somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুনতাসির রাসেল
শব্দ আমার আশ্রয়, চিন্তা আমার পথ। ইতিহাস, সমাজ আর আত্মপরিচয়ের গভীরে ডুব দিই—সত্যের আলো ছুঁতে। কলমই আমার নিরব প্রতিবাদ, নীরব অভিব্যক্তি।

ইশরাক: একক লড়াই, না ষড়যন্ত্রের শিকার?

১৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইশরাক হোসেন বর্তমানে এমন এক রাজনৈতিক জটিলতার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছেন, যেখানে বাস্তবতা, বিভ্রান্তি, প্রতিহিংসা এবং উদ্দেশ্যমূলক ষড়যন্ত্রের সমান্তরাল প্রবাহ চলছে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব দ্বন্দ্ব, সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং ব্যক্তি-কেন্দ্রিক ক্ষমতা রাজনীতির মধ্যে তাঁর অবস্থান এখন প্রশ্নের মুখে।

যে নির্বাচনে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন, সেই নির্বাচনকে বিএনপি পুরোপুরি অবৈধ ও প্রহসন বলেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেই নির্বাচন থেকেই গেজেট আদায়ের লড়াইয়ে নামা এবং নিজেকে "আইনসম্মত মেয়র" দাবি করার কৌশল জনমনে এক ধরনের কনফিউশন তৈরি করেছে। বিএনপির এই দ্বিচারিতামূলক অবস্থান তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়াকে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, তেমনি ইশরাককেও সাধারণ জনগণের আস্থার বাইরে নিয়ে গেছে।

ইশরাকের “মেয়রের সেল” গঠন, নাগরিক অভিযানের ঘোষণা ও ওয়ার্ডভিত্তিক উপস্থিতি—এসব পদক্ষেপকে কেউ দেখছেন প্রতিকী প্রতিরোধ, কেউ দেখছেন আত্মপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে: এই কার্যক্রম কি আদৌ কোনো বাস্তব সামাজিক পরিবর্তন আনছে, নাকি একটি রুগ্ন রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখার জন্য মরিয়া চেষ্টা মাত্র? গণমানুষের চোখে এগুলোর গ্রহণযোগ্যতা ক্রমশ কমছে।

ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরেই নেতৃত্ব নিয়ে অসন্তোষ, অনাস্থা এবং ক্ষমতা ভাগাভাগির গোপন প্রতিযোগিতা চলছে। সেখানে ইশরাক একদিকে জনপ্রিয়তার প্রতীক, অন্যদিকে পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে ঈর্ষার কেন্দ্রবিন্দু। দলে তাঁর জনপ্রিয়তা অনেকের জন্য শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, তাঁকে রাজনৈতিকভাবে একঘরে করা, তলাবিহীন আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেওয়া এবং একটি অযৌক্তিক দাবির পেছনে দাঁড় করিয়ে জনগণের চোখে হাস্যকর করে তোলা—এসবই বিএনপির ভেতরের একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে।

এই ষড়যন্ত্র সুস্পষ্ট এবং বহুমাত্রিক—ইশরাককে যেন ধীরে ধীরে এমন একটি অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যেখানে তিনি দলীয় সমর্থন হারিয়ে ফেলেন, গণআস্থা হারান এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় নেতৃত্ব হিসেবে বিলীন হয়ে যান। এটা প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি বা নতুন নেতৃত্বের জায়গা তৈরির একটি নিষ্ঠুর কৌশলও হতে পারে।

রাজনীতি যখন প্রতীকী চর্চায় আবদ্ধ হয়, তখন তা জনসাধারণের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। ইশরাকের আন্দোলন এখন সাধারণ মানুষ কতটুকু বুঝছে—এটা বড় প্রশ্ন। মানুষ দেখতে চায় নেতার কার্যকর অবস্থান, সংকটমোচনের সামর্থ্য। কিন্তু একজন 'গেজেটপ্রাপ্ত মেয়র' হিসেবে প্রতিদিন লাইভে এসে ঢাকার সমস্যাগুলো দেখিয়ে দেওয়া, অথচ সমাধানে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো না থাকা—এই কর্মকাণ্ড ধীরে ধীরে একধরনের আত্মপ্রচারে রূপ নিচ্ছে। ফলত, ইশরাক নিজেই নিজের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস করছেন।

বর্তমানে ইশরাক যে রাজনীতি করছেন, তা না গণ-রাজনীতি, না সাংগঠনিক রাজনীতি—বরং একধরনের আত্মরক্ষামূলক অবস্থান। যেটি তাঁকে বাস্তবে আরও একা, আরও দুর্বল, আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। তাঁর উচিত ছিল রাজপথের পরিবর্তে সংগঠন ও নীতিনৈতিক অবস্থানকে পুনর্গঠন করা। কিন্তু এখন তাঁর কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, তিনি যেন নিজের ধ্বংসকে ত্বরান্বিত করছেন।

এই সময়ের এই আন্দোলন—যা তিনি নিজেকে “আইনি বৈধ মেয়র” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার নামে চালাচ্ছেন—তা কেবল এক রাজনৈতিক বালখিল্যতাই নয়, বরং তা তাঁর রাজনৈতিক পতনের প্রক্রিয়াকে আরো তীব্র করে তুলছে। জনমনে এটি সৃষ্টি করছে বিরক্তি, আর দলীয়ভাবে তিনি হয়ে পড়ছেন এক নিঃসঙ্গ প্রতীক।

আজ ইশরাক হোসেন কেবল একজন ব্যক্তি নন, বরং একটি ভেঙে পড়া রাজনৈতিক কাঠামোর ভেতর থেকে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার ব্যর্থ প্রচেষ্টার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। বিএনপির অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, ঈর্ষা এবং নেতৃত্ব হরণের খেলায় তিনি যেন এক কৌশলগত বলি।

আদর্শের মুখোশে মোড়ানো যে গোষ্ঠীগত কৌশল তাঁকে ধীরে ধীরে জনবিচ্ছিন্ন, দলে একঘরে এবং রাজনীতির প্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে—তার প্রমাণ আজকের এই অদ্ভুত আন্দোলন। এটা নেতৃত্বের লড়াই নয়, এটা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার মরিয়া আর্তি।

এই আন্দোলন এখন আর রাজনৈতিক দাবির নয়, বরং এক রাজনৈতিক আত্মহননের পর্ব, যার পরিণতি হতে পারে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের চূড়ান্ত পতন। প্রশ্ন এখন আর ইশরাকের অবস্থান নিয়ে নয়—প্রশ্ন বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্মাণ কৌশল নিয়ে, যেখানে প্রতিযোগিতা নয়, প্রস্থানই একমাত্র পরিণতি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ১০:২৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×