somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ ক্রিকেটের কিছু অসাধারন জয় এবং আমার কিছু স্মরণীয় (কিঞ্চিত মজার!) অভিজ্ঞতা B-)B-):D:D

১৭ ই মার্চ, ২০১২ দুপুর ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৭ এর বিশ্বকাপ! একটু মন খারাপ আমার আর আমার ভাইয়ের। কেননা , আমাদের দুইজনের প্রিয় মানজারুল ইসলাম রানাকে দলে রাখেননি ডেভ হোয়াটমোর। মন খারাপটা প্রায় কান্নায় রুপ নিলো যখন রানার সেই দুঃসংবাদটা শুনলাম। মাশরাফি প্রথম বল করতে ছু্টে যাচ্ছেন, ব্যাটিং এ শেওয়াগ। আমার ভাই ই আগে লাফ দিলো! আমি হা করে তাকিয়ে আছি! দুর্দান্ত ইনসুইঙ্গারে বোল্ড শেওয়াগ! এইবার আমি আকাশ কাঁপিয়ে চিৎকার দিলাম! ভারত ১৯৫ রানেই শেষ! মনে আছে খেলার মাঝের বিরতিটায় উত্তেজনায় কি কোরোব তা বুঝতে পারছিলাম না! বাংলাদেশ ব্যাটিং এ নামলো। তামিম নামের এক তরুন ,যে কিনা ওয়ানডে খেলা শুরু করেছে দিন কয়েক আগে, সে যখন ডাউন দ্যা উইকেটে এসে জহির খানকে ছয় মারল , তখন মনে হলো আমরা আসলেই বাঘ!এরপর সা্কিব-মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরীতে অনায়াস জয় বাংলা্দেশের! যেই লাফালাফি আমরা দুই ভাই মিলে করেছিলাম! সোফাটা ভাঙ্গেনি অল্পের জন্য! কিছুক্ষনের মধ্যেই রাস্তায় মিছিল! একটাই শব্দ! বাংলাদেশ! সেদিন ওই রাতের বেলাই খুলনার প্রায় সব মিষ্টির দোকান খালি হয়ে গিয়েছিলো! এর পরের কয়েকদিন আমাদের দুই ভাইয়ের কাজ ছিলো শুধু পেপারে বাংলাদেশের নামে যত প্রকার প্রশংসা আছে তা কেটে কেটে সংগ্রহ করা। আর হ্যাঁ, পরের দিন কিন্তু বাসায় বিরিয়ানি রান্না হয়েছিলো!B-) মনে আছে ,তখন নাকি ভারতীয় আনন্দবাজার মাশরাফিকে নিয়ে লিখেছিলো, " বা্ঙ্গালির ছেলে ও যে প্রায় ১৪৫ এ ( আসলে ১৪৪.৩) বল করতে পারে তা বিশ্বকে দেখিয়ে দিলো মাশরাফি!গর্ব হচ্ছে আমাদের মাশরাফির জন্য! "

এবার গত বিশ্বকাপের কথা! বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচ!দুর্দান্ত বোলিং এ ২৩০ এর আগেই শেষ ইংল্যান্ড! জয়ের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত তখন! ব্যাটিং ও হচ্ছিলো সেভাবেই। কিন্তু হঠাৎ পতন। আট উইকেট চলে গেছে। ব্যাটিং এ এসেছেন শফিউল। সাথে আছেন রিয়াদ। প্রচন্ড মন খারাপ করে টিভি রুম থেকে প্রায় সবাই নিজের রুলে চলে গেছে। কিন্তু একি! রুমে যেত না যেতেই নিচ থেকে উল্লাসধ্বনি! কোনমতে ক্রিকইনফোর পেজ খুলে রানটা দেখেই দৌঁড় লাগালাম টিভি রুমের দিকে! ১৪ কিংবা ১৬ রান দরকার আর! শফিউল দুটো চার মারলেন! মনে হচ্ছিলো সেদিন হল উড়ে যাবে আমাদের চিৎকারে! শেষ রানটা আসার সাথে সাথে কিভাবে যে বন্ধুদের সাথে পতাকা নিয়ে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে টি এস সি এর দিকে ছুটছিলাম তা খেয়াল নাই! জগন্নাথ হলের সামনে একটা লোহার ডাস্টবিন আছে। দেখলাম সেটাকে রাস্তার মাঝখানে এনে মহা উৎসাহে পিটিয়ে যাচ্ছে অনেকে মিলে! এক আঙ্কেল-আন্টিকে দেখলাম দুই পিচ্চিকে নিয়ে রিকশায়! পিচ্চি দুটো সবার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছে! পুরান ঢাকার দিক থেকে একটা মিছিল এলো! সামনে বয়স্ক গম্ভীর ব্যক্তিরা, আর পিছনে আশে পাশে লাফালাফিতে ব্যস্ত বাচ্চা থেকে শুরু করে তরুনেরা! নীলক্ষেতের দিক থেকে আসার রাস্তাটা বন্ধ হয়ে গেছে মানুষের ভীড়ে! রোকেয়া হলের সামনে থেকে শুরু করে টি এস সি হয়ে শামসুন্নাহার হল পর্যন্ত উদ্দাম নাচানাচি চলছে! আমার পাশেই দেখলাম এক বালিকা হাত ঘুরিয়ে বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে চিৎকার করছে! কি মনে হলো কে জানে, মুখ ফসকে বলে দিলাম, "ভালোই তো নাচেন!" বালিকা আমার বিদ্রুপকে পাত্তা না দিয়ে বলল, " আপনি দাঁড়ায় আছেন কেন? আসেন, আপনার সাথে নাচি! " আমি তব্দা খেলাম তা না রীতিমত পাথর হয়ে গেলাম! /:)/:) আসলে এরকম আনন্দের সময় সবার মাথাই বোধ একটু "ইয়ে " হয়ে যায়!

