somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্বাচিত স্ট্যাটাসসমগ্র

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেকদিন থেকেই ফেসবুকে লেখালেখি করি। লিখতে লিখতে অনেকদূর আসা হল। সামু ব্লগে নতুন। ফেসবুকে লিখি ওয়ারিশ আজাদ নাফি নামে। বেশ কিছুদিন ধরে পাঠকদের অনুরোধ আসছিল স্ট্যাটাসগুলোকে এক জায়গায় করবার। কাজটায় হাত দিলাম। পাশে থাকবেন
আমার ফেসবুক প্রোফাইল

স্ট্যাটাস ১-
তাহমিনা মেহজাবিন জান্নাত নামক এক বোনের ক্যান্সার আক্রান্ত বোনের মৃত্যুতে এ স্ট্যাটাস টা দিয়েছিলাম ফেসবুকে। শুরু করলাম এটা দিয়ে-

৭-৩-২০১১
আজ আমার ক্যান্সার জীবনের সপ্তম দিন। খবরটা আব্বু আম্মু আমাকে দেয়ার সাহস করে নাই। সারিন আমাকে জানায় আমার লিউকেমিয়া। কিভাবে নিব ব্যাপারটা বুঝতে পারছিলাম না। আমিতো ক্যানসারকে চাই নাই। তাহলে সে কেন আসল আমার কাছে। আমিতো অন্য কাউকে চেয়েছিলাম... যাহা পাই তাহা চাইনা

১৩- ৭-২০১১
শেষ পর্যন্ত স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হল আমার। ব্লিডিং বেড়ে যাচ্ছে। কি অতভুত। একসময় স্কুল ফাকি দিতে জ্বরের ভান করে পড়ে থাকতাম। আর এখন স্কুলে যাওয়ার জন্য সুস্থ থাকার অভিনয় করতে হয় । পোয়েটিক জাস্টিস। ক্যান্সার মনে হয় একটা মানুষের অতীতের সব খোজ খবর নিয়ে আসে। এই যে একসময় বৃষ্টি ভালো লাগত না। কিন্তু এখন যেন বৃষ্টিকেই আপন মনে হয়। রোদ অসহ্য লাগে। রোদ আমাকে আমার অক্ষমতার কথা মনে করিয়ে দেয়।

২২-৯-২০১১

আজ আমার বন্ধুরা আমাকে দেখতে এসেছিল। ঐশি, মৌমিতা, সানি, রিয়ন। অনেকদিন পর একটা ভালো সময় কাটালাম। কিন্তু কোথায় যেন সুরটা কেটে গেছে। আমি জানি ওরা আমায় প্রচন্ড ভালোবাসে। সানি আমার চোখের দিকে তাকাচ্ছিল না। লজ্জায় বোধহয়। সম্পর্কটা শেষ হয়েছে প্রায় তিনমাস। আমার ক্যান্সারের কথা শুনে সানিই আস্তে আস্তে দূরে সরে যায়। আমি জানি ও আর মৌমিতা ডেট করা শুরু করেছে। খারাপ লেগেছে ওরা আমাকে খোলা মনে ব্যাপারটা জানালেই পারত। সত্যি কথা শোনার অধিকার কি থাকেনা একজন ক্যন্সার রোগীর। সবাই এমন অভিনয় করে কেন?

১৬-১-২০১২

অনেকদিন লিখিনি। অনেক দেরি হয়ে গেছে। রোগটা আমাকে গ্রাস করে ফেলছে। ইদানিং সানিকে খুব মনে পড়ে। ওকে ফোন দেই , ধরেনা। ক্যান্সার তো ছোঁয়াচে না। তবে কেন এত অবহেলা। আজকাল রিসানের সাথে কথা বলে সময় কাটে আমার। ছেলেটার সাথে আমার ফোনে পরিচয়। কোন শর্ত ছাড়াই ভালোবাসে আমায়। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। একজন ক্যান্সার রোগীর কাউকে ভালোবাসার কিংবা কারো ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার নেই।

