বিশ্ব এজতেমা এলেই আমার নাজিম ভাইয়ের কথা মনে হয়। লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলমান টঙ্গীর এই তুরাগ নদীর তীরে প্রতি বছর জমায়েত হন, আল্লাহর করুনা আর রহমতের আশায়। বিশ্বভাতৃত্ব আর উম্মার এক বড় উদাহরন হিসাবে অনেকেই হয়তো সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন এই জমায়েত আর শেষের দিনের আখেরি মুনাজাতের জন্য। কিন্ত নাজিম ভাইয়ের জন্য মনে হয় এজতেমার এই সময়টা অন্য রকম। অনেক আক্ষেপ হতাশা আর উপায়হীন অবস্থার মধ্যে কাটানো সকরুণ একটা দিনের দুঃসহ স্মৃতি। সময়টা ছিল এরকমই এক আখেরি মোনাজাতের দিনের... হৃদরোগে আক্রান্ত বাবাকে সিলেট থেকে এনেছেন বিমানে করে, এয়ারপোর্টে রেডি অ্যাম্বুলেন্স, কিন্ত কোন ভাবেই এয়ারপোর্ট থেকে বেরোতে পারেন না। শেষ পর্যন্ত সিভিল এভিয়েশন অথরিটি মরিয়া একটা চেষ্টা চালায়, রানওয়ের পেছন দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটাকে রাস্তা দেবার। কিন্ত সব প্রচেষ্টা পরিণত হয় ব্যর্থতায়। ইতিমধ্যে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল...
বাংলাদেশ তো সব সময়ই নিন্মমানের ব্যবস্থাপনার দেশ। প্রায় সর্বক্ষেত্রেই আমরা প্রতিনিয়ত তার প্রমাণ দিয়ে চলছি। সাধারন রাস্তাঘাটের যানবাহন ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আমাদের দক্ষতার কোন সুখ্যাতি কখনই তেমন ছিল না। আর এর সাথে যখন যুক্ত হয় আমাদের নিয়ম না মেনে চলার অনুশীলন, তখন পরিস্থিতি হয়ে ওঠে মারাত্মক। ফলে খুব সহজেই অনুমান করা যায়, আজ থেকে ১৫/১৬ বছর আগে কি ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে নাজিম ভাইয়ের আব্বা প্রায় বিনা চিকিৎসায় অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে শুয়ে মারা গিয়েছিলেন।
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার আজ ছিল প্রথম দিন। বলা বাহুল্য আমারও এই প্রথম ইজতেমায় যাওয়া। তাও প্রথমদিনের ভিড়, আর সাথে ছিল আমার কিছু সাংবাদিক বন্ধু। ফলে সাহস করে চলে গেলাম, সকাল সকাল মানুষের ভিড় দেখতে। । বিশ্বএজতেমা নিয়ে বরাবরই আমার কৌতুহল ছিল এই কয়েক লক্ষ মানুষের জমায়েতকে কাছ থেকে দেখার। বুঝতে চেষ্টা করা এত এত মানুষ, তাদের জোশ আর উদ্দীপনার উৎসকে। খুব একটা বুঝতে পেরেছি তা বলবো না। এভাবে বাইরে থেকে গিয়ে বোঝাও যায় না।
তাবলীগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবকদের আন্তরিক তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। স্রেফ একটা বাঁশের লাঠি সম্বল করে মুলতঃ তাদের হাতেই লোকজনের চলাচলের নিয়ন্ত্রনের ভার।
একটা মজার জিনিষ দেখলাম- সিভিল ড্রেসে কিছু মুসল্লি পুলিশের ক্যাম্পিং। এটা তাদের ডিউটির অংশ, তাদের কাজ হলো জমায়েতের উপর নজরদারী, টহলদারী এবং অস্বাভাবিক কিছু দেখলে রিপোর্ট করা। এ ছাড়া অন্য ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সাথে তাদের কোন পার্থক্য নাই। বিশাল তাবুর নিচে চড়া রোদে গা এলিয়ে শুয়ে আছে কয়েকজন, বড় বড় হাড়িতে চলছে রান্না বান্না। অর্থাৎ তারা ধর্মেও আছে, তাদের মতো করে জিরাফেও আছে। আমাদের সঙ্গে আলাপ কালে খোলাখুলি তারা জানালেন, প্রতি বছরই এ ধরনের ব্যবস্থা থাকে। পুলিশের মধ্যে যারা ধর্মপ্রাণ তারা অপশন দিলে তাদের এখানে এভাবে ডিউটিতে পাঠানো হয়। তারা কোন অস্ত্র বহন করে না, তাদের কাজ মুলত এলাকায় নজরদারী রাখা-
আজ টঙ্গী এলাকায় ট্রাফিক কন্ট্রোলের যা নমুনা দেখলাম-- সেই যত্র তত্র গাড়ি পার্কিং আর রাস্তা আটকে গাড়ি ঘোরানো... আগামী দুই দিন যে কি অবস্থা হবে এই এলাকার...!!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫৫