ইউরোপীয় নন্দনচেতনা ও বাংলার আবহমান ঐতিহ্যের অনুসন্ধানী যূথবদ্ধ পথচলায় নগরকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের এক চমৎকার প্রতিচ্ছবি মূর্ত হয়ে ওঠে শহীদ কাদরীর কবিতায়। তিনি আধুনিক নগর ভাবনার কবি। নগর জীবনের অভিরুচি, অভ্যাস, আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি তাঁর কবিতায় এসেছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। নাগরিকতাকেও তিনি নিজস্ব দৃষ্টিকোণে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাই কেবল সৌন্দর্যের সরল বর্ণনা নয় বরং কদর্য স্বপ্নালু আবহের উন্মোচনও দেখা দেয় আশ্চর্য নিপুণতায়। তাইতো 'আলোকিত গণিকাবৃন্দ' তে দেখা যায় -
"শহরের ভেতরে কোথাও রুগ্ন গোলাপদল,
শীতল, কালো, ময়লা সৌরভের প্রিয়তমা"
কখনও তিনি কুৎসিতকে ধিক্কার দিয়েছেন, আবার কখনও কুৎসিতের ভেতরেই সৌন্দর্য অন্বেষণ করেছেন।
শহীদ কাদরী অনুভূতির বিবর্তনকে চিত্রায়িত করেছেন 'অবিচ্ছিন্ন উৎস' কবিতায় -
'প্রথমে ছিলো কণ্ঠস্বরে, ভাষার দ্যোতনায়,
একটি স্তব্ধতা থেকে অপর স্তব্ধতায়, তারপর
উঠে এলো তার বন্য বিপর্যস্ত চুলের ছোঁয়ায়
যেন স্রোতস্বিনী নদী বয়ে গেল আমার বিহ্বলতার ওপর
যেন সোনালি বালির তীরে দুটো নক্ষত্র নিয়ে ঠেকে গেল
নৌকো একজোড়া!
চুলের প্রান্ত ঠেকে দুলে উঠলো চোখের মণিতে
যার আলোয় জন্ম নিলো কবিতার আভাস-লাগা
কয়েকটা নক্ষত্রপঙক্তি, -প্রথমে যা ছিলো কণ্ঠস্বরে ভাষার দ্যোতনায়।
সদ্য স্বাধীন দেশকে তিনি নিজের প্রিয়তমার মতই ভালবাসেন। কিন্তু দেশের নৈরাজ্যে তিনি স্থির থাকেননি ' রাষ্ট্র মানেই লেফট রাইট লেফট' -
'রাষ্ট্র মানে স্ট্রাইক, মহিলা বন্ধুর সঙ্গে
এনগেজমেন্ট বাতিল,
রাষ্ট্র মানেই পররাষ্ট্র নীতিসংক্রান্ত
ব্যর্থ সেমিনার
রাষ্ট্র মানেই নিহত সৈনিকের স্ত্রী
রাষ্ট্র মানেই ক্রাচে ভর দিয়ে হেঁটে যাওয়া
রাষ্ট্র মানেই রাষ্ট্রসংঘের ব্যর্থতা
রাষ্ট্রসংঘের ব্যর্থতা মানেই
লেফট রাইট, লেফট রাইট লেফট - !
'তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা' কবিতায় -
'ভয় নেই
আমি এমন ব্যবস্থা করব যাতে সেনাবাহিনী
গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে
মার্চপাস্ট করে চলে যাবে
এবং স্যালুট করবে
কেবল তোমাকে প্রিয়তমা।'
শহীদ কাদরী কেবল নগরের চিত্রকল্পই কাব্যে রূপায়িত করেননি, সেই সাথে দার্শনিক চিন্তা ও নান্দনিকতাও প্রয়োগ করেছেন দৃপ্ততার সাথে।