২৬-১-২০১২

দ্বিতীয় কেমো দিয়ে বাসায় আসলাম। চুলের ব্যপারে সবসময় একটু বেশি খুতখুতে ছিলাম আমি। নতুন নতুন ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু কন্ডিশনার কিনতাম। এখন আর ওসবের প্রয়োজন হয়না। চুলই নেই, শ্যাম্পু দিয়ে কি করব। কাজের বুয়াকে বলে ড্রেসিং টেবিল টাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছি। আয়নায় তাকাতে ভালো লাগেনা। এদিকে আব্বু আম্মুর মধ্যে ঝগড়া বেড়েই চলেছে দিন দিন। এই সম্পর্ক বেশিদিন টিকবে না আমি জানি। ওইদিন মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে দেখি আব্বু আমার পায়ের কাছে বসে কাদছে। ভালোবাসার বিয়ের এ কি পরিণতি। ভালোবাসার থেকে বোধহয় ক্যান্সারও ভালো...

২-২-২০১২

২৬ ঘন্টা পর আমার জ্ঞ্যান ফিরল। রিসানের সাথে ঝগড়া করলাম অনেকক্ষন। ওর সাথে ঝগড়া করতে আমার ভালো লাগে। ঝগড়া করার কেউ থাকা লাগে জীবনে। না হলে বেঁচে থাকাটাই বৃথা...

১৩-৩-২০১২

গত ৪৮ ঘন্টায় আমায় নিয়ে যমে ডাক্তারে টানাটানি হয়েছে। আমি আমার সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেছি ডাক্তাররা যাতে জিতে। কিন্তু জানি শেষ পর্যন্ত জয়টা ক্যান্সারের হবে। লিখার শক্তি পাচ্ছিনা... সানিকে অনেক মিস করছি। যদিও মিস করাটা উচিত না। ক্যান্সার রোগীদের কাউকে মিস করার অধিকার নেই

২৫-৫-২০১২

এই লিখাটাই বোধহয় আমার শেষ লেখা হতে যাচ্ছে। শেষ শক্তিটুকু জমিয়ে লিখাটা লিখছি। আমার রেখে যাওয়া জিনিসের মধ্যে ডায়রিটা রিসানের ভাগে পড়েছে। ছেলেটার মধ্যে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতা আছে। ও অনেক ভালো থাকুক। লিখতে লিখতে চোখের কোণে জল জমে একফোটা। এই জলটা কার জন্য। জানিনা। খুব মিস করব। বাবা মাকে, আমার ছোট্ট বোন টাকে। বন্ধুদের মিস তো করবই। সানি ভালো থাকুক। স্কুলের সামনে যে মামাটা আচাড় বিক্রি করত তাকেও মিস করব অনেক। আচ্ছা স্বর্গে কি আঁচার বিক্রি হয়। মনে হয়না। আরেকটা দিন বেঁচে থাকার শখ ছিল। আফসোস। যাহা চাই তাহা পাইনা।

মে মাসের ২৭ তারিখে যুদ্ধটা শেষ হয়..................।


স্ট্যাটাস ২।
প্রথমে দুটো ঘটনা শোনাই

নটিংহ্যাম ইংল্যান্ডে , ডেবি রিচার্ডসন মিউজিক স্কুলে পড়ার জন্য বাবার কাছে পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড চায়। মেয়ের ছোট কাল থেকে শখ পপস্টার হওয়ার। একদিন বাবা নিক ঊধাও হয় যায়। আর ডেবির কাছে ষাট হাজার পাউন্ডের একটা চেক আর একটা চিঠি এসে পৌছে। চিঠিতে লিখা ছিল " আমার প্রিন্সেসের স্বপ্ন পূরণ হোক... আমি কোথাও যাইনি...সাথেই আছি" । বাবা মেয়ের স্বপ্ন পুরনের জন্য নিজের কিডনি দুইটা বিক্রি করে দিয়েছিলেন...বাবারা এমনি হয়

-বাবু ভাত খেয়েছে
- না খায়নি
- শোনো
- বল
- আমার অপারেশনের যে টাকা ছিল সেখানে থেকে দেড় লক্ষ টাকা ওকে দিয়ে দাও... ক্যামেরা কিনুক
-তুমি কি পাগল হয়েছ।
- কথা বাড়িয়ো না। দাও
- তোমার ব্লকের কি হবে। ডাক্তার বলেছে ইমিডিয়েট সার্জারি...
- আমার কিচ্ছু হবেনা, দাও। ছেলেটা ফটোগ্রাফি করবে...

পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় সত্ত্বার নাম হলো বাবা। দৃশ্যত আবেগবিবর্জিত কাটখোট্টা এ মানুষগুলোকে কেউ ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা। আসলে বুঝতে দেয় না। বাবাদের হার্টে ব্লক থাকে, কিডনি ড্যামেজ হয়,চোখে ছানি পড়ে তারপরও বাবাদের সুস্থ থাকার অভিনয় করতে হয়। ছেলের ডিএসএলআর দরকার মেয়ের আইফোন দরকার এতো দরকার মেটাবে কে। বাবারা হাসিমুখে শারীরিক মানসিক আর্থিক সব রোগ নিজের মধ্যে ধারন করে। বাবারা সূর্য হয়। এভাবে অভিনয় করতে করতে একদিন দুম করে সূর্যটা নিভে যায়...নিভেও জ্বলে যায়

৩।
ছোটকালে গরমে ইলেকট্রিসিটি চলে গেলে বাসার সামনের উঠোনে মাদুর পেতে ফুল ফ্যামিলি লে ডাউন হয়ে যেতাম। বড়রা বড়দের গল্প করত। আমি শুয়ে আকাশের তারা গুণতাম।..এভাবে একসময় চোখ ঢুলু ঢুলু হয়ে আসত। হটাত কানের কাছে প্রচন্ড বিস্ফোরণ

- ভাইয়া ...কারেন্ট আসছে। রোবোকপ
- অ্যা চল চল

যুগের সাথে সাথে দিন পাল্টায়। এখন কারো টাকা গোনার ধান্দায় তারা গোনার টাইম নাই। আধুনিক হওয়ার আগে আমরা অতিআধুনিক হয়ে যাই। বাসার সামনে উঠান না রাস্তা থাকে। সে রাস্তায় মাদুর পাতব কিনা ভাবছি। একটু পর কানের কাছে বিষ্ফোরন হবে
- ভাই উঠেন
- অ্যা কি। রোবোকপ ?
- না শুধু কপ

আগে আবিজাত্যের প্রতিক ছিল পুকুর। কার বাড়ির সামনে কয়টা পুকুর। এখন পুকুরের জায়গা দখল করেছে গাড়ি। কার বাড়ির সামনে কয়টা গাড়ি... আর! পুকুর সেটাও আছে। পকেটের রেডিসনের মেম্বারস কার্ডটা দেখায়। সপ্তাহে একদিন পুলের নীল জলে দাপদাপি...

ঢাকা শহরে যত বাসায় এসি আছে, তাদের কেউ কি জানে এসির কার্যপ্রণালী। এসি বড় স্বার্থপর যন্ত্র। ভিতরটা ঠান্ডা করে বাইরে গরম বাতাস ছেড়ে দেয়। আমরাও এসি রুমের ঠান্ডা বাতাসে শরীর ডুবাই। বাইরে কে গলল কে জলল আমার কি। আধুনিক হতে হলে স্বার্থপর হতে হয়...

একসময় খবরে দেখতাম দিল্লিতে ৪০ ডিগ্রি গরমে এতো জনের প্রানহানি। এখন বুঝি ৪০ ডিগ্রি কাকে বলে। গ্রীনহাউস এফেক্ট কি। ম্যাজিক জাতীয় কিছু। এটাই এফেক্ট। এদিকে কাল বৈশাখীকে ছেলেধরা ধরেছে...

কোন এক হনু বলেছে, ধানমন্ডি মাঠ নাকি এলিটদের। তা এ এর নতুন কি। এ শহরে আর কি কি এলিটদের। ঠান্ডা বাতাস এলিটদের ঠান্ডা গাড়ি এলিটদের পুলের ঠান্ডা জল এলিটদের। মাঠ আর বাদ যাবে কেন।

এভাবে এলিটদের একটার পর একটা ইমারত উঠে। শহরটা সূর্যের আরো কাছাকাছি পৌঁছে। বাড়তে থাকে টেম্পারেচার ৩৫-৪০-৪২... কারো কোন মাথা ব্যাথা নাই। এসিরুম এসি গাড়ি এসি সুইমিং পুল ... মাথা ব্যাথা পথের মানুষের, বাসে ঝুলে যাওয়া মধ্যবিত্তের ... রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে শীতে মরে

