলেই ফেলে, প্যাঁপাইয়েন্না তো! শব্দটা বলে একদিন নিজেই হেসে খুন হয়ে যায় প্যাঁপাইয়েন্না হাহ হা...কি শব্দ!

কলিংবেলের অনবরত টিংটং আওয়াজে ধ্যান ভংগ হয়ে যায় অহনার, ভাইয়া এসেছে। ছেলেটাকে এত বকাবকি করি তাও শিক্ষায় হয় না মানুষ যেনো দরজায় বসে থাকে খোলার জন্যে। সামান্য দেরী একদম সহ্য হয়না। ধ্যাত! কি মজার জগতেই না ছিলাম এতক্ষন! রাগে গজগজ করতে করতে দৌড় দেয় অহনা দরজা খুলতে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৭:০২
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×