somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২৫ পেরিয়ে শিরোনামহীন এবং আমার কিছু কথা।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৭ অক্টোবর ২০১৭।ফেসবুকে স্ক্রোল করতে করতে হঠাৎ একটা স্টাটাস সামনে আসে,"আমি তানজির তুহিন ব্যক্তিগত কারনে শিরোনামহীন ছাড়ছি কিন্তু গান নয়"।কিছুক্ষণ হা হয়ে তাকিয়ে ছিলাম,কি দেখলাম বুঝলাম না।এটা কি আসলেও সত্যি নাকি?এটাও সম্ভব?কমেন্ট বক্সের কমেন্টগুলো চেক করলাম,বন্ধু ফাহিম সিহাবকে জিজ্ঞেস করলাম, কিছুক্ষণ পরে নিউজেও দেখলাম,বুঝলাম যে ঘটনা সত্য।তখন আমি ইন্টারমিডিয়েটের আবেগী তরুন,এই সত্য মেনে নেয়া তখন আমার জন্য খুবই কঠিন। ওই রাতে ঘুমাতে পারিনি,আসলেই পারিনি।অতিরঞ্জিত মনে হচ্ছে? হতে পারে।তবে যা সত্য তা সত্যই।

এই বিষয়ে শিহাবের সাথে আমার প্রতিদিনই অনেক কথা হয়।কেন ছাড়লো? আবার ব্যাক করবে কিনা?না ছাড়লে কি হত?বা নেক্সট ভোকাল কে হতে পারে।
বিভিন্ন ফেসবুক গ্রপে,পেজে এই বিষয় তখন হট টপিক।প্রতিদিন শত শত পোস্ট। আর ৯৫% পোস্টেই যে যেভাবে পারছে শিরোনামহীনকে ধূলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে, বিশেষ করে জিয়া ভাইকে।প্রতিদিন এত এত নেগেটিভ পোস্ট দেখে একজন শিরোনামহীন ফ্যান হিসেবে নিজেকে তখন অসহায় মনে হয়।একজন ফ্যান হিসেবেই আমার এই অবস্থা তখন ব্যান্ড মেম্বারদের কি অবস্থা সেটা বুঝতে বেশি মাথা খাটাতে হয়না।

চারপাশে এসব দেখে নিজের ভেতর তখন একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়।মনেহয় যেভাবেই হোক,যতটুকু পারি এই মানুষগুলোর পাশে দাড়ানো উচিত, সাপোর্ট দেয়া উচিত।এইসব ভেবেই একদিন জিয়া ভাইকে নক দেই।আমার প্রথম মেসেজটা ছিলো "ভাইয়া আপনারা চিন্তা কইরেন না আমার মত আরও অনেক ফ্যান শিরোনামহীনের সাথেই আছে"। এরপর মাঝে মাঝেই ভাইয়ার সাথে কথা হত।এই মানুষটা এত চমৎকার আপনি কথা না বললে বুঝবেন না।কোনো একটা বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে খুব সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করতেন।আমার আগের আইডি থাকলে হয়ত কর্ন্ভারসেশনের কিছুটা দেখানো যেত।

কিছুদিন পরেই নতুন ভোকাল হিসেবে ইশতিয়াক ভাই যোগ দেন।এরপর তো এই লোকটাকেও ব্যাস করা শুরু করে।বিভিন্ন পোস্টের কমেন্টে পার্সোনাল এটাক পর্যন্ত করা হয়।কোথাও একটা পড়েছিলাম ইশতিয়াক ভাইকে মৃত্যুর হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়েছিলো।

সেসব কথা থাক।ইশতিয়াক ভাই আসার পরে শিরোনামহীনের ফ্যানদের মধ্যে একটা দোটানা কাজ করছিলো যে তুহিন ভাই যেই মানের ছিলো তিনি তা ক্যারি করতে পারবেন কিনা?একজন গায়ক হিসেবে তুহিন ভাই কেমন আর তার ওজন কতটা এটা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই।আর নোনতা বিস্কুট থেকেই যারা ইশতিয়াক ভাইকে চেনে তাদের তার কোয়ালিটি এবং পটেনশিয়াল নিয়ে প্রশ্ন থাকার কথা না।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দুজন আলাদা দুটো মানুষ এবং তাদের ভয়েসও আলাদা,এতদিন একধরনের ভয়েস শুনে মানুষ অভ্যস্ত ছিলো এখন নতুন ভয়েসকে মানুষ কিভাবে গ্রহন করে সেটাই ছিলো দেখার বিষয়।ব্যান্ড এক্ষেত্রে পরপর তিনটা গান রিলিজ করে একটা মাস্টার স্ট্রোক খেলে।জাদুকর গানের মাধ্যমেই তিনি শ্রোতাদের কাছে যায়গা করে নেন।তারপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি।পর্যায়ক্রমে বোহেমিয়ান ও বারুদ সমুদ্র ও দারুন সাড়া ফেলে।

