somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যবধান

১২ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পারুল আপা আমাদের সকলের একজন প্রিয় আপা। তিনি সকল ছোটদের খুবই স্নেহ আদর ও আবদার পূরণে একধাপ এগিয়ে থাকতেন। অতি নম্র ও ভদ্র তার কারণে বাড়ির গুরুজনদের কাছে এই আপার অবস্থান ছিল উচ্চাসনে। তিনি খুবই নিম্নস্বরে কথা বলতেন এবং কখনো উচ্চস্বরে হাসতেন না। সময় মত পড়াশুনা, ধর্মীয় কাজ এবং গৃহস্থালি কাজে মা'কে সাহায্য করা সহ সবদিক থেকে তিনি ছিলেন পারদর্শী ও বুদ্ধিমতী।

১৯৯৫ সালে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষ পড়ার সময় উনার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে বিয়ের প্রস্তাব আসে। বলে রাখা ভালো, বরপক্ষ উনাদের পূর্ব পরিচিত এবং দূরসম্পর্কের আত্মীয়। যেদিন বরপক্ষ পারুল আপাকে দেখতে আসেন সেদিনই আকদ বিয়ে হয়। এবং আক্দ বিয়ের পরেই তিনি প্রথম বরকে (সেলিম ভাইকে) দেখেন। আকদ এর রাতেই বর ও বরপক্ষ সকলেই চলে গেলেন কারণ সেলিম ভাইয়ের চাকরিস্থল ঢাকায় উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। এদিকে পারুল আপা সকাল থেকেই নিখোঁজ হয়ে অন্য চাচার বাড়ি গিয়ে উঠলেন কাউকে কোন কিছু না বলে। পারুল আপার এহেন আচরণে সবাই হতভম্ব কারণ উনার অনুমতি নিয়েই বিয়ের আয়োজন হয়েছে।

পারুল আপার বক্তব্য হচ্ছে আকদ এর আগে পারুল আপা পাত্রকে একবারও দেখেন নি, পুরো পরিবারের সবার উপর ভরসা করে মতামত দিয়েছেন। কিন্তু তাই বলে এই ১৮ বছর বয়সের ব্যবধানের লোকের সাথে সারাজীবন কাটাতে হবে! অসম্ভব পারুল আপা এটা কোনোভাবেই মানতে পারছেন না। বিশেষ করে কিশোরী মনে যে প্রভাব পড়েছিল সেই থেকে এতদিনের পারুল আপার এই আচার-আচরণের সাথে একদম বিপরীত একটা পারুল সৃষ্টি হলো।

যেহেতু শুধু কাবিন হয়েছে তাই পারুল আপা তালাক দিতে চান। এই কথা কোনোভাবেই ববা-মাকে মুখোমুখি বলতে পারবেন না এবং বাড়িও আর ফিরে যাবেন না। চাচার বাসায় থেকে চাচা চাচির সাথে এ বিষয়ে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। পারুল আপাকে চাচী জিজ্ঞাসা করেন -

-তোমার কি কারো সাথে সম্পর্ক আছে?
-না
-এখন কেন বয়সের অজুহাত দেখাচ্ছো?
-শুনেছিলাম ১৫ বছরের বড় কিন্তু দেখতে তো ২০ বছরেরও বেশি লাগছে
-ঠিক আছে পারুল, তুমি সেলিমের সার্টিফিকেট দেখে নিও
-সার্টিফিকেট দেখে কি হবে, আমি উনাকে আর গ্রহণ করতে পারবোনা

- দেখো পারুল , বিয়েটা তো ছেলেখেলা নয় আজ গ্রহণ করলাম, কাল বর্জন করলাম এটা সারা জীবনের বন্ধন। পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকলে দাম্পত্য জীবনে বয়স কোনো বড় কথা নয়। বয়স ব্যবধান অনেক কিন্তু দাম্পত্য জীবন সুখের - এমন উদাহরণও কম নেই। স্বামীর সার্বক্ষণিক সহযোগিতা অনুপ্রেরণা আধুনিকতা বা উদারতা এসব গুণ বয়স দিয়ে বিচার করা যায় না।

