somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অস্বস্তি

২৪ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিভিন্ন কারনে ঢাকা আমার সবচেয়ে প্রিয় শহর। আমার প্রথম অনেক কিছুর সাথে ঢাকা জড়িত। ঢাকার একটা উগ্র সৌন্দর্য আছে। এখানে আপনি ছেঁড়া জামা পরেন আর ব্রান্ডের পরেন কারো কিছু আসে যায় না। গ্রহ-উপগ্রহের মত সবাই সবার নিজস্ব কক্ষপথে চলে। বাসে পাশের সিটে বসা লোকটার সাথে আপনার সম্পর্ক পরের স্টপেজ পর্যন্তই, তার সাথে পুনরায় দেখা হবার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। ব্যাক্তিগত আরও বিভিন্ন কারনেই ঢাকা আমার প্রিয়। তবে আজকের আলাপ ঢাকা কেন আমার প্রিয় সেই কারনে না, কিছুদিন আগের এক অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা নিয়ে।
শুক্রবার। ঘুম থেকে উঠে জানতে পারলাম আজকেই ঢাকা যেতে হবে,কালকে বাবার অপারেশন। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পরে একটু বিশ্রাম নিয়ে ৪:৩০ এর দিকে রওনা দিলাম। ২ ঘন্টার মধ্যেই কদমতলী পৌঁছানো যায়, পদ্মাসেতু হওয়ার আগে একথা চিন্তাই করা যেতনা। ঢাকা যেতে হবে শুনে খুশিই হয়েছিলাম এই ফাঁকে বইমেলায় ঢু মারা হয়ে যাবে ভেবে কারন গতবার যাওয়া হয়নি। কদমতলী থেকে শাহবাগ আসতে আসতে প্রায় ৮ টা বেজে গেছে তাই ভাবলাম এই অল্প সময়ের জন্য না ঢুকে আগামীকাল বিকালের দিকেই আসবো।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়েই শুয়ে পরলাম। সকাল ৮ টার মধ্যে হসপিটালে থাকতে হবে। হঠাৎ প্রচন্ড শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়, দেখলাম রাত ২টা বাজে। জানলা দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখলাম বিয়ে বাড়িতে লোকজন আনন্দ করছে ওরাই বাজি-টাজি ফাটিয়েছে। রাতে আর এক ফোঁটাও ঘুম আসলোনা শুধু এপাশ-ওপাশ ছটফট করেছি। তখনই আমি ভিতর থেকে অনুভব করছিলাম আমার আর এক মিনিটও এখানে থাকতে ইচ্ছে করছেনা এই মুহুর্তে আমার বাড়ি চলে যেতে ইচ্ছে করছে। আমি নিজেই অবাক হলাম আমার এমন মনে হওয়ায়। রাতের পর রাত আমি নির্ঘুম কাটিয়েছি এই শহরেই কিন্তু কখনও এমন অস্বস্তি অনুভব করিনি। আগে যখন ঢাকায় থাকা হত তখন গভীর রাতে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে রেডিও শুনতাম আর রাস্তা দিয়ে রিক্সা, সবজির ট্রাক যাওয়া দেখতাম। একসময় রেডিও জকি রেডিও ছেড়ে চলে যায় তবুও আমার কানে ইয়ারফোন গোঁজা থাকে আর চোখ রাস্তায়। অনেকদিন রেডিও শোনা হয়না ভাবলাম রাতটা রেডিও শুনেই পার করে দেই। একসময় মুয়াজ্জিন আজান দেয় বাবা নামজের জন্য ডাক দেয়।
সকাল সকাল দুই বাপ-বেটা হসপিটালে হাজির। আমি এক দারুণ বাস্তবতার মুখোমুখি হলাম। আমি টের পেলাম কখন একজন ছেলে বড় হয়ে যায়! ছেলে থেকে বাবা হওয়ার মাঝেই একজন ছেলে বড় হয়ে যায়। না, বাবা হতে সবসময় সন্তান উৎপাদন করতে হায়না। এত দিন স্কুল-কলেজে সব যায়গায় আমার অভিভাবক ছিলো বাবা আর আজকে আমি নিজেই অভিভাবক, আমার বাবার অভিভাবক। অপারেশনে ঢোকাবার আগে হাসপাতাল থেকে একটা ফর্ম দেয়া হয়,সেই ফর্মের অভিভাবকের যায়গায় স্বাক্ষর দিতে দিতে এই কথা গুলোই আমার মাথায় ঘুরছিল।
যাইহোক, বাড়ি ফেরার সময় বোঝার চেষ্টা করছিলাম যে আমার এবার এত অস্বস্তি লাগার কারন কি? পরে আমার যা মনে হল তা হচ্ছে, আমি কোন আনন্দময় বিষয়ের জন্য ঢাকা যাইনি গিয়েছি বাবার অপারেশন এর জন্য। যা স্বাভাবিক ভাবেই কোন আনন্দের বিষয় না আর আমার মাথায় হয়ত টেনশন চলছিল এই বিষয় নিয়ে। কারন এর আগে কখনও এমন বিষয় নিয়ে ঢাকা যাওয়া হয়নি কিংবা থাকা অবস্থাতেও এরকম ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়নি। আরেকটা কারন হতে পারে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া। জার্নি,টেনশন আর ঘুম না হওয়াই হয়তো কারন। হয়তো, কিংবা অন্যকিছু যা আমি বলতে পারিনি!

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ১২:০৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×