-------মুসফেক-উস-সালেহীন উজ্জ্বল
জাতির উৎকর্ষতা বিচারের প্রধান উপায় হল তার সংস্কৃতি আর সংস্কতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল ভাষা । আমরাই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি ,আমাদের ভাষাকে সম্মান দিয়ে বিশ্ব ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । ভাষা আন্দোলনের ষাট বছর পর নতুন প্রজন্মের কাছে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব কতখানি? বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির কতখানি তাদের জীবনে প্রতিফলিত হচ্ছে? তারা ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ ,গর্বিত নাকি তাদের কাছে ভাষা আন্দোলন একটি গল্প বা ফেব্রুয়ারি সাদা-কালো ফ্যাশনের একটি মাস ?
বর্তমান প্রজন্ম যে কয়েকটি মাধ্যমকে তাদের জীবনাচরনের আদর্শ মনে করে তার মধ্যে অন্যতম হল নাটক,হিন্দি সিনেমা ও সিরিয়াল, গান,বই,এফ এম রেডিও এবং ইন্টারনেট।
অনেক তরুণ মনে করে কথার মাঝে ইংরেজি শব্দ না আনলে স্মার্ট হওয়া যায় না, তাই তারা কথায় কথায় অপ্রয়েজনীয় ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করছে। প্রমিত বাংলার সঙ্গে আঞ্চলিক ভাষার মিশ্রণে অদ্ভুত নাট্যভাষা এখন চালু আছে টিভি নাটক ও সিনেমাতে। । এবার আসি এফএম রেডিও গুলোর ভাষা বিকৃতির বিষয়ে, কথা বলতে গিয়ে চিবিয়ে কথা বলার ভান, বাংলাভাষায় অহেতুক টান দেওয়া, বিনা প্রয়োজনে ইংরেজি শব্দ এনে দ্রুতগতিতে কথা বলতে বলতে হঠাৎ আসেÍ কথা বলা । হিন্দি সিরিয়াল ও সিনেমার প্রভাবে বাড়ির ছয় বছরের শিশুটি তার বসার কাজের মেয়ের সাথে হিন্দিতে কথা বলে । এমনকি বাংলা মিডিয়াতেও হিন্দি শব্দ ব্যবহার করা জগাখিচুড়ি মার্ক্ াঅনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। সম্প্রতি ব্যবহৃত হচ্ছে আরো কিছু অকথ্য হিন্দি(অশিক্ষিত বা বস্তির মাস্তনদের ব্যবহৃত) শব্দ । আর এই অদ্ভুত ভাষা প্রয়েগ করছে তরুণ প্রজন্ম । ব্লগে যারা লিখেন তারা সভ্য সমাজের শিক্ষিত ব্যাক্তি। ব্লগেও পাওয়া যায় ভুলে ভরা ও আঞ্চলিক ভাষার লেখা । আর ফেসবুক, অনলাইন চ্যাটিং,মোবাইল ফোন এস এম এস-এ বাংলার অবস্থা সবচেয়ে করুণ । কিছুকিছু অদ্ভুত ভাষার বই দেখলে মৌলিক বাংলা পালিয়ে যায় । বইমেলায় এসব বইয়ের বিক্রি অনেক ভাল কারণ ক্রেতা তরুণরাই ।
তাই তরুণরা কখনও ইংরেজির বা হিন্দির সঙ্গে বাংলা মিশিয়ে কখনোবা আর জে দের মত চিবিয়ে চিবিয়ে প্রমিত বাংলার সঙ্গে নিজের মতো করে মেশাচ্ছে আঞ্চলিকতা। বাংলা হারাচ্ছে এর সৌন্দর্য ও সকিয়তা ।
তাই বলে ইংরেজি বা অন্য ভাষা যে শেখার গুরুত্ব নেই তা নয়, ইংরেজি তো আমাদের শিখতেই হবে, আমরা ইচ্ছা করলে অন্য ভাষাও শিখতে পারি তবে তা বাংলাতে বিকৃত প্রয়োগ করে নয়।
এ থেকে আমাদের বর্তমান ও আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য বুদ্ধিজীবী ও সচেতন মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। নতুন প্রজন্মকে বোঝাতে হবে একুশের চেতনা, জানাতে হবে ভাষার গৌরবময় ইতিহাস। তথাকতিথ স্মার্ট হওয়ার ও ভাষা বিকৃতির কুফল তাদের জানাতে হবে। মুনাফার জন্য যে লখক-প্রকাশক ভাষাকে বিকৃত করে তাদের প্রতিহত করতে হবে । রেডিও, টিভির অনুষ্ঠান ও ব্লগারদের উচিত মৌলিক বাংলাকে বিকৃতি থেকে বাঁচানো । মাতৃভাষা প্রত্যেকের জন্মগত অধিকার। ভাষা বিজ্ঞানীদের মতে ”প্রতি দশ বর্গকিলোমিটার অন্তর মৌখিক ভাষার পরিবর্তন হয় ” তাই বলে মান
ভাষা যেন বিষাক্ত হয়ে না পড়ে । প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন পায় প্রমিত বাংলা ।
ইউনেস্কোর মতে বিশ্বে ভাষা মোট ৬৯১২ টি এবং প্রতি ১৪ দিনে একটি করে বিলুপ্ত হচ্ছে । তাহলে আমাদের ভাষার কত দিন বাকি আছে সেটা আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ৯:৩২