somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আশার ছলনে ভুলি অথবা বাগেরহাট হবে ডিজিটাল'এর গল্প...:) :)

১৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার মাত্র কয়েক হাতের মধ্যে জলজ্যান্ত একজন মন্ত্রী বসে আছেন। সেটা মনে পড়তেই কিনা জানি না, আমার হঠাৎ গরম লাগা শুরু হলো। এমনিতেই সকাল দশটার মফঃস্বলী গরমে মাথার উপরের সামিয়ানা ক্রমশঃ তেতে উঠছে, কানের পাশ দিয়ে গড়িয়ে নামছে ঘামের ধারা। ভিতরে ভিতরে আমি উশখুশ করতে থাকি। বুঝি, এটা আমার বাড়াবাড়ি, গুপী গায়েন আর বাঘা বায়েন আমাদের যেভাবে ভাবতে শিখিয়েছে, নিশ্চয়ই সকল মন্ত্রীমশাই মানেই তো আর ষড়যন্ত্রীমশাই নয়...! কিন্ত কি করবো মন্ত্রীতে আমার ভীষন ভয়, (যাঃ বুদ্ধু, মন্ত্রীরা কখনও কামড়ায় না B-))।

আদতে এটা হলো আমার এলার্জি... মন্ত্রী দেখলেই আমার গা চুলকায়, সরকারী আমলা দেখলেই আমার সারা শরীর লালচে দাগে ভরে যায়। এন্টি-হিস্টামিন চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। আসল কথা হলো, সরকারী কোন কিছুই আমার ঠিক ধাতে সয় না।

মনে করার চেষ্টা করি, শেষ কবে কোন মন্ত্রীকে আমি সশরীরে দেখেছি। এ রকম ভাবে মুখোমুখি বসে- মন্ত্রীর মুখ নিঃসৃত বাণী মন দিয়ে শুনেছি। মনে পড়লো না...

ছাপোষা জীব হিসাবে, রাজানুগ্রহ থেকে চিরকালই আমি একটু গা বাঁচিয়ে চলি, (রাজন্যবর্গের তাতে তেমন কিছু যায় আসে না অবশ্য)... এক কালে এ ঘোর বঙ্গদেশে গুটি বসন্ত জল বসন্তের নাম মুখে নেওয়া হতো না। সম্মান দেখিয়ে বলা হতো, মায়ের দয়া। সারা শরীর ভরা মায়ের সে দয়া নিয়ে মানষের প্রাণ হয়ে উঠতো ওষ্ঠাগত। মায়ের দয়ার মায়া কাটিয়ে সুস্থ্য জীবনে ফিরতো, এমন লোকের সংখ্যা ছিলো বিরল। রাজন্যের দয়া আমার মনে তাই আতঙ্ক আনে...

গত রাতে (১লা অক্টোবর) প্রায় ১১টা নাগাদ এই বাগেরহাটে এসে যখন পৌছেছি, CODEC এর গেষ্ট হাউজ ততক্ষনে বিশিষ্ট অভ্যাগত আর তরুনদের কলতানে মুখর। তারপর সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সামিল হয়েছি বিভিন্ন মাপের সব অনুষ্ঠানে। উদ্বোধন থেকে পতাকা উত্তোলন, তারপর মন দিয়ে শুনেছি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য... বিস্তর ছবি তুলেছি, কিন্ত আর কতো...? এখন এ আসর থেকে কেটে পড়তে পারলেই বাঁচি। জ্ঞান উৎসবের এত এত জ্ঞানের কথা, এসব কি আমার পোষায় নাকি?