ইশতিয়াক ভাইর গাওয়া গানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শ্রোতাপ্রিয় গান " এই অবেলায়" এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।এই অবেলায় গানের ট্রেইলার রিলিজ হওয়ার পরে একটা ব্যান্ডের গিটারিস্ট ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ছিলেন "এই অবেলায় আসুক খাইয়া ফেলমু বা দেইখা নিমু" এই জাতীয় কিছু।ওই ব্যান্ডের ভোকাল কয়েকদিন আগে আবার এই অবেলায় গানকে মেয়েলি গান বলেছেন। একটা গান কিভাবে মেয়েলি বা পুরুষালি হয় আমার জানা নেই।এই ধরনের কথা একধরনের মেয়েদেরকে ছোট করার প্রবনতা।একজন শিক্ষিত সুস্থ মানুষ এই ধরনের কথা বলতে পারেনা।যাইহোক ওই ব্যান্ডের গিটারিস্ট এই অবেলায় গানের কি দেইখা নিয়েছেন আমার জানা নেই।এই অবেলায় রিলিজ হওয়ার পর থেকে এর জনপ্রিয়তা এবং গ্রহন যোগ্যতা নিয়ে আশাকরি কিছু বলতে হবেনা।তবে ইদানীং কেউ কেউ বলে এই অবেলায় ক্রিঞ্জ গান।কেন ক্রিঞ্জ?কারন এর জনপ্রিয়তা বেশি।একই কথা আর্টসেলের অনিকেত প্রন্তরের ক্ষেত্রেও শোনা যায়। এদের বক্তব্য হচ্ছে কোনো গান বেশি জনপ্রিয় হলে কিংবা ব্যান্ড মিউজিক লিসেনার বাদে অন্য কেউ শুনলেই সেটা ক্রিঞ্জ।আমি তাদের সাথে একমত নই।যেটা ভালো সেটা জনপ্রিয় হলেও ভালো আর জনপ্রিয় না হলেও ভালো।আর যেটা খারাপ তা জনপ্রিয় হলেও খারাপ না হলেও খারাপ।ভালো-খারাপ জনপ্রিয়তার ওপর নির্ভর করেনা।

তুহিন ভাই চলে যাওয়ার পরে অনেকেকেই বলতে শুনেছি আজকে থেকে আমি আর শিরোনামহীনের ফ্যান না,আমি অমুকের ফ্যান তাই আমি ওই ব্যান্ডের ফ্যান।আমার ধারনা তারা কোনোদিন শিরোনামহীনের ফ্যানই ছিলো তারা শুধুমাত্র ভোকালের ফ্যান।আমি কোথও যেতে পারিনি,একজন জাহাজী হয়ে শিরোনামহীনের সাথেই থেকে গেছি। এক্ষেত্রে অবশ্য লয়াল ওয়ারফেজ ফ্যানরা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।আমার কাছে ব্যক্তির চেয়ে দল বড়।তুহিন ভাই যাওয়ার পরে যেমন শিরোনামহীন ছাড়তে পারিনি তেমনি মেসি যাওয়ার পরেও বার্সা ছাড়তে পারিনি।

আমার জীবনে শিরোনামহীন কিভাবে জড়িয়ে আছে তা লিখে বোঝাবার ভাষা আমার জানা নেই। একটা সময় পরিবার,বন্ধু-বান্ধবের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়,ওই কঠিন সময়ে এই গানগুলো আমাকে সঙ্গ দিয়েছে।সেসব স্মৃতি নিয়ে পরে কোনো একদিন লিখবো।

প্রিয় শিরোনামহীন ২৫ পেরিয়ে গেছে।যারাই বাজাক আর যেই গাক যতদিন পর্যন্ত শিরোনামহীন নামে কোনো ব্যান্ড আছে ততদিন পর্যন্ত আমি নিজেকে একজন শিরোনামহীন ফ্যান হিসেবে দাবি করবো,ততদিন পর্যন্ত আমি জাহাজী। প্রিয় শিরোনামহীন ভালোবাসা অফুরান।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:৩১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×