আর গতকালের ম্যাচের কথা নিয়ে কি আর বলব! আপাতত এটুকুই জানাই যে, আমার গলা ভাঙ্গা! আমাদের লাফানো যে টিভি রুমের মেঝের লাইফ টাইম অর্ধেক করে দিয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই! হলের বাইরের অনেকেও খেলা দেখতে এসেছিলেন, তাদের ঢুকতে দেয়া হয়েছিলো! এক আঙ্কেল দেখলাম প্রচন্ড ঘামছেন! যখন ১৪ বলে আঠারো রান দরকার তখন তিনি ভুলে ১৪ কে এগারো দেখলেন!প্রচন্ড নার্ভাস হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন , "১১ বল কেন? এইটার মানে কি? ওরা কি এখন বল নিয়েও চুরি করছে! " মুশফিকের একেকটা ছয়ের সাথে সাথে বোধ হয় হলের ছাদ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিলো আমাদের চিৎকারে! সামনের দিকে বসা ভাইয়ারা যেই নাচ দিলেন তা অন্য কোন সময় দেখলে আমি নির্ঘাত জ্ঞান হারাতাম! আর হ্যাঁ, সাকিবের অন্যায় আউট দেয়ার পর যে ভাষা আম্পায়ারের উদ্দেশ্যে আমরা বর্ষন করছি তা শুনলে আম্পায়ারের বাচ্চা বোধ হয় এই জীবনে আর আম্পায়ারগিরি করবে না ! রিয়াদের চারের পর আমাদের নাচ দেখে বোঝার উপায় ছিলো না যে কে সিনিয়র -কে জুনিয়র! পাশে দাঁড়ানো এক ছেলেকে আফসোস করতে শুনলাম, "ইশ, এখন যদি ছাত্রী হলের টিভি রুমে থাকতাম! " :Pযতবার ধোনিকে দেখা গিয়েছে টিভি পর্দায় ততবার মধ্যমা প্রদর্শিত হয়েছে চরম উৎসাহে!:P ঢাকা ভার্সিটির ছাত্ররা মিছিল বের করেছে খুব সম্ভবত! আমাদের অনেকেই ছুটে গেলো সেদিকে! :Dআমি তো এখনো ঘোরের ভেতর আছি! মনে হচ্ছে মুশফিক-সাকিবের ব্যাটিং চোখের সামনে ভাসছে!


অদ্ভুত এক জাতি আমরা! প্রতি মুহুর্তেই আমাদের বিভাজন। স্রেফ রাজনীতি নিয়েই আমরা প্রায় একে অন্যের উপর পারলে ঝাঁপিয়ে পড়ি।অসংখ্য সমস্যা আমাদের। অকর্মন্য নেতাদের যন্ত্রনায় দেশের বলতে গেলে প্রান যায় যায়! ক্রিকেট নিয়েও নোংরা রাজনীতি করার চেষ্টা কয়েকদিন আগে দেখলাম। কিন্তু সেটা নস্যাৎ হয়েছে। এত কিছুর পর যখন মাঠের "ওরা এগারো জন" যখন আমাদের জন্য এরকম কিছু অসাধারন মুহুর্ত নিয়ে আসে তখন সব দুঃখ-না পাওয়া-হতাশা গুলো ভুলে যাই! তখন আর আমাদের কোন বিভাজন থাকে না! তখন সবাই এক! ক্রিকেট ছাড়া আর কি আছে যা এইদেশে এরকম উন্মাতাল আনন্দের জোয়ার আনে? তাইতো অসীম শুভকামনা "ওরা এগাররো জন " এর জন্য! এই শভকামনা শুধু এই সময়ের "ওরা এগারো জন " এর জন্য না, বরং বাংলাদেশের সকল সময়ের সকল "ওরা এগারো জন " এর জন্য!

অন টপিকঃ আই সি সি ট্রফি থেকে শুরু করে আরো কিছু ম্যাচ এর কথা লেখার ইচ্ছে ছিলো! কিন্তু পোষ্টটা আরো বড় হয়ে যেতো! তাছাড়া আমি এখন জেনারেল! পোষ্ট প্রথম পাতায় আসে না! সুতরাং লেখতেও উৎসাহ পাইনা! তবুও ইচ্ছে আচ্ছে এই ম্যাচগুলোর আগের ম্যাচগুলো নিয়েও একটা লেখা দেয়ার!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১২ ভোর ৬:৫২
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×