
সবে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছি। এর আগেই পাহাড়ে চড়ার পোকা ধরেছিল। তাই পাশ করেই চলে গিয়েছিলাম পাহাড়ে চড়ার স্কুলে—মাস খানেকের জন্য। পরপর দুটো কোর্সেই কেটে গেল চার মাস। মাঝখানে কিছু বিরতিও ছিল। পর্বতারোহণের নেশায় বুঁদ হয়ে আছি, আর বন্ধুরা চাকরির চরকিতে ঘুরছে। আমি এক ট্রেন থেকে আরেক ট্রেনে চড়ে ভারতের প্রান্তর চষে যাচ্ছি।
এমন করেই দু’জনের এক দল নিয়ে চলে গেলাম ভূস্বর্গ কাশ্মীরে। কাশ্মীরের নাম ভূস্বর্গ কেন, তখন জানতাম না। তেমন করে দুনিয়া দেখা হয়নি তখনও। তাই আমিও তখন ভেবেছিলাম, এটাই বুঝি স্বর্গ।
অল্প কটা টাকা নিয়ে এক মাসের জন্য রওনা হয়েছিলাম। পরিকল্পনা ছিল এক পাহাড়চূড়া জয় করার—স্তোক কাংরি নামের এক পর্বত। ঢাকা থেকে কলকাতা, সেখান থেকে চণ্ডীগড়। তারপর বাসে মানালি। মানালি থেকে টাটা সুমো করে লেহ। ঘটনাটা ২০০৪ সালের।
পয়সা বাঁচাতে কত কিছুই না করতে হয়েছিল! একটা ঘোড়াওয়ালাকে ভাড়া করলাম—চারটা ঘোড়াসহ। গাইড নেয়ার সামর্থ্য ছিল না, ঘোড়াওয়ালাই যথেষ্ট ভেবেছিলাম। লেহ শহরের এক প্রান্ত থেকে সাত দিনের ট্রেক। আমি শেষ পর্যন্ত চূড়ায় উঠতে পারিনি, কিন্তু প্রথমবারের মতো ৬০০০ মিটারের কাছাকাছি থেকে কারাকোরাম আর হিমালয়ের সৌন্দর্য একসাথে দেখলাম। কি অবিশ্বাস্য সে দৃশ্য!
এরপর দ্রাস, কারগিলের আর্টিলারি রেঞ্জে কাবাব, শ্রীনগরের ডাল লেক ঘুরে আশ্রয় নিলাম জম্মুর এক আশ্রমে। সেখান থেকে দেরাদুন, তিব্বতি বস্তিতে ১৫ রুপির মোমো। এরপর ট্রেনে কলকাতা, বাসে ঢাকা।
এত আয়োজন, এত যাত্রা—ভূস্বর্গ কাশ্মীর দেখার আশায়। কিন্তু শেষমেশ আমি খুঁজে পেলাম না কাশ্মীর। ম্যাপে তাকিয়ে দেখলাম, কোথাও “কাশ্মীর” নামের কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নেই।
তাহলে কি আমি কাশ্মীরে যাইনি?
স্বর্গও কি দেখিনি?
এরপর আবার ২০১০ সালে, শীতে জমে যাওয়া সিন্ধু নদ হাঁটা। ২০১৫-তে আবার গেলাম নুন পাহাড়ে।
তবুও স্বর্গের দেখা হলো না!




সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২৫ সকাল ৭:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




