somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাপুরুষ

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অণুগল্প ১।
হাত দিয়ে অত্যন্ত যত্নে ফয়েলটা সমান করল রাজু। উপরে পিল টা রাখল। একদম মসৃণ হতে হবে ফয়েলটা। নিচে লাইটারের তাপটা যথাযথ হতে হবে। এই সময় ফোন বেজে উঠল। মা ফোন করেছে।
- হ্যাঁ মা। কেমন আছ?
- ভাল বাবা। তুই কেমন? ফোন করিস না, তাই আমিই করলাম। কোথায় আছিস? পড়ছিলি? বিরক্ত করলাম?
- না না, মা, তুমি বল। কোন অসুবিধা নেই।
- তোর পড়ালেখা কেমন হচ্ছে?
- ভাল হচ্ছে মা। ক্লাস করে এলাম।
- রেজিস্ট্রেশনের টাকা ঠিকমতো দিতে পেরেছিলি?
- হ্যাঁ মা, একদম লাস্ট ডেটে দিয়েছিলাম। যা হোক, সমস্যা হয় নি।
- মেসে থাকিস, কী খাস না খাস ... ...
- মা, খাওয়াদাওয়া যথেষ্ট ভাল। তুমি মিছেমিছি চিন্তা কর। মা ?
- কি বল
- না থাক কিছু না। চিন্তা কোরনা মা আমি ভালো আছি। এখন রাখি। কাজ আছে
- কি বলবি বললি না। আচ্ছা । ফোন দিস পড়ে। রাখি
আজকেও মাকে কথাটা বলা হলনা রাজুর।কথাটা বলার সাহস পাচ্ছেনা। কিভাবে বলবে, মার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পাঠান টাকা প্রথমে এক মানবী পড়ে অ্যাম্ফিটামিনের ধোঁয়ার পিছনে উড়িয়েছে। সত্যি কথা বলা অনেক কঠিন। সত্যি বলতে মহাপুরুষ হওয়া লাগে। ও মহাপুরুষ না

অণুগল্প ২।
রিপোর্ট পেয়েছ?
পেয়েছি।
কী খবর এসেছে?
সে জবাব দেয় না। মাথা নিচু করে। দেখতে পাই, ওর ঠোঁট কাঁপছে।
খারাপ খবর?
সে মাথা ঝোঁকায়।
খুব খারাপ?
সে আবার মাথা ঝোঁকায়।
আমি খুব নিষ্ঠুরের মতো বলে উঠি, ও বাঁচবে না?
সে এবার মাথা তোলে। চোখ ছলছল করছে। খুব কষ্টে উচ্চারণ করে, এখন ওকে কী বলবো?
আমি বলি, গোপন করে তো লাভ নেই, মিথ্যে আশা নিয়ে বেঁচে থাকা ঠিক নয়। তুমি বরং ওকে ঠিকমত বুঝিয়ে বল। অসুখবিসুখ তো মানুষের আছেই। যে কারো হতে পারে। বল, শেষ কয়েকটা দিন ধৈর্য ধরতে, ভেঙে না পড়তে।
ঠিক আছে। সে চোখ মোছে।
আবার বলছি, এমনভাবে ওকে খবরটা দেবে, যেন সে ভেঙে না পড়ে।
মারুফ ,অর্থাৎ শিউলির ভাই মাথা নেড়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে যায়। বিছানায় শুয়ে আছে শিউলি। ওড় কালি পড়া চোখের অসহায় দৃষ্টি দেখে বের হয়ে আসে আবার। সত্যি কথা বলা অনেক কঠিন। সত্যি বলতে মহাপুরুষ হওয়া লাগে। ও মহাপুরুষ না

অণুগল্প ৩।
বিছানায় বসে নার্গিস সুলতানা সাতপাচ ভাবে। আজ মেয়ের কাছে সত্যিটা বলে দেবে কিনা ভাবছে। নার্গিস সুলতানার বিয়ে হয় ১৬ বছর বয়েসে এক মদ্যপ এর সাথে। ভালো ঘরের ছেলে দেখে তার বাবা অল্পবয়সেই বিয়ে দিয়েছিলেন। ভালো ঘরের ছেলেটা হারামিপনা তে আরও ভালো ছিল। মদ খেয়ে বৌ পেটানো তার স্বভাব ছিলোনা। বৌ কে বেচত সে। অফিসের বসের কাছে। রাজনৈতিক নেতার কাছে। বড় বড় শিল্পপতির কাছে। প্রথমে প্রতিবাদ করলেও পড়ে নার্গিস বুঝে যায়, এই জানোয়ারের সাথে শোয়া আর অন্যপুরুষের সাথে শোয়া একই কথা। ওদের ঘরে একটা মেয়েও হয়।একদিন ধুম করে জানোয়ার টা মারা যায়। মদে লিভার পচে গিয়েছিল। মুক্তি পায় নার্গিস। কিন্তু ততদিনে ওই জগতে ভালভাবেই ঢুকে গেছে। ফেরার আর কোন উপায় নেই। ধিরে ধিরে নিজের একটা গ্রুপ গড়ে তোলে কয়েকজন মেয়েকে নিয়ে। বড় বড় শিল্পপতি, এম পি মন্ত্রিদের মেয়ে সাপ্লাই দেয়। এখন আর নার্গিস নিজে শোয়না। বয়স হয়ে গেছে। চামড়ায় ভাজ। ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় কলগার্ল সাপ্লায়ারের নাম নার্গিস সুলতানা। গুলশানে ফ্ল্যাট। কিন্তু এতো কিছু মাঝেও মেয়েকে ঠিকমত মানুষ করেছে। নিজের পেশার ধারে কাছেও যেতে দেয়নি। মেয়ে জানে মা একটা মাল্টিন্যাশ্নাল কোম্পানিতে জব করে। কিন্তু গত কিছুদিন যাবত কিছু বন্ধুর সুত্রে মেয়ে মার আসল পেশার সম্পর্কে খবর পায়।বার বার জিজ্ঞেস করে মা কে। কিন্তু নার্গিস স্বীকার করেনা। আজ রাতেও মা মেয়ের ঝগড়া হয়েছে। নার্গিস সিদ্ধান্ত নেয় বলে দেবে সব। একদিন না একদিন জান্তেই হত মেয়ের, তার মা মাগির ডিলার। বুকে সাহস নিয়ে মেয়ের ঘরের দিকে যায়।অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে। ত্রপা ঘুমোচ্ছে।। মার মতই সুন্দর হয়েছে ও। কি মায়া লাগছে চেহারার টা। যখন সত্যিটা জানবে কেমন হবে এই চেহারা। কল্পনা করে শিউরে উঠে নার্গিস। এই মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই তার। মেয়ে যদি ঘৃনা করে... সত্যি কথা বলা অনেক কঠিন। সত্যি বলতে মহাপুরুষ হওয়া লাগে। ও মহাপুরুষ ন
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×