‘সাদিয়া ও সাদিয়া,আর কত ঘুমাবি?এইবার উঠ না।’ মা অনেকক্ষণ ধরে ডাকছেন। কিন্তু সাদিয়ার উঠতে ইচ্ছে করছেনা। আরও খানিকটা শুয়ে থাকবে। সন্ধ্যা নেমে আসছে। এখন উঠে পড়লে মনটা খারাপ হয়ে যাবে। সাদিয়া ভাবছে এইভাবে শুয়ে থেকেই যদি রাতটা পার করা যেত,তবে দারুন হত। কিন্তু উপায় নেই। মেয়েরা চাইলেই যা খুশি তা করতে পারেনা। চৈত্রের গরমেও কাঁথাটা ভাল করে গায়ের সাথে জড়িয়ে নিল সে।
সারাদিন অনেক কেঁদেছে ও। না,কোন প্রণয়ঘটিত ব্যাপার নয়। খুব সাধারণ ঘটনা।
আজ ভার্সিটিতে হোলি উৎসব হয়েছিল। অন্যদিকে হরতালের মধ্যেও ছিল পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে বাসায় ফেরার আগে বন্ধুদের সাথে হোলি দেখছিল। পরীক্ষার কারণে কদিন বেশ চাপের মধ্যে ছিল। এখানে এসেই উৎসবের আবহে মনটা ভালো হয়ে গেলো। স্রেফ দেখার ইচ্ছে থাকলেও ‘স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল’ সেই দোলের ‘রাঙা হিল্লোল’ এ ‘গৃহবাসী’ সাদিয়াও খানিকক্ষণ থেকেই ‘দ্বার’ খুলে দিল।
বাসায় ফিরতেই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। সাদিয়ার পোশাক ও শরীরের সবটুকু জুড়ে আবিরমাখা দেখে আজন্ম মধ্যবিত্ত মানসিকতার মা কিঞ্চিৎ শাসন করলেন। এই অবস্থায় পুরোটা রাস্তা ও এসেছে,তা উনি ভাবতেই পারছেননা। তবে সাদিয়া কিছু ভাবছিল। এটা আবেগ দেখানোর বয়স। সে অনুযায়ীই ও সারাদিন না খেয়ে শুয়ে শুয়ে কাঁদল।
শুয়ে সারাদিনের কথা ভাবছিল ও। ইতিমধ্যে সন্ধ্যা নামক খণ্ডকালীন পর্বের অবসান হয়ে প্রকৃতির নিয়মে রাত নেমেছে। এর মধ্যে মা বেশ কবার ওকে ওঠার আহবান জানিয়েছেন।
বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই অসম্ভব সুন্দর চাঁদটি ওর মনোযোগ আকর্ষণ করল। অনেকক্ষণ পর আবারও অজানা ভালো লাগায় মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল ও।
মায়ের সাথে অভিমান ভুলে দৌড়ে গিয়ে মাকে বলল,
‘মা,দেখেছো আজকের চাঁদটা?কি চমৎকার!’
‘গতরাত থেকেই দেখছি,হবেনা চমৎকার,এ যে দোলের পূর্ণিমা! ছোটবেলায় কত মজা করেছি...।’
‘তাহলে আমাকে দোলের উৎসবে যাবার কারনে বকা দিলে কেন?’
‘ তোকে কি একআধটু শাসনও করতে পারবনা?মা হ,তারপর বুঝবি কেন বলেছি।’ কিঞ্চিৎ নিস্তব্ধতার পর মা আবার বললেন,‘সারাদিন তো না খেয়ে আছিস,তোর প্রিয় পুডিং বানিয়ে রেখেছি।’
‘সত্যি!’ বলেই মাকে জড়িয়ে ধরল সাদিয়া। তারপর এক দৌড়ে গিয়ে পুডিং নিয়ে চলে গেলো বারান্দায়। আলো নিভিয়ে পুডিং খেতে খেতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে নিজের অগোচরেই বলে উঠলো ‘বাহ’।