somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাতাসে স্মৃতির ঘ্রাণ!

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেষ দুপুরে ছাদে কাপড় মেলতে গিয়ে শুষ্ক বাতাসে শীতের আগমনী ঘ্রান নাকে আসতেই মন চনমন করে উঠল, বুক ভরে শ্বাস নিলাম। প্রতিটা ঋতুর আলাদা ঘ্রাণ আছে যা ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে টের পাওয়া যায়। এখন প্রতিটা ঋতুই সময়ের আগে চলে আসে সেই ঘ্রাণটুকও টের পাই আমি এই ইট পাথরের শহরে থেকেও। গ্রীষ্মের প্রথম বৃষ্টির সোদামাটির গন্ধ প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। বৃষ্টির পরে কামিনীফুলের ঘ্রাণ নাকে এলে বুঝতে পারি বর্ষাকাল চলছে।
শীতের আগের এবং পরের ঘ্রাণ আমাকে স্মৃতিকাতর করে দেয়। ক্ষেতভরা সর্ষেফুলের ঘ্রাণ আমি এখনো একটু কষ্ট করলেই হয়ত পাবো কিন্তু একটু বেলা বাড়লেই নাস্তা করে নানুর সাথে গামলা হাতে উত্তরের ক্ষেতে যাওয়ার দিন আর ফিরে পাবো না। ফিরে পাবো না নানুর সাথে পা টিপে টিপে পেঁয়াজ গাছ বাঁচিয়ে পটপট করে পেঁয়াজের হাই (পেঁয়াজের কলি) তোলার দিনগুলো। গামলা ভরে হাই তুলে ক্ষেত থেকে বের হবার আগে পেঁয়াজ গাছের ফাঁকে ফাঁকে লাগানো কুমড়ো লতার থেকে বের হওয়া কুমড়ো মোচর দিয়ে ছিঁড়ে নানু বের হতেন আজকের মত শেষ বিধায়। ডিম দিয়ে করা পেঁয়াজ কলির ভাজিতে এখন আর সেই স্বাদ পাইনা তবে স্মৃতিগুলো অমলিন রয়েছে!

বারান্দায় পালংশাক বাছতে ডালা নিয়ে বসতেই নাকেমুখে ঝাপটা লাগল বাতাসের যে বাতাসে ভরা ফসলের মাঠের ঘ্রাণ! মুহুর্তেই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম ফাল্গুনে শীত কম থাকবে তখন মেয়েদের নিয়ে কয়দিন ঘুরে আসবো গ্রামের বাড়ী থেকে। গ্রামের বাড়ী বলতে বাবার বাড়ী! ফাল্গুনে গ্রামে বাতাসে ভেসে বেড়ায় পাকা ফসলের ঘ্রাণ। বাড়ীর উঠোনে উঠোনে পাকা ধনিয়া, খেসারী, মুসুরি, গমের পালা থাকে। বাড়ী গুড়ো থেকে বুড়ো সবাই ব্যস্ত থাকে ফসল তোলার কাজে। শক্তিশালীরা বড় লাঠ দিয়ে পাকা ফসলের পালায় বিশেষ কায়দায় পেটায় যাতে ডালপালা থেকে বীজ নিচে জড়ো হয়, বয়সে বৃদ্ধরাও বসে থাকেন না, খাটো মুগুর দিয়ে অল্প অল্প করে নিয়ে তারাও পিটিয়ে কাজ আগানোয় ব্যস্ত থাকেন, বৃষ্টির আগেই ফসল শুকিয়ে হাটে পাঠাতে হবে কিংবা ঘরের পেছনের মাচার ডোলে তুলতে হবে যে!

আমার দাদীর বাড়ীতে দেখতাম বড় বড় ড্রামে ভরা থাকতো ধনিয়া, বছরে একবার মেঝেতে ঢেলে সেই ধনিয়া খুব আয়োজন করে মাপা হতো, তারপর বস্তায় ভরে ভ্যানে করে হাটে নেওয়া হতো বিক্রির জন্যে। ধনিয়ার কথা বলায় মনে হল কাঁচা ধনিয়া ফুলের কথা! ক্ষেতের পাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় মিষ্টি ঘ্রাণের সাদা ধনিয়া ফুল ছিঁড়ে মুখে পুরে চিবাতে চিবাতে যেতাম! আচ্ছা এখন কী ধনিয়া বুনে না কৃষক? দক্ষিণের ক্ষেতে ধনিয়ার পাশাপাশি বীজের পেঁয়াজ লাগাতেন কৃষক যাকে "কদম" বলত। এক মানুষ সমান পেঁয়াজ কলির মাথায় কদমের মত বড় সাদা ফুল বরাবর ই আমাকে অবাক করতো এখনো খুব শখ ঐ বীজ থেকে কী করে ফসল তোলে তা দেখার! কখনো সুযোগ হয়নি দেখার। আমাকে অবাক করতো লাল হলুদের মিশেলে চমতকার কুসুম ফুলের মাঠ। ছিঁড়তে খুব ইচ্ছে হতো ঐ ফুল কিন্তু বারন ছিল ছেঁড়া কারন এই ফুল থেকে তেল হবে, আমি ফুল ছিড়ে ফেললে ক্ষেতের মালিকের ক্ষতি হবে যে!

কিছু ঘ্রাণ চাইলেও ছুঁতে পারবো না, ফিরে পাওয়া সম্ভব নয় তা আর এটা বুঝেছিলাম সেদিন যখন পূর্ব দিকের জানলা খুললে এক ঝটকায় একটা ঘ্রাণ নাকে মুখে এলো তখন। পরিচিত ঘ্রাণ টের পেয়ে বুক ভরে শ্বাস টেনে বুঝলাম লঞ্চ কিংবা ফেরিতে করে বাড়ী যাওয়ার সময় নদীর মাঝে বাতাসে পেতাম এই ঘ্রাণ! পদ্মা সেতু হওয়ায় এখন আর নদীকে স্পর্শের প্রয়োজন নেই, আর তাই সেই ঘ্রাণ ও পাবো না।

বাতাসে স্মৃতিরা উড়ে বেড়ায়, ছড়িয়ে যায় ঘ্রাণ। ভিন্ন ধরনের স্মৃতির ভিন্ন রং, রয়েছ নানারকম ঘ্রাণ যা পেছনে নিয়ে যায় এক ঝটকায়। প্রচন্ড রকম স্মৃতিকাতর করে দেয়!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:২১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×