somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাট, বদলে দিতে পারে বাংলাদেশঃ

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার এক বন্ধু ইন্জিনিয়ার, আইইবিতে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছে, কিছুদিন আগে আমাকে এক সেমিনার ব্যাগ উপহার প্রদান করল।ব্যাগটি নাইলন কাপড়ের তৈরী। তাকে আমি বললাম যে তোদের আইইবিতে প্রচুর সেমিনার বা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে, সেখানে আগতদের ব্যাগ প্রদান করার হয়। সেখানে জুট ব্যাগ প্রদান করা শুরু কর। জুটের যে ব্যাগ তৈরী হয় তা সে জানতো বলে মনে হল না। আর আমার প্রস্তাবও তার কাছে মনপূত হল বলে মনে হল না। অথচ দেশে এখন পাট থেকে বিভিন্ন প্রকার ব্যাগ, কুশনের কভার, গৃহস্থালি সামগ্রীসহ বিভিন্ন নতুন নতুন পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত পাটের কাপড় থেকে বেসরকারি উদ্যোক্তা ও কিছু বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) বহুমুখী পাট পণ্য তৈরি করছে। ওই পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। পরিবেশ সচেতনতার কারণে ইউরোপ ও আমেরিকায় পাটের ব্যাগ ও অন্যান্য পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এগুলো দামেও কম। ফলে রপ্তানি আয় প্রতিবছরই বাড়ছে। পাট রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম। বিশ্বের সেরা মানের পাট বাংলাদেশে হয়। এ দেশের তোষা পাট থেকে তৈরি হয় সবচেয়ে ভালো মানের পাট সুতা।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশের একজন কৃতি সন্তান প্রয়ত মাকসুদুল আলম পাটের জিনোমি আবিষ্কার করে দেশকে এক অমূল্য উপহার প্রদান করে গেছেন। এখন প্রয়োজন রাষ্ট্রের কিছু করার।আমরা পাটের বাজারজাত করণের জন্য বিদেশিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। অথচ দেখছিনা আমাদের দেশেই রয়েছে ১৬ কোটি মানুষের বাজার। কয়েকটি আইন তার সঠিক ‍প্রয়োগ, কিছু মোটিভেশন এবং সামান্য দেশপ্রেম যুক্ত হলে এ দেশেই তো পাটের একটা বিশাল বাজার গড়ে উঠতে পারে। যেমন ২০১০ সালে এই সরকার পন্যের মোড়ক হিসাবে পাটের ব্যবহার এর জন্য আইন করেছে। তার কোন প্রয়োগ নেই। নেই আইন বাস্তবায়নের কোন উদ্দোগ। অথচ আমরা বাজার থেকে যে চাল কিনি তা আমাদের দেশে উৎপাদিত হয়। তার মোড়ক হিসাবে আমরা দেখতে পাই পলিপ্রোপাইলিন ব্যাগ। বাজারজাতকারীরা আইন মানছে না। এখানে কঠোরতা প্রয়োজন। পলিপ্রোপাইলিন ব্যাগ এবং এর জন্য কাচা মাল আমাদের বিদেশ থেকে আনতে হয় বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে। অথচ পাটের ব্যাগ ব্যবহার করলে দেশের উপকার হয়। বাঁচে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয়।বেশ কয়েক বছর আগে পলি ব্যাগ নিষিদ্ধ করে পাটের ব্যাগের ব্যবহার করার একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। তখন বাজারে পাটের তৈরী বাজারের ব্যাগ কেনা যেত। এখন আর পাওয়া যায় না। আবার বাজারে কৃত্তিম তন্তুর ব্যাগে ভরে গেছে। কেন পাটের বাজারের ব্যাগকে সহজলোভ্য কারা যায় না? আমি জুট রিসার্চ ইনিষ্টিটিউটে কম দামের পাটের ব্যাগ তৈরী করা দেখেছি। সেটি ব্যাক্তি পর্যায়ে উৎপাদন এবং বাজারজাত করা হয় না কেন?

