মেয়ের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন, কিন্তু মেয়ে সবুর করিল না। একাদশ শ্রেণিতে উঠিয়াই তাহার গায়ে তথাকথিত ‘বসন্তের’ বাতাস বহিতে লাগিল। হুমায়ূনের লেখা পড়িতে পড়িতে বেশ পাকনা হইয়া উঠিয়াছে। হিমুর প্রেমে সে মুগ্ধ হইয়া গিয়াছে। ভারতীয় সিরিয়াল দেখিতেও এখন তাহার বেশ লাগে। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার দুর্দশার কথা ভাবিয়া মেয়েটি একখানা প্রেমিক-হিমু জুটাইয়া লইল। প্রেমিক-হিমু কোনো পরিচয় হইতে পারে না। তাই তাহার নাম দিলাম হৈমন্ত!
দিন তাহাদের ভালোই চলিতেছিল। ফুসকা, চিনা বাদাম, আইসক্রিমসহ অন্যান্য লোভনীয় বস্তুর আকর্ষণে তাহারা অনেকটা পথ পাড়ি দিয়া আসিল।
তাহারপর যথসময়ে মেয়েটি পরীক্ষায় গোল্ডেন পাইল। আর হৈমন্ত সিলভার। হৈমন্ত মুখ রক্ষা করিতে গিয়া তাহার রেজাল্ট ধামাচাপা দিয়া গোল্ডেন হইয়া গেল। দুই গোল্ডেন মিলিয়া হীরক হইবার জন্য তাহারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইয়া গেল। চান্স পাইতে তাহাদের কষ্ট হয় নাই। কেননা তাহারা গোল্ডেন।
...মেয়েটি সবুর করিতে চাহিল, কিন্তু হৈমন্ত সবুর করিল না। সিদ্ধান্ত হইল, গোপনে লুকাইয়া-চুড়াইয়া আর তাহারা ভালো বাসাবাসি করিবে না। এখন তাহারা প্রকাশ্যেই প্রেমের মাল-মশলাগুলি দেখাইয়া দিতে চায়। অতপর তাহারা বটতলা, আমতলা চষিয়া বেড়াইতে লাগিল। টিএসসি, মল চত্বর, হাকিম চত্বর, সোস্যাল সায়েন্সের সিঁড়ি কোনোটাই তাহাদের প্রেমের নিদর্শন হইতে বাদ পড়ে নাই। এমনি করিয়া সুখেই যাইতেছিল তাহাদের দিনগুলি। হঠাৎ একদিন মেয়েটি যোগাযোগ বন্ধ করিয়া দিল। তাহার পর অনেকদিন মেয়েটির দেখা পাওয়া গেল না।
একদিন দেখা মিলিল। একখানা লাল রঙের পাজেরো হইতে নামিল মেয়েটি। অপর পাশ হইতে পাজেরোর দরজা খুলিয়া একটা টাকওয়ালা পরুষও বাহির হইয়া আসিল! দুইজনে হাত ধরিয়া হাঁটিতেছিল। এমন সময় সামনে আসিয়া পড়িল হৈমন্ত। টাকওয়ালা তাহাকে চিনিতে পায় নাই। মেয়েটি তাহাকে বন্ধু হিসাবেই পরিচয় করাইয়া দিল টাকওয়ালা স্বামীটির সঙ্গে। হৈমন্ত কিছু বুঝিয়া উঠিবার আগেই তাহারা অনেক দূর চলিয়া গেল। বিদায় জানাইবারও প্রয়োজন মনে করিল না।
শুনিতেছি, হৈমন্তকে পাবনা পাঠাইবার বন্দোবস্ত করা হইতেছে।
![]()
(পুরনো লেখা। তবে সামুতে এর আগে পোস্ট করি নাই। তাই!)
27.6.2014

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


