somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ভাই এর জানাজা পড়ে আসলাম

২৭ শে মে, ২০১০ বিকাল ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হ্যাঁ, এইমাত্র আমার ভাই এর জানাজা পড়ে আসলাম। আমার ছোট ভাই। অপেক্ষা করছি কবে অন্যরা এভাবে আমার জানাজা পড়তে আসবেন।

দিনটা কেবল শুরু হচ্ছে। সবাই ব্যস্ত। আজ বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়(বুয়েট) বন্ধ। সারা সপ্তাহ অসম্ভব কঠিন ক্লাশ আর ল্যাব শেষে ক্লান্ত ছাত্রদের কেউ হলে শুয়ে ঘুমাচ্ছে, কেউবা সকালবেলাতেই ছুটছে নিজের অথবা কাছের মানুষদের বাসায়।

বুয়েটের সবচেয়ে নতুন ব্যাচ, '০৯ এর যন্ত্রকৌশল বিভাগের ছাত্র সম্রাট, রিকশায় ওঠে বোনের বাসায় যাবে বলে। মাত্র এক সপ্তাহ ক্লাশ করেছে সে। খুলনা থেকে বাবা-মা কে ছেড়ে এসে নতুন শহর, পুরোন বন্ধুদের ছেড়ে আসা, হল এ থাকার নতুন অভিজ্ঞতা, সব মিলিয়ে কেমন যেন একটা নিঃসঙ্গতা আর মন খারাপ ভাব। তবে দেশের সেরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারার আনন্দ, সাথে অসংখ্য নতুন স্বপ্ন দেখা এগুলো ও মনটাকে কেমন যেন ছুঁয়ে যায় বারবার। গতকাল বাবা অনেক কিছু কিনে দিয়ে গেছেন হলে থাকার জন্য।সব দিয়ে যখন বাবা চলে যাচ্ছেন গাড়িতে উঠবেন বলে, সম্রাট দেখেছিল বাবা অন্য দিকে তাকিয়ে চোখ মুছছেন।মার গলাটাও কেমন যেন কান্না ভেজা মনে হয়েছিল ফোনে। আপু ফোন করেছিল রাতে। যাতে সকাল সকাল ই তার বাসায় চলে যাই। রিটায়ার্ড করেছেন বাবা। মার ও তো বয়স হল। রিকশায় বসে এই কথাগুলোই ভাবছিল সম্রাট। খুলনায় বাবা- মা কে একা রেখে আসতে খুব খারাপ লাগছিল।ও ছাড়া তো বাসায় আর কেউ ছিল না। আপুদের তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে।এদিকে হল থেকে চলে আসার সময় বাবা ভাবছিলেন, ছেলেটা একা একা থাকতে পারবে তো? বাসায় কারো কাছেই কখনো নিজের সমস্যা বলত না। এখানে ছেলেটার খুব কষ্ট হবে না তো? হলেও কি ববে? হলের খাবার খেতে পারবে তো? ভাবতে ভাবতে চোখটা কেন জানি ভিজে আসে। ছেলে যাতে দেখতে না পায়, তাই তাড়াতাড়ি অন্য দিকে মুখ ফেরান।

আপুর সাথে আজ সারাদিন খুব আড্ডা দিব। আরো অনেক কিছু ভাবতে ভাবতেই রিকশাটা চলে আসে আজিমপুর মোড়ে। হঠাৎ বাসের ধাক্কা। রাস্তায় ছিটকে পড়ে সম্রাট। থামে না বাসটা। উঠে সরে যেতে দেয় না তাকে। মাথার উপর দিয়ে চলে যায় বাসটা। মুহুর্তেই শেষ হয়ে যায় একটা জীবন, অসংখ্য স্বপ্ন, একটা পরিবার।

হ্যাঁ এভাবেই মারা গেছে আমার ডিপার্টমেন্টের, আমার কলেজ থেকে পাশ করে আসা, এক বছর জুনিয়র ব্যাচের ছাত্র, সম্রাট। সে তো আমার ছোট ভাই ই নাকি? আজ সম্রাট মরল, কাল হয়ত আমি মরব। পরশুদিন মারা যাবে অন্য কেউ।তবুও থামবে না এই কাহিনী। ঢাকার রাস্তায় যারা চলাচল করেন , তারা জানেন বেশির ভাগ গাড়ির চালকই অপ্রাপ্ত বয়স্ক, কোন লাইসেন্স নেই, থাকলেও ভুয়া, বেপোরোয়া গতিতে গাড়ি চালায় তারা। কিন্তু আমাদের মহান! সরকার, সরকারের উচ্চপদস্থ নীতি নির্ধারকেরা, ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামেতে নারাজ।তাদের এমন ভাব, গাড়ি রাস্তায় চললে সাধারন মানুষ তো মরবেই। এতে বিচলিত হওয়ার কি আছে। জানি আপনাদের কোন বিকার নেই কত ছাত্র, কত মানূষ মরল দুর্ঘটনায় তা নিয়ে। আপনারা তো আর সাধারন মানুষের মত রাস্তায় চলেন না। আপনাদের সন্তানেরা তো আর রিকশায় চড়ে না। আপনাদের জন্য আছে দামি পাজেরো, আপনারা রাস্তায় নামলে হাজার হাজার মানুষ কে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে , আপনাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কত মায়ের বুক খালি হয়ে যাচ্ছে, কত সপ্ন অকালে হারিয়ে যাচ্ছে, কত পরিবার পথে এসে দাঁড়াচ্ছে, তা নিয়ে চিন্তা করার সময় কোথায় আপনাদের? কিন্তু মনে রাখবেন, আজ সম্রাটের এই মৃত্যুর জন্য শুধু নরপিশাচ ওই ড্রাইভার ই দায়ী নয়। এর সাথে দায়ী সরকারের সব বিভাগ যাদের অবহেলা, দুর্নীতির সুযোগে , রাস্তায় নামে আনফিট গাড়ি, লাইসেন্স পায় আনাড়ি চালক, থাকে না কোন ট্রাফিক আইনের বাধ্যবাধকতা। আপনাদের হাতেও লেগে আছে সম্রাট দের রক্ত। কি দিয়ে মুছবেন? আর কত মরবে মানুষ? এই অন্যায় আর অত্যাচারের বিচার মানুষ ই করবে। সেদিন সাক্ষী দেবে আপনাদের হাতে লেগে থাকা এই রক্ত।



সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১২ সকাল ৭:০৯
৩০টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×