পটুয়াখালীর বিভিন্ন পয়েন্টে পাঁচশ’ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার খাজুরা-মাঝিবাড়ী ও মিরাবাড়ী পয়েন্টের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ পুরোপুরি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। বাঁধটির অধিকাংশ এলাকায় ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনো সময় বাঁধটি ভেঙে প্লাবিত হতে পারে বিশাল এলাকা। ফলে দিনরাত আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে ওই এলাকার হাজার হাজার মানুষকে।
বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই উল্লিখিত বেড়িবাঁধটির ঝুঁকিপূর্ণ এ পয়েন্টের অধিকাংশ স্থান ভেঙে সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধটির বিভিন্ন জায়গায় ফাটলসহ বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন জোয়ারের সময় ঢেউয়ের আঘাতে বাঁধটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে প্রতি অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারের সময় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকার মানুষ। বাঁধটি রক্ষা করতে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু সঠিক তদারকির অভাবে ব্লক ফেলার কিছুদিনের মধ্যেই ফের বাঁধটির পশ্চিম দিক থেকে ভাঙন শুরু হয়। গত ১৫ দিনে বাঁধের পশ্চিম পাশের এক-তৃতীয়াংশ বিলীন হয়েছে। বাঁধের ওপরের অংশে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় ফাটলের।
কুয়াকাটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪৮নং পোল্ডারের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের খাজুরা-মাঝিবাড়ী পয়েন্টটি সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এলাকাবাসী জানান, ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলায় ফুঁসে ওঠা জলোচ্ছ্বাসে বাঁধের ওই পয়েন্ট বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সিডরের পর ভাঙন রোধে ওই পয়েন্টে সিসি ব্লক ফেলার জন্য দরপত্র আহ্বান করে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তিন কোটি ৭৫ লাখ টাকার কাজটি পায় ঢাকার পদ্মা অ্যাসোসিয়েটস নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দরপত্র শিডিউলে বাঁধের বাইরের ওই পয়েন্টে এক হাজার ফুট সিসি ব্লক ফেলার কথা। প্রতিটি সিসি ব্লক দুই ফুট দৈর্ঘ্য ও দুই ফুট প্রস্থের এবং দেড় ফুট দৈর্ঘ্য ও দেড় ফুট প্রস্থের। কিন্তু ব্লক তৈরি এবং ফেলায় অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এ বাঁধটি এখন হুমকির মুখে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। তাদের আরও অভিযোগ, পাউবো কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে।
পশ্চিম কুয়াকাটার এলাকাবাসী জানান, বাঁধটির যে অবস্থা তাতে মাঝারি ধরনের বন্যা বা অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারে সাগরে পানি বেশি হলে ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙে যেতে পারে বাঁধটি। এতে প্লাবিত হবে বিস্তীর্ণ এলাকা। এলাকার একাধিক মানুষের অভিযোগ, কুয়াকাটা রক্ষা বাঁধের ওই পয়েন্টটি হচ্ছে সাগর মোহনায়। ফলে সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে এই স্থানটি বারবার ভাঙনের কবলে পড়ে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আলহাজ মাহবুবুর রহমান জানান, শুধু বেড়িবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ নয়, কুয়াকাটাসহ গোটা উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার্থে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে, যার অংশ হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ ওই স্পট রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জরুরি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কুয়াকাটা শরীফপুর রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ওয়ালিউল্লাহ হানিফ বলেন, ‘আসলে এভাবে ব্লক ফেলে সমুদ্রের ভাঙন রোধ করা যাবে না। মাটির ২০-২৫ ফুট গভীর থেকে আরসিসি ঢালাই দিয়ে গাইডওয়াল তৈরি করা হলে ভাঙন রোধ হবে।’
এ ব্যাপারে পাউবোর কলাপাড়া উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মইনুল ইসলাম জানান, এরই মধ্যে খাজুরা-মাঝিবাড়ী পয়েন্ট থেকে পশ্চিম দিকে ৮৪০ মিটার ও মিরাবাড়ী পয়েন্ট থেকে পূর্ব দিকে ৫৪০ মিটার ভাঙন রোধে নতুন করে দরপত্রের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। শিগগিরই কার্যাদেশ দেয়া হবে। তৈরি করা ব্লকের নিম্নমানের বিষয়ে তিনি বলেন, কাজ ভালোই হয়েছে। বেশি লবণাক্ততা ও ঢেউয়ের ঝাপটায় ব্লকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




