
আজ নিশির গায়ে হলুদ। গায়ে হলুদ হয় কিনা তা নিয়ে সবাই শঙ্কিত ছিল কারণ নিশির আব্বা একটু ধার্মিক ধরনের। সবার জোরাজুরিতে উনার অনুমতি পাওয়া গেল তাও আবার ছোট্ট পরিসরে করতে হবে বাসার ছাদের উপরে। বরের নাম রিপন ( প্রবাসী) ব্যবসায়ী, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা পারিবারিক সূত্রে । খুব ছোটবেলায় রিপন মা-বাবার সাথে বিদেশে চলে গিয়েছিল। নিশিআর রিপনের বিয়ে ও বৌভাত সু সম্পন্ন হল। বিয়ের ঠিক এক মাস পর রিপন বিদেশে চলে গিয়েছিল । বখে যাওয়া রিপনের আব্বা ও আম্মা চেয়েছিলেন বাঙ্গালী নারী বিয়ে করে সংসারী হোক রিপন। বিদেশ যেয়ে নিশিকে ফোন করত রিপন । ল্যান্ডফোনেই কথা হতো ,মোবাইল খুব প্রচলন ছিলো না ।
বিয়ের দ্বিতীয় মাসের মাঝামাঝিতে নিশি যখন কনসিভ করলো, সবাই খুশি হলেও রিপন খুশি হয়নি । রিপন আস্তে আস্তে নিশির সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিল। আসলে তখন রিপনের আবার সেই আগের প্রেমিকার (ব্রিটিশ) সাথে পুনরায় সম্পর্ক মেতে উঠেছিল।
এদিকে নিশি যখন অস্থির হলো যে আমার পেপার গুলো তৈরি করে পাঠাও তখন তখন রিপন নিশিকে বুঝালেন পেপার এখনো তৈরি হয় নাই। পেপার তৈরি হতে আরও দেরী লাগবে আর সাত মাস হয়ে গেলে প্লেনে উঠতে দিবে না তোমার এই শরীর নিয়ে এখানে আসার দরকার নাই বাংলাদেশ ডেলিভারি করিয়ে তারপরে তুমি বিদেশে এসো।
রিপন এর আব্বা কিছু আচ করতে পেলেন। নিশির সাথে সব সময় ফোনে খোঁজখবর রাখতেন। এদিকে ডেলিভারির সময় ঘনিয়ে আসছে ধীরে ধীরে রিপন ফোন করে না বললেই চলে, নিশি-ই রিপন কে সবসময় ফোন করে যোগাযোগ রাখে। এদিকে নয় মাসের মাথায় বাচ্চা জন্ম নিল। রিপন এর আব্বা ক্লিনিক বিল আকিকা ও অন্যান্য খরচ বাদে মোটা অংকের টাকা পাঠালেন।
বাচ্চার নাম রাখা হলো মিম। মিমের বয়স যখন চার মাস তখন রিপনের আব্বার চাপের মুখে পেপার গুলো দেশে পাঠাতে বাধ্য হলো রিপন । একাই গেলো বিদেশে নিশি আর মিম। প্রথমেই ধাক্কা খেলো রিপন এয়ারপোর্টে এলোনা । নিশি মনে মনে প্রচন্ড শকড। জিজ্ঞেস করলেন, রিপন কেন এলো না কেন ? রিপনের আম্মা বলল- রিপন খুব ব্যস্ত তাই আসতে পারে নাই। এয়ারপোর্ট আর দেখার আগ্রহ রইল না নিশির । শ্বশুর শাশুড়ির সাথে এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় এলো নিশি। রিপন বাসায় অনেক দেরী করে আসে। নিশিকে দেখে মোটেও খুশি হয় নাই কিন্তু নিজের মেয়েটাকে মীমকে কোলে নিয়ে" মাই বেবি" বলে কেঁদেছিল। বাবার কোলে উঠে হেসে দিল মিম। প্রথম হাসিটা দেখে মনে সত্যিই মায়া জন্মালো রিপনের । ২/৩ দিন নাকি রিপন বাসা থেকে বের হয় নাই,মিমের জন্য । রিপন এর আব্বা নিশিকে বলে , দেখো রিপন সম্পূর্ণরূপে বদলে গিয়েছে মিমের জন্য। রিপন মিমের জন্য পুতুল খেলনা জামা অনেক কিছু গিফট কিনে আনল এবং খুব ভালো আচরণ করতে লাগলো যাকে বলে পুরোপুরি চেঞ্জ।
আসল ঘটনা শুরু এখান থেকেই মনে মনে খারাপ ফন্দি একেছে রিপন। নিশিকিছুতেই বুঝতে পারে নাই খুব বেশি সরল মনেই রিপনকে বিশ্বাস করেছিল।