তৃণমূল পর্যায়ে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তৈরির জন্য নানামূখী উদ্যোগের অংশ হিসাবে জ্ঞান উৎসব-২০০৯; বাগেরহাট ডিজিটাল উৎসব এর আয়োজন করা হয়েছিল। বাগেরহাট জেলাকে ডিজিটাল করার জন্য কি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন তা নির্ধারনের জন্য এ মাসের ২ এবং ৩ তারিখ দুইদিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল — আমাদের গ্রাম নামের একটি উন্নয়ন সংস্থা এবং বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক। পেশাগত কারনে আমার বন্ধুরা দেশের আইটি ইন্ডাষ্ট্রির সাথে ঘনিষ্ঠ, তথ্য প্রযুক্তির নীতি নির্ধারনী যাবতীয় সব বিষয় নিয়ে বরাবরই তারা বিস্তর মাথা ঘামায়, রাতের ঘুম হারাম করে। মিডিয়ায় প্রচারনা চালায়, সরকারের সাথে কুস্তাকুস্তি করে...। তাদের কম্যুনিটির সাথে একাত্মতা থেকে সঙ্গত কারনেই “বাগেরহাট হবে ডিজিটাল, জ্ঞান উৎসব-২০০৯” শীর্ষক এমন একটা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য, আমার এই সব আইটি ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা এসে জড়ো হয়েছেন, বাগেরহাটে। বাগেরহাটে পৌছে দেখলাম CODEC এর গেষ্ট হাউজেই এসে উঠেছেন মোস্তফা জব্বার। সেই সাথে আরও আছেন মুল উৎসবের মুখ্য সঞ্চালক মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার।



তো বাগেরহাট ডিজিটাল কি ভাবে হবে...? এটা নিয়ে দেখলাম সবার ধারনাই বেশ পরিস্কার। সাধারন মানুষের যা দরকারে লাগে এ জাতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য সম্বলিত কয়েকটা ওয়েব সাইট উদ্বোধন করলে,( মাবুদ জানেন, সে সব ওয়েব সাইট কখনও আপডেট এবং মেইনটেইন হবে কিনা /:)) আর ডিসি অফিসের কম্পিউটার গুলো ঝেড়ে মুছে রেডি করলেই। আমাদের মন্ত্রীমশাই দেখলাম কথায় কথায় ছড়া কাটেন এবং কবিতা বলেন। কৃষকের লাঙল ঠেলে কড়া পড়ে যাওয়া হাতে মাউস আর কি বোর্ড তুলে দিলে সেটা যে কি পরিমান কাব্য দ্যোতনা সৃষ্টি করবে এটা উনি আমাদের জানালেন কাব্যের ভাষায়। (জেলেদের জন্য হয়তো উনার ওয়াটার প্রুফ মাউস আর কি বোর্ডের পরিকল্পনা আছে ;) ;) !!!) বস্তুতঃ উনার বক্তব্যে যতটা আবেগ আর ফ্যান্টাসি, সারবস্ত ঠিক ততটাই কম!!

সকাল থেকে পুরো অনুষ্ঠানের যত কিছু চোখে পড়ছে, তার প্রায় সবটুকুতেই এই কাঁচা আবেগের বাড়াবাড়ি রকমের প্রাবল্য। লিফলেট ব্যানার থেকে শুরু করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মন্ত্রীমশাইয়ের বক্তৃতা পর্যন্ত্য, সর্বত্র ছড়ার ছড়াছড়ি।

জ্ঞান বিজ্ঞানে বাগেরহাট, এক্কেবারে ফিটফাট।
উন্নয়নের ধরবে হাল, হবেই হবে ডিজিটাল...


হয়তো সরকারী অনুষ্ঠানগুলো উদযাপনের এগুলোই স্বাভাবিক রীতি। আমার আনাড়ি চোখ বলে তা অস্বাভাবিক লাগছে। হয়তো এভাবে ছড়া কাটলেই তা মানুষকে বেশি মাত্রায় উদ্ধুদ্ধ করতে পারবে। মানুষের কাছে সহজবোধ্য হবে। তাই কি?

অথচ বাগেরহাট শহর ঘুরলেই বোঝা যায়, এ শহরে অন্ততঃ কয়েক শত মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, তাদের মধ্যে লাঙল ঠেলা কৃষক যেমন আছে, তেমনি আছে যাবতীয় প্রযুক্তির আওতার বাইরে থাকা একদম নিরক্ষর মানুষটিও। এখন আমরা যদি মোবাইল ফোনের প্রযুক্তিকে উদাহরন হিসাবে নেই, দেখতে পাবো এই প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করতে কোন প্রচারনা কিন্তু চালাতে হয় নাই, বক্তৃতাবাজি তো নয়ই। কোন প্রযুক্তি যদি আজ নাগালের মধ্যে থাকে, আর তা যদি জীবনে বাড়তি মূল্য যোগ করে, তবে কেন মানুষ তা গ্রহন করবে না? সরকারের উচিত শুধু সেই প্রযুক্তিকে সাধারন মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা।

