somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাকিম মুহাম্মদ আখতার সাহেবের মাআরেফে মসনবি অবলম্বনে এক টুকরো আফসানা

২৭ শে মে, ২০২২ রাত ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক হিন্দুস্তানি সওদাগরের ছিল নানা জাতের পাখি পুশিবার শখ। ইরাকি এক তোতাপাখি ছিল তার বিচিত্র পাখির সংগ্রহশালার সবচে বেহতরিন সংগ্রহ। তো, তিনি একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন, হিন্দুস্তান থেকে ব্যবসা করিবার উদ্দেশ্যে ইরাকে যাইবেন। বাড়ির সবার নিকট হইতে বিদায় নিলেন তিনি। জানিয়া নিলেন, কার কি প্রয়োজন, কে কি ইরাকি তোহফা আশা করে, সওদাগরের কাছে।

সবার সঙ্গে আলাপ খতম করিয়া সওদাগর গেলেন তাহার প্রিয় তোতা পাখির কাছে। তাহাকে পুঁছিলেন, প্রানাধিক প্রিয় পাখি আমার, তোমার মাতৃভূমিতে যাইতেছি। কি আনিবো তোমার জন্যে, তোমার জন্মভূমি থেকে?

পাখি মৃদু হাসিয়া কহিল, শায়েখ, আমার এতোটুকুই কামনা, যদি কোন তোতাপাখির সঙ্গে আপনার দেখা হয় ইরাক সফরে, তাহাকে, বা তাহাদের আমার তরফ থেকে সালাম পৌঁছাইয়া দিবেন, আর দয়া করিয়া তাদের আমার বন্দিদশার কথা জানাইবেন।

সওদাগর বলিলেন, তথাস্তু।

ইরাকে সওদাগর খুব সফল এক বাণিজ্য সফর শেষে, সবার জন্যে হাদিয়া - তোহফা কেনা শেষে, সওদাগর বাড়ি ফিরবেন যেইদিন, সেইদিন ভোরবেলা, তাহার সরাইখানার বারান্দায় তিনি দেখিলেন, বেশ কিছু তোতাপাখি বসা। ইরাকি তোতাপাখি। তার বাড়ির খাঁচায় বন্দি পাখির জাতভাই।

তোমাদের এক ভাই হিন্দুস্তানে, আমার বাড়িতে খাঁচায় বন্দি। তাহার তরফ হইতে তোমাদেরকে সালাম।

সওদাগরের কথাটুকু বারান্দায় বসা সবগুলো পাখি খুব মনোযোগ দিয়ে শুনিল। তারপর, ঝুপ ঝুপ শব্দে সবগুলো পাখি একসঙ্গে, ঝরা পাতার মতো মরিয়া ঝরিয়া পড়িতে লাগিল বারান্দা দিয়া, নীচে।

সওদাগর হতবুদ্ধি হয়ে বসিয়া রইলো পুরো ঘটনা অবলকন করিয়া। ভ্রাতৃত্ববোধ, সহমর্মিতার কথা তিনি জীবনে শুনিয়াছেন অনেক, কিন্তু এতো তীব্র ভালোবাসা, নিজের স্বজাতির প্রতি, তিনি কখনো শোনেন পর্যন্ত নি, দেখা তো দূরের কথা।

ভারী হৃদয়ে সওদাগর ফিরিয়া আসিলেন হিন্দুস্তান। সবাইকে সবার তোহফা বুঝাইয়া দিলেন। তাহার প্রিয় তোতাপাখির সম্মুখে দাঁড়ইয়া বলিবার মতো কোন কথা তিনি খুঁজিয়া পাইলেন না।

শায়েখ, আমার সালাম পৌঁছানোর ফুসরত হইয়াছিল, আমার ভাইদের কাছে?
তোতাপাখি প্রশ্ন করলো।

করিয়াছিলাম, সওদাগর ভারী হৃদয়ে উত্তর দিলেন। কিন্তু তোমার হালত শুনিবার সঙ্গে সঙ্গে তাহারা সবাই এক সঙ্গে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হইয়া মারা গেলো আমার চোখের সম্মুখে।

সওদাগর কথা শেষ করা মাত্রই তাহার প্রিয়তম তোতাপাখি আসমানের দিকে পা উঁচু করিয়া মরিয়া কাঠ হইয়া পড়িয়া রইল।

সওদাগরের মুখে রা নাই। এ কেমন ভালোবাসা, এ কেমন সহমর্মিতা, এ কেমন স্বজাতবোধ? স্বজাতির শোকের কথা শোনা মাত্রই তাহারা মুহূর্তে প্রাণত্যাগ করে?