৭০ দশকের প্রথম দিকে বিজেএমসি থেকে একটি পাটের কাপড় আমি দেখেছিলাম। তা দিয়ে লোকজন কোট বানিয়ে পরতো। যদিও তা যথেষ্ঠ উন্নতমানের ছিল না। তবে আরো গবেষনা করে এটাকে উন্নত করা যেত বা করা যায়। যেমন এখন হ্যান্ডলুমে পটের তৈরী সুন্দর সুন্দর কাপড় তৈরী কার হচ্ছে। যা দিয়ে এখন আকর্ষণীয় পাটে পন্য তৈরী হচ্ছে। সরকারীভাবে খুব সহজে এই কাপড় বাজারজাত করা যায়। যেমন দেশে ক্ষমতায় যায় দুটি দল, তারাই সরকার গঠন করে। আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি। এই দুই দলের প্রধান দুই নেতার একজন শেখ মুজিবর রহমান জনপ্রিয় করেছেন মুজিব কোট আর জিয়াউর রহমান ‍করেছন সাফারী। দেশব্যাপী এই দলের নেতা কর্মীরা মুজিব কোট এবং সাফারী ব্যাবহার করে। এই দুটি দল যদি সিদ্ধান্ত দেয় যে মুজিব কোট এবং সাফারীর কাপড় হতে হবে পাটের তৈরী কাপড়। তাহলে কি পাটের কাপড়ের একটি বিশাল বাজার হবে না? এখানে প্রয়োজন দলের নেতাদের দেশপ্রেম।

আমি বিজেএমসিতে একটি ফাইল কভার ব্যাবহার করতে দেখেছি যা পাঠের তৈরী। এটি খুব মজবুত, টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী। এটি বিজেএমসি তৈরী করত। এই ফাইল কভারটি কাগজের ফাইল কভার থেকে একটু দাম বেশী । তবে কাগজের ফাইল কভারের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী বিধায় হিসাব করলে এর ব্যবহারিক মূল্য কম পড়ে। সরকারী অীফস আদালতে লক্ষ লক্ষ কাগজের ফইল কভার ব্যবহার হয়ে থাকে। এই ফাইল কভার এর বোর্ড এবং কাচা মাল পূরোটাই বিদেশ থেকে আসে। অথচ সরকারী অফিসে পাটের তৈরী ফাইল কভার ব্যবহার ব্যধ্যতামূলক করা যায় তবে এর ব্যবহার বেড়ে যাবে। এবং পাটের ফাইল কভার প্রস্তুত পদ্ধতি যদি ব্যাক্তি মালিকানায় দিয়ে দেয়া যায় তবে এর মূল্য প্রতিযোগীতা মূলকভাবে কমে আসবে। সরকারী অফিসের দেখাদেখি বেসরকারী ভাবে এর ব্যবহার শুরু হবে। তাহলে আমাদের কাগজের ফাইল কভার এর জন্য প্রচুর বৈদে‍শিক মুদ্রা ব্যায় করতে হবে না।বৈদেশিক মুদ্রা বাচর সাথে সাথে পাটের ব্যবহার বাড়বে। আমি বিজেএমসি‍র শো রুমে পাটের তৈরী একটি কাপড় দেখেছি যেটা দিয়ে দেয়াল এর রং এর পরিবর্তে দেয়ালে পেষ্টেং করে লাগালে সুন্দর দেখা যায়।এই কাপড় আবার নোটিশ বোর্ড এ লাগানো যায়।এই কাপড় যদি ব্যাধ্যতামূলক ভাবে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রি, মন্ত্রি এবং সরকারী কর্মকর্তাদের রুমে ব্যবহার করানো যায় তাহলে পাটর ব্যবহার ব্যপকভাবে বাড়বে। এর জন্য শুধু প্রয়োজন একটু দেশপ্রেম এবং প্রয়োগের দক্ষতা। এইটুকু আমরা সরকার, কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আশা করতে পারি না? এছাড়া পাটের অনেক ব্যবহার আছে যা সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে এ‍ দেশেই পাটের একটা বিশাল বাজার হবে। বিদেশীদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। বাঁচবে বৈদেশীক মূদ্রা। বাড়বে কর্মসংস্থান।

তাই সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ আসুন আমারা পাটের ক্ষেত্রে একটু দেশপ্রেমিক হই।তাই সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ আসুন আমারা পাটের ক্ষেত্রে একটু দেশপ্রেমিক হই। আমাদের সকলের তো কিছু করার আছে। বি‍শেষ করে যারা ক্ষমতায় থাকেন বা আসবেন এবং রাজনৈতিক দলগুলির। পাটের এই বিশাল বাজারকে আমরা কাজে লাগাই। একটু দেশপ্রেম দেশের চেহারা বদলে দিতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০৯
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×