স্ট্যাটাস ৪।
ইরানে কোন মা তার সন্তানের ফাঁসির আসামীকে মাফ করে দিছে তার মধ্যে আমি এক্সট্রা কোন মানবিকতা দেখি না। ইরানের ফাঁসির সিস্টেমটাই বর্বর। যে খুন হয়েছে তার মা নিজে উপস্থিত থেকে আসামীর পায়ের তলা থেকে টুল সরিয়ে দেবে। একটা মা যে অলরেডি তার সন্তানের মরা মুখ দেখে বিধ্যস্ত তারে দায়িত্ত দেয়া হয় খুনি কে ফাঁসি দিতে। এটা কোন ধরণের মেন্টাল টর্চার।
অনেকে নাকি শুনলাম এই ব্যাপারটা শুনে রাজাকারের ক্ষমা আরও কি কি যেন বলছেন...

নারে ভাই এতো সোজা না। ক্ষমা টমা আমার ডিকশনারীতে নাই। আমি চিন্তা করতেছি আরও সাইদিরে কিভাবে মৃতুদন্ড দেয়া যায়। ফাঁসির সিস্টেম টা ঠিক আমার পছন্দ না। ভানু সাহা নামে মেয়েটারে যখন সাইদি ধর্ষণ করতেছিল মেয়েটার কত কষ্ট হচ্ছিন। ওই লেভেলের কষ্ট দেয়া লাগবে।

রেড ইন্ডিয়ানদের মৃত্যুদন্ড দেয়ার পদ্ধতি টি বেশ আর্টিস্টিক। সেটা হল খুনিকে একটা গর্ত করে পুতে শুধু মাথাটা বাইরে রাখতে হবে। তারপর মাথার উপর চিনির শিরা মধু ঢালা হবে। বড় বড় পিপড়া কীটপতঙ্গ ছেড়ে দেয়া হবে। সেগুলো আসামীর চোখ নাক মুখে খেতে খেতে ভিতরের দিকে ঢুকবে। প্রচন্ড যন্ত্রনায় আসামি যখন আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চীৎকার করবে

কি আমারে নিষ্ঠুর মনে হয়। ঠিক আমি নিষ্ঠুরই। অনেক ফ্রেন্ড বিরক্ত হয়ে বলে তুই খুব গালি দিস। আমি চুপ করে থাকি।্কহুব বলতে ইচ্ছে করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লেখার জন্য আমার মা বাবা কে কত গাল খাওয়াই আমি... আমার সকাল শুরু হয় কোন ছাগুর হাতে খুন হবার হুমকি শুনে

আমি কেয়ার করিনা। আমি সাইদিরে ফাঁসি দেয়ার আরও নিষ্ঠুর কোন পদ্ধতি খুজি। আচ্ছা রাজাকারেরা আমার নানারে যখন ব্রাশফায়ার করেছিল তখন ঠিক কয়টা বুলেট উনার বুকে ঢুকিয়ে ছিল। জানিনা। থাকলে বুলেটগুলা আমি একটা একটা করে বের করে আমার কাছে রাখতাম। তারপর আমি সেই বুলেটগুলোই আমি সাইদির বুকে ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ঢুকাতাম...

একটা পর্দার স্ট্যান্ড লাগবে। কেন পড়ে বলছি। ১৭ বছরের জেসমিন ইডেন কলেজের ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন ছিল। প্রেম করত বিয়ে ঠিক। ২৮ শে মার্চ জেসমিনের বাবা যখন মেয়েকে খুজে পায় তখন জেসমিনের মুখ হাঁ করা, চোখ উপরের দিকে, মুখ দিয়ে পর্দার স্ট্যান্ড ঢুকোনো। নরপশুরা মেয়েটাকে ধর্ষন করে মুখ দিয়ে পর্দার স্ট্যান্ড ঢুকিয়ে হত্যা করে। আমার খালা ছিল।

জি আমি নিষ্ঠুর। আমার একটা পর্দার স্ট্যান্ড লাগবে। সেইসঙ্গে স্ট্যান্ড সাইদির মুখ দিয়ে পাকস্থলী পর্যন্ত ঢুকাতে চাই। পশুটা যন্ত্রনায় চীৎকার করুক। সে চীৎকার ৫৬ হাজার বর্গমাইল কিংবা পুরো পৃথিবীর সবার কানে চিঠিটা পৌছে দিক ' আর কেউ আমার মায়ের শাড়ির আচলে হাত যেন না দেয়... '

