গত বছরের কথা,আমি তখন দ্বাদশ শ্রেণীর এক ছাত্রকে বাসায় গিয়ে পড়াই।পরিবারটার সাথে আমি খুব মিশে যাই,পড়াশুনার বাইরেও অনেক সময় অনেক বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হত।একদিন কিভাবে যেন মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গটা এসে পড়েছিল।তখন আমার ছাত্র আমাকে যা বলল তাঁর সারমর্ম হল,আমারা যদি পাকিস্তানের সাথেই থাকতাম তাহলে আমরা আরও ভাল থাকতাম এবং অনেক শক্তিশালী থাকতাম। এরপর আমি সময় পেলেই তাঁকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং কেন তা হয়েছিল ও আমাদের উপর পাকিস্তানি হানাদারদের অত্যাচারের দিকগুলো তুলে ধরতাম।ব্যাপারটা আমার মানতে কষ্ট হচ্ছিল যে,স্বাধীনতার ৪০ অছর পরেও কিভাবে স্বাধীন দেশের আলো বাতাস মাটিতে বড় হওয়া একজন মানুষের মনে সেই স্বাধীনতা নিয়েই আক্ষেপ থাকতে পারে! এরপর সে একদিন বলল যে,স্যার আপনিতো তাহলে আওয়ামীলীগ সমর্থন করেন? আমি যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম কেন তাঁর এমন ধারনা হল তখন সে বলেছিল,আমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলি তাই।ঐ ছেলেকে কি দোষ দিব?ওদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, দোষ সেইসব পরিবারের যারা সন্তানদের পিছনে ইংলিশ মিডিয়ামের হাজার টাকার বই কিনে দিতে পারলেও একটা "একাত্তরের দিনগুলি" কিনে দিতে পারেনা,পারেনা সন্তানকে নিয়ে একটাদিন স্মৃতিসৌধ বা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ঘুরে আসতে।আমাদের অনেক মানুষেরই ধারনা, যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলে সে আওয়ামীলীগ অথচ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলতে কোন দলের হওয়ার দরকার নেই, এদেশের নাগরিক হওয়াই যথেষ্ট।এখন মুক্তিযুদ্ধকে ঢাল হসেবে ব্যাবহার করে একদল মানুষ ফায়দা লুটছে আরেকদল মানুষ ফায়দা লুটছে ধর্মকে ব্যবহার করে।প্রকৃতঅর্থে এরা মুখোশধারি ধোঁকাবাজ। ক্যম্পাসে দেখি একটা দল "জয় বাংলা" স্লোগান দিয়ে চাঁদাবাজি করে কোপাকুপি করে আবার শহীদ মিনারে ফুলও দেয় !আরেকটা দল "নারায়ে তাকবির " বলে গাড়িতে আগুন দেয়। কি অদ্ভুতভাবে দলদুটি মানুষের আবেগ ,বিশ্বাস নিয়ে খেলা করছে!আমাদের স্কুল কলেজে ধর্ম নিয়ে খুব ভালকরে জ্ঞান দেয়া উচিৎ তাহলে যারা ধর্মের অপব্যাখ্যা করে নিজেদের ফায়দা হাসিল করছে তাঁরা খুব সহজেই আর কারও মাথা ওয়াশ করতে পারবেনা। একইভাবে যদি আমরা মুক্তিযুদ্ধের কথা ,ইতিহাস আমাদের নতুনদের কাছে তুলে ধরতে না পাড়ি তাহলে মুক্তিযুদ্ধ হয়ে পরবে শুধু বিশেষ দিনগুলিতে বন্দি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১০