ইদানিং কেউ আমার খোঁজ-খবর নেয়না। আমিও না।অথচ প্রথম যখন এ শহরে এসেছিলাম সেকি অবস্থা! দাওয়াতের উপর দাওয়াত।জোর করে সপ্তাখানেক রেখে দেয়া কিংবা নিজেদের মেয়েকে আকৃষ্ট করানোর প্রাণান্ত চেষ্টা।তখন বিরক্ত হতাম এখন হাসি পায়।স্মৃতি চারণ করতেও মজা লাগে।
হাত বাড়িয়ে নাসির গোল্ডে প্যাকেটটা নিলাম।এখানেও মজা। আমার স্ট্যাটাস বেনসন থেকে ক্যাপস্টেন,স্টার হয়ে নাসির গোল্ডে ঠিকেছে।আরো নামতে হবে। শেষে হয়তো নাসির বিড়ি অথবা আকিজ বিড়ি।আমার অধঃপতন চলবে।
ধ্যাৎ, মাত্র একটা সিগারেট। গত পরশুইতো কিনলাম প্যাকেটটা। এত হিসাবের পরও শেষ হয়ে গেল? উহু,মনেহয়না একা আমি খেয়েছি।আর কেউ আমার সিগারেটে ভাগ বসাচ্ছে নিশ্চয়? তদন্ত করা দরকার। উঠতে গিয়ে আবার শোয়ে পড়লাম। থাক,এখন না করলেও চলবে।সময়তো আর নদী স্রোতের ন্যায় চলে যাচ্ছেনা।আমার সময় স্থির অথবা আমার অনেক সময়। খালি কাটানোর কোন উপায় নেই।
এখন কারো কাছেই আমার ফুটো-কড়িরও দাম নেই। আমি নচ্ছার।আমি আছি নাকি নেই কেই জানতে আসেনা। একমাত্র মেসের কাজের ছেলে রন্জু যা একটু দেখা-শুনা করে।তাও হয়তো বেতন পায় বলেই। হাতে একেবারে টাকা নেই।তিন মাসের মেস ভাড়া আর রন্জুর বেতন বাকী পড়েছে। কে জানে আগামী মাস থেকে রন্জুটাও আমাকে পাত্তা দেয় কিনা?মেসের ম্যানেজার শাহীন ভাই একবারো এসে বলেনি ''সুফল ভাই ভাড়াটা কই?তিনমাস গত হতে চললো যে? আমার চাকরি খাবেন নাকি?'' কে জানে বেটার আমাকে মনে আছে নাকি? না থাকলেই ভালো। আরো ক'টা দিন যাক। দেখি কি করা যায়।
২.
মোবাইলটা বেজে উঠলো।আমার একমাত্র বিলাস সামগ্রী।বাবা কিনে দিয়েছিলেন।পাঁচবছর ধরে যক্ষের মত মত আগলে রেখেছি। রিং বাজছে। অতি অবশ্যই তিথি। আমার ফোনবুকের একমাত্র সচল কলার এবং বিল বাহক। বাকী সব এখন,ইংরেজীতে যাকে বলে ইনেক্টিভ। আর সব কাজে আমি বিরাট অলস ব্যক্তিত্ব হলেও তিথির বেলা অলটাইম বান্দা হাজির। তার ক্ষুদ্রাতি-ক্ষুদ্র কাজে আমার আপত্তি নেই। আমার ও অনেক কিছু হলেও আমি যে তার কাছে কি আজ পর্যন্ত বুঝতে পারিনি।বুঝবই বা কিভাবে এখনো সামনা সামনি দেখিইনি। যার কারণে এই শহরে আসা।
স্ক্রিনের দিকে না তাকিয়েই ফোন কানে লাগালাম,'বান্দা হাজির।'
'কে,সুফল বলছেন?'ওপাশ থেকে একটা কর্কশ কন্ঠস্বর শোনা গেল।হালকা হার্ট এ্যাটাকের মত অবস্থা হলো। তিথির কন্ঠ হঠাৎ বদলে গেল কিভাবে? তা্ও মাত্রাতিরিক্ত কর্কশ? একমুহূর্ত চুপ থেকে বললাম,'জ্বী।
'তিথি ম্যাডামকে চেনেন?'' কঠিন গলায় প্রশ্ন।
আবার,'জ্বী।
'উনি আপনাকে চেনেন?'
'আমি চিনলেতো উনার ও চেনার কথা।' আমার গম্ভীর উত্তর। '
'আপনি একটু শংকর আসেন। আপনার সাথে কথা আছে।'
'কি ব্যাপার বলুন তো? তিথির কিছু হয়েছে?'
'আগে আপনি আসুন। আমি বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পারবোনা।'
'না পারলেই নেই। আমার ইচ্ছাও করছেনা অপরিচিত একটা লোকের সাথে দেখা করার।' গলায় যথা সম্ভব বিরক্তি এনে বললাম।
'মিস্টান সুফল আমি আপনার মেসের ঠিকানা চিনি। সোজা ওখানে গেলে আপনার সমস্যা হতে পারে।আপনি যদি চান আমরা আসতে পারি।' কন্ঠটা আরো কর্কশ হয়ে উঠলো।
'ঠিকাছে জনাব,আমি আসছি। তবে ভাববেন না আপনার হুমকিতে ভয় পেয়ে আসছি। অনেকদিন পর এই প্রথম আমাকে কেউ জনাব বলে সম্বোধন করলো। আবার অপেক্ষাও করছেন। কিছুটা আগ্রহী হয়েই আসছি।'
'এত কথা বলেন কেন? শংকর এসে আমাকে একটা কল দিবেন।'
'আমার মোবাইলে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা নেই যে?'একটু লজ্জা মাখা স্বরে বললাম।
'তাহলে মিসকল....'
'সে যোগ্যতাও নেই।'
'ও.কে. আপনি আসুন। আমি চিনে নিব।'লাইনটা কেটে গেল। আমি বিছানা থেকে নামলাম।এখনি যেতে ইচ্ছে করছেনা।মেস থেকে রিকশায় দশ মিনিট। পাঁচ টাকা ভাড়া। হেটে গেলে আধা ঘন্টা। হাটতেও তো ইচ্ছে করছেনা।
চলতে পারে.......