বিদেশে যাওয়ার দুই মাস পর একদিন রিপন বলল নিশিকে আমি বাংলাদেশের যাচ্ছি ব্যবসার কাজে তুমিও চলো মাত্র ৫দিনের জন্য। যাওয়া-আসা দুইদিন মাঝখানে ৩ দিন । মীমকে নেওয়ার দরকার নেই কষ্ট হবে। ৬-মাসের বাচ্চাকে রেখে আসতে রাজি হলো না নিশি কিন্তু রিপন বোঝাল এরকম সুযোগ আর হবে না তুমি হয়তো আর ৩/৪বছরেও যেতে পারবে না। কি বুঝে নিশি রাজি হয়ে রিপনের সাথে বাংলাদেশে আসলো । ঠিক দুপুর বেলা বাংলাদেশে রিপন আর নিশি আসলো । কোনরকম হাত মুখ ধুয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম না নিয়ে ওই এক কাপড়ে নিশি দের বাসা থেকে বের হয়ে রিপন বলল- খালার বাসায় যাচ্ছি ফিরতে সন্ধ্যা একটু রাত হবে চিন্তা করোনা। যত তাড়াতাড়ি পারি আসবো । রিপন আসলে খালার বাসায় যায়নি ওই মুহূর্তে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে রাতের ফ্লাইট-এ বিদেশের
উদ্দেশ্যে চলে গেল । রিটার্ন টিকেট আগে থেকেই কাটা ছিল।
এদিকে রাতে নিশি খালার বাসায় ফোন করে জানতে পারে রিপন ওখানে যায়নি। সবাই দুশ্চিন্তা করে হাসপাতাল অন্যান্য জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করলো। পরের দিন যখন থানায় ডাইরি করবে তখনই রিপন ফোন করে নিশিকে। কথাগুলো ছিল এ এমন-----তোকে বাংলাদেশ থেকে আমার আব্বা এনেছিল তাই আমি নিজেই তোকে রেখে আসলাম। আর যোগাযোগ করবি না। আমার মেয়ে আমি রেখে দিলাম এ ছাড়া আমার কোন উপায় নাই আব্বার কারণে তোকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলাম আমি তোকে আর রাখব না ।
কথাগুলো বলেই লাইন কেটে দিল এবং নিশি ফিট হয়ে গেল।ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় নিশির পাসপোর্ট নিশির কাছে নেই রিপন নিয়ে চলে গিয়েছে একেই বলে চরম বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণা। যদি বুঝতো নিশি !!!
নতুন করে পাসপোর্ট করে নিশি আবার তিন মাস পর বিদেশে গেল ।
নিশি চাচার বাসায় গিয়ে উঠলো। নিশি কোর্ট -এর আশ্রয় নিয়ে মীমকে ফেরত পেল। তখন রিপন আবার নিশির সাথে সংসার করতে চাইল। নিশি ও রাজি হলো। কিন্তু নিশির চাচা ও আব্বা কেউ রাজি হলেন না। নিশিই রিপনকে ডিভোর্স দিল। এদিকে কোর্ট এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মীমকে রিপন মাসে দুই-তিনদিনের জন্য নিয়ে যেতে পারবে নিজের কাছে। এবং প্রতি মাসে রিপন মীমকে নিজের কাছে নিয়ে রাখে ।
মীমের বয়স যখন এক বছর তখন নিশি আবার বিয়ে হয়। বাংলাদেশ থেকে আসা আপন চাচাতো ভাইয়ের সাথেই । নিশির পরবর্তী বিয়ের জীবন এ বেশ সুখেই আছে । এক ছেলে ও আরো এক মেয়ে হয়েছে নিশির।
রিপন যে মেয়েটার সাথে সম্পর্ক ছিল তার সাথে বিয়ের পর সেখানে ডিভোর্স হয়। পরবর্তীতে রিপন আবার বিয়ে করে বর্তমানে সংসারী ।
মিম মূলত নিশির কাছেই থাকে, আবার রিপনের সাথে নিমের যাতায়াত ও যোগাযোগ আছে একদম নিখাদ বাবা ও মেয়ের সম্পর্ক।
মিম এখন অনেকটা বুঝে। মিম মাঝে মাঝেই একা একা মন খারাপ
করে । মা আছে , পাপাও আছে কিন্তু আমি, মা আর পাপা একসাথে নেই?
এভাবেই চলতে থাকে জীবন । আর ভাবে জীবন টা কেন এমন হলো ??
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১৯ বিকাল ৪:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