শোকসন্তপ্ত হৃদয়ে সওদাগর তাহার প্রিয় পাখির পা জোড়া ধরিয়া ছুঁড়িয়া মারিলেন বারান্দা দিয়া, বাইরের বাগানে। পাখি অনেকক্ষণ সময় নিয়া নীচে পড়িলো, মাটি স্পর্শ করিবে করিবে, এমন সময় সওদাগরের চক্ষু চড়কগাছ করিয়া দিয়ে উড়াল দিয়ে গিয়া বসলো সামনের উঁচু গাছের ডালে।

শায়েখ, প্রিয় তোতাপাখি বলল, শুকরিয়া। আমার সালাম আমার ভাইদের পৌঁছাইয়া দেয়ার মাধ্যমে আপনি আমার মুক্তির সনদ বহন করিয়া আনিয়াছেন তাহাদের তরফ হইতে। না তাহারা মারা গিয়াছিল - আমার বন্দিত্বের কথা শুনিয়া; না আমি মারা গিয়েছি তাহাদের মারা যাওয়ার কথা শুনিয়া। এসবই ছিল আমার মুক্তি লাভের উপায়। খাঁচায় বন্দী অবস্থায় মারা যাওয়ার আগেই মারা যাওয়া, বা অন্তত মারা যাওয়ার অভিনয় করা, যাহাতে আমি পুনরায় মুক্ত বাতাসে উড়িতে পারি।

নিজের নফসকে হত্যা করুন, শায়েখ - শেষবারের মতো মাতৃভূমির উদ্দেশ্যে ডানা ঝাপটানোর পূর্বে তোতাপাখি মুখ খুলিল সওদাগরের প্রতি। অন্তত হত্যা করার অভিনয়টুকুই করুন, যাহাতে খোদার দিকে আপনার রুহ মুক্ত বিহঙ্গের ন্যায় উড়িয়া চলিতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০২২ রাত ১০:১৬
১২টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আদর্শের রাজনীতি না কোটি টাকার হাতছানি...

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:২৫



১. আমি অনেক আগে ব্লগে লিখেছিলাম, বাংলাদেশে ছোট দলগুলো নিষিদ্ধ করা উচিত। উন্নত দেশের মত ২/৩ টিতে থাকাই উত্তম। কারণ, ছোট দলের নেতাদের টকশো-তে গলাবাজি করা ছাড়া আর কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে উড়ে গেল মাদ্রাসার দেয়াল, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৯



ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছেন।

বিস্ফোরণে মাদ্রাসার একতলা ভবনের পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষের দেয়াল উড়ে গেছে। ঘটনাস্থলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তেল আর জল কখনো এক হয় না......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩৫



জুলাই ছিলো সাধারণ মানুষের আন্দোলন, কোন লিডার আমারে ডাইকা ২৪'এর আন্দোলনে নেয় নাই। কোন নেতার ডাকে আমি রাস্তায় যাই নাই। অথচ আন্দোলনের পর শুনি আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড নাকি মাহফুজ। জুলাই বিপ্লবের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্ল্যাং রেভলিউশন: ১৮+ সতর্কবার্তা ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩০


সোশ্যাল মিডিয়ায় আজকে একটা ভাইরাল ভিডিও চোখে পড়লো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সদস্য সালাউদ্দিন আম্মার গণজাগরণ মঞ্চ ৩.০ তে উপস্থিত হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন: দেখতে পাইলে বাকশাল, শা*উয়া মা*উয়া ছিড়া ফেল/... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতাঃ হে বলবান

লিখেছেন ইসিয়াক, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪০

কে আছিস বলবান!
হ্ আগুয়ান।
দে সাড়া দে ত্বরা।
ধরতে হবে হাল,বাইতে হবে তরী, অবস্থা বেসামাল।

জ্বলছে দেখ প্রাণের স্বদেশ
বিপর্যস্ত আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
মানবিকতা, মূল্যবোধ, কৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতির বাতিঘর।
সর্বত্র আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×