স্ট্যাটাস ৫।
০০২ সালের কথা। আর্জেন্টিনা তার আগের রাতে World Cup থেকে বিদায় নিয়েছে। রাগে ক্ষোভে এক আর্জেন্টিনা ভক্ত গেল ছাদে ওড়ানো আর্জেন্টিনার ফ্ল্যাগ নামাতে। বর্ষাকাল ছিল ছাদ পিচ্ছিল। সবাই মানা করল যেতে। পাচতলার ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু। আমার মামা ছিল। মামার মনে ছিলনা যাওয়ার সময় তার চারটা অবিবাহিত মেয়ে আছে। তবে পড়ার সময় যখন শুন্যে ছিল তখন নিশ্চয়ই মনে মনে বলছিলেন হায়রে আমার মেয়েগুলোর এবার কি হবে। আফসোস তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে

দু বছর আগের কথা। নতুন আর ওয়ান ফাইভ কিনছে। তিনবন্ধু গেল রেস দিতে , কাফনের কাপড় পড়ে ফিরল। হাইওয়েতে উঠার পর স্পিডের নেশায় ১৪০ তুলেছিল, ট্রেলারের সাথে মুখোমুখি স্পট ডেড। স্পিড তোলার সময় মনে ছিলনা ঘরে অসুস্থ বাবার কথা , মায়ের কথা, তবে মৃত্যুর সময় হয়ত ঠিকি মনে পড়েছে হায়রে মায়ের মুখটা তো আর দেখতে পারব না

সাব্বিররাও থ্রিল নিতে গিয়েছিল। ভাটার সময় থ্রিল নিতে সমুদ্রে ঝাপ দেয়ার সময় ওদেরও মনে ছিলনা বাবার কথা , মায়ের কথা বাসার ছোটবোনটার কথা .. কিন্তু পানির নীচে দমের অভাবে হয়ত মনে পড়েছিল .. বাবার বকা মায়ের হাসি প্রিয়তমাটার সাথে আর কোনদিন হবেনা দেখা... অনেক দেরী হয়ে গেছে তখন

থ্রিল নিতে যাই বাইকে , সমুদ্রে, পাহাড়ে। দোষ নাই। হিউমেন ন্যাচার্। এডিকশন টু দা থ্রিল। এই থ্রিলে ঝুকি নিয়ে বাইকের স্পিড দেড়শ উঠাই , ভাটার সময় ঝাপ দেই সাগরে। মনে থাকেনা অসুস্থ বাবা মায়ের কথা বোনের কথা প্রিয়তমার কথা... যে মরে যায় সে বেচে যায় , যাদের রেখে যায় তারা কষ্টে প্রতিমুহুর্তে হাজারবার মরে.. তাদের চোখের পানি শুকিয়ে যায় কিন্তু মনের কান্না থামেনা
লাইফ ইজ মাচ মোর দেন দ্যাট। অনেক মুল্যবান জীবন। সাত জনম না ,জনম একটাই। অনেক দায়িত্ত থাকে। হাজারটা মানুষের অধিকার থাকে জীবনে। আপনজন। ওদের কথা মনে রাখা উচিত থ্রিল নেয়ার সময়। আর যদি জীবনকে দাম না দেন , আপনজনের কথা ভুলে যান ..দেন আম সরি ইউ ডোন্ট ডিজার্ভ টু লিভ

