মহান রাব্বুল আলামীনের অসংখ্য অগনীত নেয়ামতে আমাদের ঘিরে রেখেছে। যেগুলোর কোন একটির শুকরিয়া আদায় করেও সারা জীবনে শেষ করা যাবেনা। তার মাঝে অন্যতম একটি নেয়ামত হচ্ছে সুস্থতা। সুস্থতার নেয়ামত ভালোভাবে বুঝে আসে অসুস্থ হলে। যখন কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন কোন জিনিসই তাকে আকর্ষণ করেনা। সব কিছুর বিপরিতে সুস্থতা লাভ করাই তার কাছে প্রাধান্য পায়।তাই অসুস্থ হবার পূর্বেই সুস্থতার কদরদানী করা চাই। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “পাঁচটি অবস্থার সন্মূখীন হওয়ার পূর্বেই তার যথাযথ মূল্যায়ন কর -(১) বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পূর্বে যৌবন (২)অসুস্থতার পূর্বে সূস্থতা (৩) দারিদ্রতার পূর্বে স্বচ্ছলতা (৪) ব্যস্তার পূর্বে অবসরতা এবং (৫) মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে মূল্যায়ন কর । (হাকেম, হা-৭৮৪৬)
নেয়ামতের মূল্যায়ন করা চাই
আল্লাহ তাআলা আমাদের তার এতো নেয়ামত দানের উদ্দেশ্য হল, আমরা যেন এই নেয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন ও শুকরগুজারী করি। কোন নেয়ামতের সবচেয়ে বড় শুকরগুজারী হল এর সঠিক ব্যবহার করা। আর এর যথাযথ মূল্যায়ন করা হল ছিনিয়ে নেবার পূর্বেই তা কাজে লাগানো। আমরা সুস্থতার মাধ্যমে যদি আল্লাহ তাআলার বেশি বেশি ইবাদত করতে পারি তাহলে সেটাই হবে তার সঠিক মূল্যায়ন। আর যদি নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার না করি। আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ব্যয় নাকরে মন্দ কাজে ব্যয় করি। তাহলে আমরা অনেক কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হব। যার কোন ক্ষতি পূরণ হবে না। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘দু’টি নিয়ামতের ব্যাপারে অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। (অর্থাৎ এ দু’টি নিয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন না করার কারণে তারা কল্যাণবঞ্চিত) নিয়ামত দু’টি হল ‘সুস্থতা’ ও ‘অবকাশ’।’(বুখারী, হা-৬৪২১)
আল্লাহ আমাদের যে সকল নেয়ামত দিয়েছেন তার সঠিক ব্যবহার না করলে পরকালে জবাবদিহীতা করতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,‘সেদিন তোমরা আল্লাহ তাআলার নিয়ামতরাজি সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’
হাদীসে শরীফে এসেছে- কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে নিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে তা হল, আমি কি তোমাকে একটি সুস্থ দেহ দেইনি? তোমাকে কি ঠান্ডা পানি দ্বারা পরিতৃপ্ত করিনি? অর্থাৎ এই নিয়ামত প্রহণ করে তোমার দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছ? এই প্রশ্নের উত্তর সকলকে দিতে হবে। তাই সুস্থতার এই মহা নেয়ামতকে নষ্ট নাকরে কাজে লাগানো উচিত।
দৈহিক শুকর গুজারীর পাশাপাশি মুখেও সুতস্থা দানের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা করতে বলেছেন (মুয়াত্তা মালেক, হা-৯৭৬)।দৈহিক ও মৈখিক শুকরিয়া আদায়ের পাশাপাশী নেয়ামতের প্রত্যাশী হওয়াও এক পরকার শুকরগুজারী। একারণে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও সুস্থতা চাও…।(আহমদ, হা-৬)
তিনি নিজে সর্বদা সকাল সন্ধ্যা দুয়া করে আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন আমরা আল্লাহর কাছে কিভাবে চাইব।দুয়াটি হল এই,
" اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي، اللهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِي، وَآمِنْ رَوْعَاتِي، اللهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ، وَمِنْ خَلْفِي، وَعَنْ يَمِينِي، وَعَنْ شِمَالِي، وَمِنْ فَوْقِي، وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي "،
(আহমদ,হা-৪৭৮৫)
আসুন আমরাও সকাল সন্ধ্যা এ দুয়া পাঠ করি।আল্লাহ আমাদের তার সকল নেয়া মতের কদরদানী করার তাউফিক দান করুন।আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০১