পারুল আপনাকে যথেষ্ট বোঝানো হলো কিন্তু পারুল আপা নাছোড়বান্দা হয় পারুল আপা মরবে অথবা তালাক দিবে। সাত দিনের মধ্যেই পারুল আপার বর সেলিম ভাইয়ের কাছে খবরটা জানানো হল। মজার ব্যাপার হলো সেলিম ভাই বলছেন “আমাকে শুধু একবার পারুলের মুখোমুখি কথা বলার ব্যবস্থা করে দিন। সেলিম ভাই খোঁজ নিয়ে জেনেছেন এই মেয়ের কারো সাথে কোন সম্পর্ক নেই, তাহলে কেন এমন করছে? সেলিম ভাইয়ের কথা হল পারুল অন্তত একবার মুখোমুখি বসে সেলিম ভাইকে সরাসরি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিক যে “এই বিয়ে পারুল আপা স্বীকার করেন না, তাহলে সব সম্পর্ক শেষ করতে আর বাধা থাকবে না।

পারুল আপাও সরাসরি জানিয়ে দিলেন সেলিম ভাইয়ের সাথে যেখানে সংসারই করবেন না সেখানে কথা বাড়িয়ে আর কি হবে। তিনি নিজের সমস্ত দোষ স্বীকার করেন কিন্তু একই কথা তিনি এত বয়স্ক স্বামীর সাথে মরে গেলেও সংসার করবেন না। এদিকে পারুল আপা দেড় মাস যাবৎ বড় চাচার বাসায় আছেন কারণ উনার আব্বা বলেছেন এই বিয়ে না মানলে তিনি উনাকে আর বাসায় জায়গা দিবেন না। উনার আম্মা লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়ের সাথে দেখা করে আসেন। হঠাৎ একদিন সেলিম ভাই আপার চাচার বাসায় গিয়েছেন মুখোমুখি দেখা করার জন্য কিন্তু সেদিনও আপা অন্যরুমে লুকিয়ে চাচিকে দিয়ে আপ্যায়ন করে সেলিম ভাইকে বিদায় করে দেন।

অনেক নাটকীয় ঘটনার পর এবার এলো সিদ্ধান্তের পালা। সেলিম ভাই স্পষ্ট জানালো উনি নিজেও এই সম্পর্কের বিষয়ে আর আগ্রহী নন। তালাকের দিন তারিখ ধার্য হলো । আপাকে তালাক নামায় স্বাক্ষর করার পূর্বে আপার হাত ধরে উনার আব্বা আব্বা কাঁদতে কাঁদতে বললেন "তুমি আমার অতি আদরের ছোট মেয়ে। সেলিম সম্পর্কে অনেক খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পেরেছি ওর স্বভাব ও চরিত্র ভালো ধার্মিক ধুমপান করেনা। সেলিমের বাবা মারা যাওয়ার পর সেলিমের ভাই বোনের ও মায়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পূর্ণরূপে পালন করে আসছে। সংসারে কিছুটা অভাব থাকলেও সেলিমের যে যোগ্যতা আছে তাতে করে সে একদিন নিজেকে ভালো অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করবে। তোমাকে হয়তো আরো সুদর্শন কম বয়সী পাত্র দেখে আবার বিয়ে দিতে পারবো কিন্তু তুমি সুখী হবে তো? কারও অভিশাপ নিয়ে কখনোই ভালো থাকা যায় না - - - -

পারুল আপা হঠাৎ করে সেদিন আর তালাকনামায় সই করলেন না। পারুল আপা বাবা মায়ের কথা মেনে নিয়ে সেলিম ভাইয়ের কাছে কাছে ক্ষমা চাইলেন।



আজ দীর্ঘ ২৬ বছর একই সাথে পারুল আপা ও সেলিম ভাই একে অপরের পথ চলার সাথী, সুখ দুঃখের সাথী। পারুল আপা ও সেলিম ভাই দম্পত্তির এক মেয়ে এক ছেলে। মেয়ে এমবিবিএস ডাক্তার আর ছেলে ইউনিভার্সিটিত পড়ছে।


গল্প: পারুল আপা ও সেলিম ভাই আমার অতি নিকট আত্মীয়। গল্পের প্রয়োজনে ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে।
ছবি: গুগল হতে সংগ্রহ করা।


সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৬
৩৮টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×