somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একবার আমাদের লাল সবুজ পতাকা টা বুকে জড়িয়ে চিৎকার করে বলেই দেখ বাংলাদেশ, তোমার হৃদয় উচ্ছসিত হবেই হবে

২৩ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার আজকের লেখাটা বাংলাদেশে জন্ম নেয়া ভিনদেশী পতাকা উত্তোলনকারী ক্রিকেট প্রেমীদেরকে উৎসর্গ করলাম।


আজকে খুব মনে পরছে আমার ইউনিভার্সিটি জীবনের এক রুম মেটকে। ক্রিকেট প্রেমী বললে কম বলা হয়ে যায়। ফাইনাল পরীক্ষার আগের রাতে ৪ টা পর্যন্ত খেলা দেখা পাবলিক। সেদিন ওকে খুব বকা দিয়েছিলাম। ক্রিকেট খেলা মানুষ দেখে। কি লাভ হয় সারাদিন-রাত বসে বসে খেলা দেখে?

আমি ক্রিকেট খেলা একদম পছন্দ করতাম না, এমনকি যারা ক্রিকেট খেলা দেখত তাদেরকেও পছন্দ করতাম না। আমি জানিনা আমার সেই বন্ধুটি আজ এই লেখাটা পড়ছে কিনা তবুও বলছি - বন্ধু কিছু মনে রাখবি না তোকে অনেক বকা দিয়েছি, ক্ষমা করিস।

আজ আমি সেই আমিই আছি, শুধু পরিবর্তন হয়েছে আমার কিছু চিন্তাধারা, পছন্দ-অপছন্দ। আজ আমি একটানা বসে ক্রিকেট খেলা দেখি।

এশিয়া কাপে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ফাইনাল খেলা। আমি আমার বউ, সাথে কয়েক বন্ধু। ওদেরকে খেলা দেখার আমন্ত্রন করেছিলাম। স্টেডিয়ামে যাওয়া হয়ে ওঠেনি - হয়তবা এখনও এতটা প্রেমে পড়িনি অথবা ৪০০ টাকটার টিকেট ব্লাকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি হওয়ায় সামর্থহীনতায়।

বাংলাদেশ টসে জিতে ফিল্ডিং নেয়ায় আমরা সবাই খুব খুশি হলাম। আমাদের একটা ব্যাপার হল - সামনে কোন টার্গেট থাকলে সেখানে চেষ্টা করে পৌছাতে পারি।

ধির গতিতে খেলা চলছে। হঠাৎ পাকিস্তানের প্রথম উইকেটের পতন হল। আমি নিজের অজান্তেই লাফিয়ে উঠেছি। একটু পর খেয়াল করলাম আমাদের মাঝ থেকে একজন পাশের রুম এ গিয়ে বসে আছে। সময় যেতে না যেতেই দ্বিতীয় উইকেটের পতন। এবার আমাদের মাঝে সে ফিরে এসেছে - তবে তার চেহারায় কিছুটা বেদনার ছায়া পড়েছে। আমার সন্দেহ পরিষ্কার হয়ে গেল যখন তাকে জিঙ্গাসা করে জানতে পারলাম - সে চাচ্ছে পাকিস্তান জিতুক।

সবাই মিলে প্রথমে সিদ্ধান্ত নিলাম তাকে বাসা থেকে বের করে দেবো। বউয়ের অনুরোধে এবেলা যদিও মাফ করলাম এই ভেবে যে অতিথিকে অসম্মান করতে নেই তবে শর্ত দিলাম আমাদের সাথে খেলা দেখতে হলে বাংলাদেশের সাপোর্টার হতে হবে। জোর করে হলেও আমাদের সাথে হাসতে হবে, উচ্ছসিত হতে হবে। বেচারা অন্তত তার প্রিয় দলের খেলাটা দেখার খাতিরে শর্ত মেনে নিল, তাছাড়া রাতের খাবারের লোভটা সে সামলাতে পারলোনা - কারন আমার বউ আবার খুব সুন্দর রান্না করে ;)

