আবারো হাজির হয়েছি রেসিপ্পো অর্থাৎ রেসিপির সাথে গপ্পো নিয়ে। আগেই বলেছিলাম আব্বা আম্মার অনুপস্থিতিতে রান্না ঘরের একচ্ছত্র আধিপত্য আমার। কিন্তু এই আধিপত্য আর ভাল লাগছে না। আমি আস্থির হয়ে দিনগুনি করে কবে আসবে আম্মা আব্বা। ভাইয়া এক কাজে বাড়ীতে গিয়েছিল একদিনের জন্যে আম্মা অনেক গুলো মাছ পাঠিয়ে দিয়েছেন। বাসায় মাছ কেনা, কাটা-ধোয়ার সমস্যা তাই এই ব্যবস্থা। যাই হোক আম্মার পাঠানো মাছের মাঝে রুই মাছও ছিল যা রান্না করে খেতে ভাল লাগেনা। ভাবলাম অন্য কিছু করি। যেই ভাবা সেই কাজ।
বড় ৩টুকরা মাছ সামান্য হলুদ, লবন, এক চা চামচ পরিমান জিরা বাটা, এক চা চামচ পরিমান রসুন বাটা, এক চা চামচ পরিমান আদা বাটা দিয়ে পানি শুকিয়ে সেদ্ধ করে এক পাশে রেখে এটার কথা ভুলে গেলাম। কারন তখন আমাকে দুপুরের রান্না করতে হয়েছে। দুপুরে খেয়ে দেয়ে বেশিরভাগ দিন ঘুমালেও সেদিন আর ঘুম আসে না! ঘুম আসবে কী করে খাবারের চিন্তা যে ঘুরছে মাথায়!
যাই হোক আল্লাহ আল্লাহ করে বিকেল হলে মাছের কাঁটা বেছে ১/৪ কাপের মত পেঁয়াজ কুচি, দুই টেবিল চামচের মত ধনে পাতা কুচি, স্বাদ মত কাঁচামরিচ কুচি, ১/৪ কাপের মত পুদিনা পাতা কুচি, দিয়ে একসাথে করে ভাল মত একটা মাখানি দিলাম। একদম আলু ভর্তার মত ভর্তা আরকি। এবার একটু টেস্ট করে দেখবেন স্বাদ ঠিক আছে কিনা। আমি আর্ধেকটা লেবুর রস আর আধা চামচের মত চিনি দিয়ে আবার মাখালাম । আম্মার সেই জড়িবুটি মশলা দেই দেই করেও দিলাম না। ভাবলাম থাক পুদিনার ঘ্রান নষ্ট করার দরকার নাই। ওহ ভাল কথা, আমার বারান্দার টবে পুদিনা পাতা ছিল বলে দিয়েছি আমি, আপনাদের না থাকলে ধনেপাতা-ই বেশি করে দিবেন। ধনেপাতা এখন সস্তা, দশ টাকায় অ্যাত্ত গুলো দেয়। সুতরাং কার্পণ্য করবেন না। তবে আবার ধনেপাতা দিতে দিতে শাক বানিয়ে ফেলবেন না।
খুব জরুরী একটা উপকরণের কথা ভুলে গেছি , কিছু মনে করবেন না রান্না বান্নায় আমার এটা খুবই সাধারন ব্যাপার। আমি কিছু রান্না করতে গেলে আম্মা তাই আস পাশে ঘুর ঘুর করে মনে করিয়ে দিতে (যদিও আমি বলি এটা খবরদারি করতে করে ) ।
যাইহোক, বেছে রাখা মাছ, পেঁয়াজ এবং অন্য সব মাখানোর সময় চালের গুড়া দিবেন। পরিমানটা ঠিক ঠাক বলা যাচ্ছে না কারন আমি ডীপ ফ্রীজে রাখা চালের গুড়া নিয়েছি এবং একটু মাখিয়েছি একটু দিয়েছি। অল্প অল্প করে মেশাবেন আর যখন দেখবেন মুঠো করে চপের আকারে গড়া যাচ্ছে এবং ফেটে যাচ্ছে না তখন চালের গুড়া দেওয়া বন্ধ করবেন। আর এসব উপকরন একটু চটকে চটকেই মাখবেন, আলতো হাতে ঢং করে মাখবেন না।
মাখা হয়ে গেলে ইচ্ছা মত শেপ দিয়ে রাখবেন। এবার একটা প্যানে ভাল মত তেল গরম করে মাঝারি আঁচে চপ ভেজে নিন।
শেষ হয়ে গেল আমার রুই মাছের চপ ভাজা।
আমার বিশ্বাস যে রুই মাছ পছন্দ করেন না সেও খুব মজা করে খাবেন এই জিনিস। আমি ঠিক করেছি আমার আব্বা বাড়ী থেকে আসলে উনাকে খাওয়াবো (যদিও আব্বার কাছে তার মেয়ের হাতের প্রায় সব খাবার-ই অমৃত মনে হয়) !