সেই হিসাবে আজ এই অনুষ্ঠানের শুরুতেই তো হিসাব নেওয়ার কথা — বাগেরহাটের কয়জন মানুষ ইন্টারনেটের নাগাল ধরতে পারে? বিস্ময়ের ব্যাপার, এত বড় মাপের একটা নীতিনির্ধারনী অনুষ্ঠানে এই দরকারী আলোচনাটাই উঠে এলো না, কি ভাবে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে ইন্টারনেটের আওতায় আনা হবে, এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের পরিকল্পনাটা কি? পুরো আলোচনা শেষ পর্যন্ত শুনেও আমরা তা জানতে পারলাম না। — সামগ্রিক ভাবে জেলায় ইন্টারনেট কানেকটিভিটির কি অবস্থা? সারা জেলায় কতজন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার আছেন, তারা কি নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ নিশ্চিত করতে পারেন? ঢাকা থেকে আউট সোর্স করার বিষয়ে আলোচনা উঠলো, কিন্তু স্থানীয় অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়ে কোন আলোচনা হলো না। অথচ এই প্রশ্নগুলোর সদুত্তর থাকলেই — বাকি কাজটা তরুন উৎসাহী উদ্যোক্তারা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারত।

মোস্তফা জব্বার প্রস্তাব করলেন — দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলটা যেন মংলা দিয়ে প্রবেশ করানো হয়, এতে করে নাকি বৃহত্তর খুলনা জেলা সহ পুরো এলাকা উপকৃত হবে। আমি অবশ্য বুঝি নাই, কোন এলাকায় ইন্টারনেট অবকাঠামো নির্মাণ এবং নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ নিশ্চিত করার সাথে সাবমেরিন কেবলের প্রবেশ পথের কি সম্পর্ক? বর্তমানে কক্সবাজার দিয়ে সাবমেরিন কেবল প্রবেশের ফলে কক্সবাজারের তথ্য প্রযুক্তি সেক্টর কি বিশেষ কোন সুবিধা উপভোগ করছে...?


CODEC এর গেষ্ট হাউজ
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির সাথে আমার বন্ধুদের যোগাযোগ আমার তুলনায় অনেক বেশি। স্বভাবতই তারা তাদের জীবনে এই সব তেলেসমাতি আমার চেয়ে অনেক বেশী দেখেছে, তাদের অভিজ্ঞতাও অনেক বেশি। তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে তাদের এযাবৎ কালের অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ প্রায়ই তারা আমাকে শোনায়। বাগেরহাটকে ডিজিটাল বানানোর জন্য আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দক্ষিনাঞ্চলের এই জেলাগুলোতে যে কিছুই পরিবর্তন ঘটবে না, এমনকি দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতে কোন যুগান্তকারী ঘটনাও ঘটে যাবে না — বাগেরহাটের এই অনুষ্ঠানে আসার আগেই তা নিশ্চিত করে আমার বন্ধুরা পুনঃ পুনঃ আমাকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল। ঢাকা থেকে আসার সময় পথে আমাকে সাবধানবানী শোনানো হয়, অনুষ্ঠানে গিয়ে বক্তব্য শুনে আমি যেন আবেগ বিহবল না হয়ে পড়ি, আশার ছলনে ভুলে কল্পনার ফানুষ জ্বালিয়ে আকাশে যেন উড়াতে না থাকি... :P :P

আগামী দশ বছর পরেও যদি এ ধরনের অন্য কোন অনুষ্ঠানে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়, আমি নাকি ঠিক একই ধরনের চিত্র দেখবো, সেই একই কথা, একই প্রতিশ্রুতি শুনবো!! বিগত দশ বছর ধরে বাংলাদেশের মন্ত্রী এবং আমত্যবর্গের এই একই কথা তারা বিভিন্ন ভাষায় শুনে আসছেন!!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ ভোর ৪:২৪
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

বামিঙ্গিয়ান উপাখ্যান

লিখেছেন যুবায়ের আলিফ, ১০ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০




মাঝ রাতে কড়া একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভাঙলো জ্যাকের৷ ঘুমের ঘোরে দেখতে পেল কেউ চোখ ধাঁধানো পোষাক পরে ডাইনিংয়ে একটা চামচ রেখে দরজা গলিয়ে চলে যাচ্ছে৷ গা ও পোষাকের উজ্জ্বলতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×