যাই হোক খেলা চলতে থাকল, সাথে থাকল আমাদের উচ্ছসিত হৃদয়, আর ওর মনের কষ্ট প্রকাশ করতে না পারার যন্ত্রনা। এরই মাঝে ৩৩ রান হতে না হতেই পাকিস্তানের ৩ টি উইকেটের পতন। বুকের ভিতরটা বারবার যেন নেচে উঠছিল।

এভাবেই উচ্ছাস আর উৎকন্ঠার মাঝে শেষ হল প্রথম ইনিংস।

হাল্কা নাস্তার আয়োজন হলো, আর হলো কাপ জেতার পর আমরা কি করব তা নিয়ে প্রাণখোলা আলোচনা।

বাংলাদেশ খেলা শুরু করল। শুরুতে একটু ধির গতিতে রান নিচ্ছিল। টেনশান ছিলনা একটুও - আমরা জিতে যাচ্ছিই, ধিরে ধিরেই খেলুক। খেলা যতই শেষের দিকে যায় উত্তেজনা ততই বাড়তে থাকে। এর মাঝে আর সেই বন্ধুটির দিকে খুব বেশী নজর দিতে পারিনাই। তবে মনে হচ্ছিল সে খুব কষ্ট করেই আমাদের আনন্দের সাথে তাল মিলাচ্ছিল।

আর মাত্র ২ ওভার, রান নিতে হবে ১৯ - সাহস রাখছি বুকে, আমরা জিতে যাচ্ছি। রক্তচাপ যেন ধিরে ধিরে বেড়ে যাচ্ছে। একবল একবল করে চলে যাচ্ছে আর আমার হার্টবিট বাড়ছে।

আহ :((:((:((:((:((:((:((:((:((

এভাবে আমরা হেরে গেলাম /:)/:)/:)/:)
মনটা বিষণ্ন হয়ে গেল। আমার মুখ থেকে যেন কথা বেরোচ্ছে না। আমার বুক ফেটে কান্না বের হয়ে আসছে। টিভি অফ করে দেব এমন সময় সাকিবের অশ্রুসজল চোখে চোখ পড়ে গেল । মনটা আরো ভারী হয়ে গেল
/:)/:)/:)/:)/:)/:)/:)/:)/:)/:)/:)/:)


হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার সেই বন্ধুটির চোখে জল। আমি অবাক হয়ে গেলাম, কিভাবে সম্ভব। ও পাকিস্তানের গোড়া সাপোর্টার। ওকে জিঙ্গাসা করায় যে উত্তরটা দিল তা ঠিক এরকম -

"আগে কখনও এভাবে ভাবিনিরে দোস্ত। খেলাকে কেবলই খেলাই মনে করেছি। এর মাঝেও যে দেশপ্রেম আছে চিন্তা করিনাই। তোদের সাথে তাল মিলাতে মিলাতে শেষে এসে বাংলাদেশ হেরে যাওয়াতে চোখ থেকে সত্যি সত্যিই পানি বের হয়ে গেল। "

আমি জিতে গেছি, আমরা জিতেছি, আমরা সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিতে পেরেছি আমরা সত্যি সত্যিই টাইগার।

অবশেষে, বাংলাদেশে জন্ম নিয়ে যারা বাংলাদেশের সাথে অন্য দলের খেলায় সেই দেশের পতাকা তুলে ধরে তাদের উদ্দেশ্যে বলছি - একবার আমাদের লাল সবুজ পতাকা টা বুকে জড়িয়ে চিৎকার করে বলেই দেখ বাংলাদেশ। সাকিব, তামিম, মুশফিকের এত কষ্টে খেলার পরও যখন চোখে জ্বল চলে আসে তা আমরা দেখতে চাইনা। আমরা জিতবই। একবার আমাদের সাথে একাত্ব হয়েই দেখো, তোমার হৃদয় উচ্ছসিত হবেই হবে।

বি: দ্র: বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এবং সকল ক্রিকেট প্রেমীকে আমার আন্তরিক ভালোবাসা । আমি হয়ত আর সবার মত ক্রিকেট প্রেমী হতে পারব না। তবে এটুকু জানি বাংলাদেশের কোন খেলায় আমার মুখ থেকে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ধ্বনি নির্দিধায় মনের অজান্তেই বেড় হয়ে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১০:২৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×