কতইবা বয়স তখন, বিশ কিংবা একুশ। কিছুদিন পর দেশের বাহিরে চলে যাবো তাই সেগুলোই নিয়ে ব্যাস্ততায় দিন কাটে। এমনি একদিন হাতে কাজ না থাকায় রুমে বসে কি যেন একটা বই পড়ছিলাম। হঠৎ ভারি কিছু নিচে পড়ার শব্দ পেলাম। মনে করলাম হয়তো ছাদ থেকে কেউ কার্পেট ফেলেছে কেননা প্রায়ই অনেকে তাদের কার্পেট ছাদে রোদে দিতো এবং রোদে শুকানোর পর কার্পেট রোল করে নিচে ফেলেদিত। সেই ভেবে আমি আবার বইয়ের দিকে চোখ দিলাম। তার আগে বলে নেই আমাদের বিল্ডংটা এমন ভাবে বানানো যেন চারটি বিল্ডং বৃত্তাকারে একসাথে লাগানো এবং মাঝখানে অনেকটা ফাঁকা যায়গা। অনেকটা শপিং কমপ্লক্সের মত। কিছুক্ষনপর নিচে থেকে হইচইয়ের আওয়াজ শুনে জানালায় এসে দাড়ালাম। কিন্তু নিচে জটলার কারনে কিছু বুঝতে পারছিলাম না। তাই কি হয়েছে দেখার জন্য নিচে গেলাম। যেয়ে যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। দেখি সতের/আঠরো বছর বয়সের ফুটফুটে একটি মেয়ে পড়ে আছে। কোথাও এতটুকু ভাঙ্গেনি বা রক্ত বের হয়নি। একপায়ে এখনো একটা স্লিপার পরা। একজন কে পাঠালাম তার বাসায় খবর দিতে। দেখি তারি সমবয়সি আর একটি মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিচে নেমে আসছে। শুলালাম মেয়েটি তার ছোট বোন। তার বাসায় এখন কেউ নেই, শুধু সে ঘুমিয়ে ছিল।
অঝড় ধারায় কাঁদছিল মেয়েটি। দেরি না করে ড্রাইভারকে বললাম গাড়ী বের করতে। কোনমতে পিছনের ছিটে শুইয়ে নিয়ে গেলাম পাশের একটি ক্লিনিকে। আমাকে ভিতরে ঢুকতে না দিয়ে তাকে ওরা ভিতরে নিয়ে গেল। কিছুক্ষন পর ক্লিনিকের ডাক্তার বের হয়ে এসে বলে আমাদের এখানে হবে না, বাংলাদেশ মেডিকেলে নিয়ে যান। আমি তাদের বললাম আমার গাড়ীতে নিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব, আপনাদের এ্যাম্বুলেন্সটা দিন। তারা বলে ভাই এ্যাম্বুলেন্স দেয়া যাবেনা। আমি বললাম কেন দেয়া যাবে না? তখন বলে এ্যাম্বুলেন্স দিয়ে এখন শুটিং হবে।
কি আর করা, আমার গাড়ীতেই কোন মত তুলে নিয়ে, জানলা দিয়ে চিৎকার করে রিকশা সরিয়ে গেলাম বাংলাদেশ মেডিকেল। ছোটবোনটা তখনো অনবরত কাঁদছিল। একদৌড়ে ইমার্জেন্সিতে যেয়ে একজান কে সাথে নিয়ে ট্রলি নিয়ে আসলাম। এরপর ট্রলি নিয়ে একছুট। যেয়ে দেখি ডাক্তার নাই। সারা হসপিটাল দৌড়াদৌড়ি করে তিনতলা থেকে ডাক্তারকে ধরে নিয়ে আসলাম। ডাক্তার এসে বলে টিকেট করছেন? টিকেট না করলে দেখ সম্ভব না। তখন তাকে বললাম প্লিজ আপনি দেখেন আমি টিকেট করে নিয়ে আসছি। টিকেট করে নিয়ে আসার কিছুক্ষন পড় ডাক্তার বললো সরি, সি ইজ ডেড। কেমন যেন সব কিছু ফাঁকা লাগলো। বসে থাকলাম কিছুক্ষন। এর মধ্য ওর মা চলে এসেছে। তাকে জরিয়ে ধরে ছোট মেয়েটার কান্না শুনতে পারছিলাম শুধু। আর থাকতে পারছিলাম না, হাসপাতলের বাইরে এসে কি মনে করে কাগজ গুলো ছিড়ে ফেলেদিয়ে ড্রাইভারকে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম। একটা রিকশা নিয়ে এলোমেলো ভাবে ঘুরলাম সন্ধ্যা পর্যন্ত। এসে দেখি মেয়েটির লাশ স্পোর্টস রুমে রেখে দিয়েছে। কেন জানি আর একবারো দেখতে যাইনি।