somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটদের ভালো কাজগুলো শেখানোর দায়িত্ব তো আমাদেরই!

১৫ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পহেলা বৈশাখ ১৪১৭
কমিউনিটিএকশনের একশনিয়াররা ছাতা বিতরণে ব্যাস্ত, প্রখর রোদে রিকশাচালকদের মাঝে। আর আমার সারাদিন কাটলো কম্পিউটারের সামনে হুমরি খেয়ে পড়ে, সামনের কিছু কাজ নিয়ে ... ভেবেছিলাম আজকে বের হবার টাইম পাবোনা! কিন্তু সন্ধ্যার পর বিল্ডিংএর বাচ্চা ছেলে -মেয়েদের অঘোষিত নেতা ফোন কর অফার করলোঃ আপু,যাবা? কিছু ছাতা এখন ডিস্ট্রিবিউট করতে যাবো।"
এক্কেরে বাচ্চা কয়েকজন যাবে, আমার ছোট দুই ভাইও, ১০ আর ১১ যাদের বয়স। আমি না গেলে বাসা থেকে ওদের পারমিশন মিলবেনা, তাই রাজি হয়ে গেলাম!
যখনি এরকম কাজে বের হয়েছি, আমার চোখে পড়েছে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মন্দাবস্থা, এরকম সাহায্য পেয়ে তাদের আনন্দ ইত্যাদী বিষয় কিন্তু আজকে ভিন্ন। এই পিচ্চি পিচ্চি বাচ্চা গুলো এই কাজে বের হতে পেরে আনন্দ দেখে এত্তো ভালো লাগলো!!!
আমার বিড়ালভীতি আছে, এরা এটা জানে। তাই অন্ধকারের দিকে পয়েন্ট করে বারবার আমাকে বলতে থাকলোঃ ওই যে বিড়াল!! ওই যে বিড়াল!
আর ওদের খুশী করার জন্য আমিও প্রতিবার চমকে ওঠার ভান করলাম! :-D
এদিকে সেই অঘোষিত নেতাকে আমরা অফিসিয়ালি আমাদের নেতা ঘোষনা করলাম। আমার চোখে এখনো সে নিতান্তই বাচ্চা! কিন্তু আজকে বুঝতে পারছিলাম ও অনেক বড় হয়ে গিয়েছে আর অনেক রেসপন্সিবল!
রিকশাওয়ালা মামাদের সে শুধু ছাতা দিয়েই ক্ষান্ত হয়না, ওর বক্তব্য শুরু হয়ঃ রোদ বৃষ্টিতে কাজ করতে অনেক কষ্ট হয়, তাইনা?"
স্বাভাবিক ভাবেই রিকশাওয়ালারা তাদের মলিন হাসি হেসে বলেঃহ্যা,হয়।
তখন নেতা ম্যাজিশিয়ানের মত ছাতা বের করে বলেঃতাইতো আমরা আপনার জন্য এই ছাতা এনেছি!
তারপর খুব আয়োজন করে ছাতা পড়ানো হয় রিকশাওয়ালার মাথায়। তারপর একটা ছবি তোলা হয়, সবার বত্রিশটা দাঁত দেখা যায়, কি আনন্দ!!

এই ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে একটা ঘটনা ঘটলো।এক রিকশায় বসা ছিল তরুণ-তরুণী।জ্যাম এ আটকে ছিল। তো নেতা সেই সুযোগে রিকশাওয়ালাকে ছাতা দিল। বাচ্চা নেতা বেশী ভাবনা চিন্তা না করেই ছবি তোলার উদ্যেগ নিতেই তরুণ হাত বাড়িয়ে নিজের সেই সাথে পাশের জনের মুখ ঢাকার চেষ্টা করলো। এদিকে নিরীহ নিষ্পাপ বাচ্চাগুলো আমাকে জিজ্ঞেশ করলোঃ ওনাদের কি হয়েছে, আপু?" আমি আর কি উত্তর দিবো, হাসলাম!
যাদের অভিজ্ঞতা নেই তাদের বলছি, বেশ কয়েকটা ভীষণ একটিভ বাচ্চাকে ব্যাস্ত রাস্তায় লাইন করে হাটানো যে কতটা কঠিন কাজ, কল্পনা করতে পারবেননা! নিজেকে রাখাল বালক লাগে! একজন লাইনে আসে তো অন্যজন ফসকে যায়! পুরাই যুদ্ধ!
যুদ্ধ করতে করতে কে এফ সি এর সামনে আসলাম! লোকে লোকারণ্য! এত ভির আগে দেখিনি। খেয়াল করে থাকবেন হয়তো, এই দোকানগুলোর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় চিকেন ফ্রাইএর সুগন্ধ সব সময় আপনাকে টানবে। আমারতো মনে হয় ওদের কোন পারফিউম আছে, দোকানের চারপাশে স্প্রে করে দেয়-"Tasty chicken perfume"!
আমি মনে মনে প্রস্তুত যে বাচ্চারা এখন বলবেইঃআপু,খাওয়ান!
এতো লোভনীয় খাবারের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, আর ওরা খেতে চাইবেনা-এরকম ঘটনা নজিরবিহীন! প্রস্তুত ছিলাম, যাওয়ার আগে টাকা নিয়ে নিয়েছিলাম পকেটে।
কিন্তু অবাক কান্ড! একট্টা বাচ্চাও তাকালোনা কে এফ সির দিকে! সবার চোখ রিকশাওয়ালা খুজে!-আর কাকে কাকে সাহায্য করা যায় আজকে! উলটা আমাকে এসে বলেঃ এই জায়গাটা সুবিধার না, চল অন্য দিকে যাই!
আমি সত্যি অভিভুত আজ। নিজেদেরকে অনেক খানি সার্থক মনে হচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ। আমরা যদি আরেকটা জেনারেশন গড়ে দিয়ে যেতে পারি, যারা স্বাভাবিক "ফান" এর বাইরেও "ফান" খুজবে , ভিন্নরকম ফান খুজে পাবে সমাজ সেবা মূলক কাজে, তাহলে আর কি চাওয়া পাওয়া থাকে জীবনে? আর তো কিছুই থাকেনা!

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:০৪
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×