স্ট্যাটাস ৬।
সাংবাদিক- কেমন আছেন স্যার ?
মুক্তিযোদ্ধা- পিরোজপুরে সাইদির পোলা কত ভোটে জিতছে?
সাংবাদিক- চোদ্দ হাজার ভোটে। কেন।
মুক্তিযোদ্ধা- কেমন আছি। ভালো নাই। হার্টে ইনফেকশন
সাংবাদিক- স্যার দুদিন পড়ে আমাদের ৪৩ তম স্বাধীনতা দিবস।
মুক্তিযোদ্ধা- জন্মদিন । কেক টেক খাওয়া হবে
সাংবাদিক- নতুন প্রজন্মের মধ্যে যে স্বাধীনতার চেতনার উন্মেষ ঘটেছে এ ব্যাপারে আপনার কি বলার আছে?
মুক্তিযোদ্ধা- গতরাতে এল ক্লাসিকোর রেজাল্ট কি।
সাংবাদিক- সরি স্যার
মুক্তিযোদ্ধা- বাংলা বুঝোনা।
সাংবাদিক- স্যার ৪-৩
মুক্তিযোদ্ধা- তাই না। ও স্বাধীনতার চেতনা! এসি রুমে বসে।
সাংবাদিক- মানে শাহবাগের কথা বলছিলাম
মুক্তিযোদ্ধা- মগবাজার চিন।
সাংবাদিক - জি চিনি
মুক্তিযোদ্ধা- কই বলত
সাংবাদিক- মৌচাক দিয়ে একটু সামনে গেলে
মুক্তিযোদ্ধা- ভুল
সাংবাদিক- শিউর স্যার
মুক্তিযোদ্ধা- মগবাজার অ্যাবোটাবাদে
সাংবাদিক- অ্যাবোটাবাদ কই স্যার
মুক্তিযোদ্ধা- আই এস আই। লাহোর
সাংবাদিক- স্বাধীনতার ৪৩ বছর পড়ে দেশ এখন কোথায় আছে?
মুক্তিযোদ্ধা- সাইদির ফাঁসির দিন কতজন লোক মারা গিয়েছিল?
সাংবাদিক- স্যার প্রশ্নটা...
মুক্তিযোদ্ধা- কুইক। বয়স হয়েছে। মনে থাকেনা
সাংবাদিক- ৭০-৮০ জনের মত ?
মুক্তিযোদ্ধা- আর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়া যেদিন বিনা চিকিৎসায় মারা গেল ?
সাংবাদিক- শাহজাহান মিয়া... ঠিক মনে...
মুক্তিযোদ্ধা- ফরগেট ইট। কি বলছিলেন? অগ্রগতি। বিশাল। বলতে গেলে আরেকটা ইন্টারভিউ নেয়া লাগবে
সাংবাদিক- তরুন সমাজের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের চাওয়া কি?
মুক্তিযোদ্ধা- আচ্ছা, ওই যে কি বলে বেবিডল। ওই গানটা আছে তোমার কাছে।
সাংবাদিক-আছে স্যার।
মুক্তিযোদ্ধা- কুইক। ব্লু টুথে দাও
সাংবাদিক- ইন্টারভিউটা আগে শেষ করি স্যার
মুক্তিযোদ্ধা- ইন্টারভিউ। হাঁ তাইত। আমরা চাই তরুণ সমাজ একটু এডজাস্ট করে হলেও যাতে
চেতনা টা ধরে রাখে।
সাংবাদিক- কেমন এডজাস্ট
মুক্তিযোদ্ধা- এই যে সাইদির ছেলে চ্যেয়ারম্যান হইল। কিছু করার নাই। এডজাস্ট করে নিতে হবে। এ রকমি আরকি। হাল্কা এদিক ওদিক
সাংবাদিক- স্যার আপনাকে সময় দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ
মুক্তিযোদ্ধা- ধন্যবাদের কিছু নাই। আমি একজন ইন্টারেস্টিং সাবজেক্ট। আইটেমও বলা যায়
সাংবাদিক- ম মানে স্যার।
মুক্তিযোদ্ধা- এই যে মানুষ আমায় বলে পাগল। তোমরা কালকে হেডলাইনে দিবা একজন পাগল মুক্তিযোদ্ধার কথা। হটকেকের মত বিক্রি হবে।
সাংবাদিক- না স্যার। আসলে ...
মুক্তিযোদ্ধা- মানুষ ইমোশনাল। আমার স্যাটারিক ইণ্টারভিউ পড়ে চোখের পানি ফেলবে দুই এক ফোঁটা। ব্যাস, প্যাট্রিয়ট্রিক কমিটমেন্ট পূরণ। এদিকে সাইদির ছেলে ভোটে জিতবে। শাহজাহান মিয়ারা বিনা চিকিৎসায় মরবে। আমি পাগল পাগলই থেকে যাব।।
সাংবাদিক- আচ্ছা স্যার আসি।
মুক্তিযোদ্ধা- দাড়াও। বেবিডল গানটা ছাড়ো। শুনব

ইয়ে চেতনা ... চেতনা পিত্তলদি...সাইদি সোনেদি


সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৩৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×