এটা তো গেল মাছের চপ। যারা এই জিনিস খেতেই চাচ্ছেন না তাদের জন্যে আছে চিকেন ফ্রাই।
আগেই কয়েক টুকরা মাংস রেখেছিলাম চিকেন ফ্রাই খেতে, দুপুরে রান্নার সময় ভাবলাম সেটা নামিয়ে মশলা দিয়ে মেখে রাখি। মাংস পানিতে ভিজিয়ে এই সেই কাজ করলাম। এখনো দেখি মাংস ছুটে না! কী মুশকিল! একটু জোর করে ছুটাতে গিয়ে মাংসের গায়ে যে চামড়া ছিল সেটা গেল ছিড়ে! কেমনটা লাগে ! যাক বেশি রাগ-টাগ না করে মাংস রেডি করায় মন দিলাম। আমাদের রান্না ঘরের জানলার সামনে একটা কাক মোটামুটি নিয়মিত আসে। কোন কা কা শব্দ করেনা, চুপচাপ বসে থাকে। খাবার দিলে কোন দিন খায় কোন দিন আবার খায় না। আবার কেউ না থাকলে জানলা দিয়ে এসে সিংকের উপর রাখা মাছ মাংস ঠোঁটে নেওয়ার সুযোগ ছাড়ে না! যাই হোক আমি সেই জন্যে কাকের উপর নাখোশ নই। ওর রিজিক এভাবেই নিতে বলেছেন আল্লাহ। আর কাক পাখিটাকে বেশির ভাগ মানুষ অপছন্দ করলেও আমার কেন যেন বেশ ভাল-ই লাগে। সুন্দর একটা পাখি। কালোর সাথে ছাই রংয়ের মিশেল, খুব ভাল লাগে। মাংস ধুতে ধুতে ভাবলাম ছিঁড়ে যাওয়া চামড়াটা কাককে দিয়ে দিই। চামড়ার সাথে আরো ছোট দু'এক টুকরা দিলাম।
এবার মাংস মাখানোর পালা। বড় তিন টুকরা মাংস এবং দুইটা পাখনা নিয়েছি আমি। এখানে কিন্তু আমি জড়িবুটি মশলা দিয়েছিলাম। মাংসে আধা চা চামচ পরিমান আদা, এক চা চামচ রসুন, এক চা চামচ জিরা বাটা, পরিমান মত মরিচ গুড়া, আধা চা চামচ জড়িবুটি মশলা দিয়ে মাখালাম। সয়া সস দিয়েছিলাম সসের বোতলের ছিপির এক ছিপি। আরো দিয়েছিলাম ধনে গুড়া। একটা কথা আছে না "সোজা আংগুলে ঘি ওঠে না" আংগুল বাঁকা করতে হয়। আমিও সেরকম চামচ হাতের কাছে না পেয়ে ধনের গুড়ার ডিব্বায় আংগুল চালান করে দিয়েছিলাম! দেখলাম উঠছে না, শেষে আংগুল বাঁকা করলে উঠে আসলো। এক আংগুল দিয়ে দুই বার নিয়ে ছিলাম। তাতে সম্ভবত আধা চা চামচের কম উঠেছে। যাই হোক আপনারা আপনাদের আন্দাজেই দিবেন, সোজা আঙ্গুলে ঘি তোলার চেষ্টা করার দরকার নেই।
সব মেখে-টেখে ঢেকে নরমাল ফ্রিজে রেখে দিলাম। চপের মতই দুপুরের খাবারের পর আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে বিকেল হলে ভাজতে গেলাম। দেখি ভাইয়া বাইরে যাচ্ছে। বললাম আমি এখন চিকেন ফ্রাই ভাজবো (চিকেন ফ্রাই কিন্তু ভাজবো ) খেয়ে যাইস। ভাইয়া বলে চিকেন ফ্রাই আবার ভাজে কেমনে! আচ্ছা আপনারাই বলেন না হয় একটু ভুল বলেছি তাতে চিকেন ফ্রাই ত আর হাংগর ফ্রাই হয়ে যায় নাই তাই না? যাই হোক ভাইয়া চলেই গেল কার ফোন পেয়ে। আমি আমার চিকেন ফ্রাই ভাজায় মন দিলাম।
চিকেনকে কোট পড়ানোর জন্যে চালের গুড়ার অর্ধেক পরিমান কর্নফ্লাওয়ার নিয়ে সামান্য লবন দিয়ে সব ভাল মত মেশালাম। ধরেন চালের গুড়া এক কাপ হলে কর্ন ফ্লাওয়ার আধা কাপ , এই পরিমাপে নিতে হবে। এতে খুব মচমচে হয় এবং অনেক সময় থাকে মচমচে ভাবটা। চিকেনকে ভাল মত কোট পড়িয়ে মানে শুকনো চালের গুড়ায় গড়িয়ে ডুবো তেলে (আসলে মিথ্যা কথা, কম তেলেই ভেজেছি) ভেজে নিলাম। প্রথমে ঢেকে দিয়েছি, ঢাকনা থেকে পানি পড়ে কড়াইয়ে যেই হারে ঠাশ, ঠুশ করে বোমা ফাটল আমি ভেবেছিলাম আজ বুঝি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল আর এই যুদ্ধ আর থামবে না সহসা! আল্লাহ'র রহমতে বোমা ফাটা বন্ধ হলে শেষে ঢাকনা তুলে আল্প আঁচে ভেজে তুললাম।
এই হচ্ছে আমার চিকেন ফ্রাই ভাজা
নটে গাছটি মুড়লো, আামার রেসিপ্পো ফুরলো, তবে কেউ যাবেন না। সব শেষে পায়েশ আছে কিন্তু। এটা আজ সন্ধ্যায় বানানো।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৫