somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ শূন্যতা

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১০ ভোর ৪:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইদানিং কেউ আমার খোঁজ-খবর নেয়না। আমিও না।অথচ প্রথম যখন এ শহরে এসেছিলাম সেকি অবস্থা! দাওয়াতের উপর দাওয়াত।জোর করে সপ্তাখানেক রেখে দেয়া কিংবা নিজেদের মেয়েকে আকৃষ্ট করানোর প্রাণান্ত চেষ্টা।তখন বিরক্ত হতাম এখন হাসি পায়।স্মৃতি চারণ করতেও মজা লাগে।

হাত বাড়িয়ে নাসির গোল্ডে প্যাকেটটা নিলাম।এখানেও মজা। আমার স্ট্যাটাস বেনসন থেকে ক্যাপস্টেন,স্টার হয়ে নাসির গোল্ডে ঠিকেছে।আরো নামতে হবে। শেষে হয়তো নাসির বিড়ি অথবা আকিজ বিড়ি।আমার অধঃপতন চলবে।
ধ্যাৎ, মাত্র একটা সিগারেট। গত পরশুইতো কিনলাম প্যাকেটটা। এত হিসাবের পরও শেষ হয়ে গেল? উহু,মনেহয়না একা আমি খেয়েছি।আর কেউ আমার সিগারেটে ভাগ বসাচ্ছে নিশ্চয়? তদন্ত করা দরকার। উঠতে গিয়ে আবার শোয়ে পড়লাম। থাক,এখন না করলেও চলবে।সময়তো আর নদী স্রোতের ন্যায় চলে যাচ্ছেনা।আমার সময় স্থির অথবা আমার অনেক সময়। খালি কাটানোর কোন উপায় নেই।
এখন কারো কাছেই আমার ফুটো-কড়িরও দাম নেই। আমি নচ্ছার।আমি আছি নাকি নেই কেই জানতে আসেনা। একমাত্র মেসের কাজের ছেলে রন্জু যা একটু দেখা-শুনা করে।তাও হয়তো বেতন পায় বলেই। হাতে একেবারে টাকা নেই।তিন মাসের মেস ভাড়া আর রন্জুর বেতন বাকী পড়েছে। কে জানে আগামী মাস থেকে রন্জুটাও আমাকে পাত্তা দেয় কিনা?মেসের ম্যানেজার শাহীন ভাই একবারো এসে বলেনি ''সুফল ভাই ভাড়াটা কই?তিনমাস গত হতে চললো যে? আমার চাকরি খাবেন নাকি?'' কে জানে বেটার আমাকে মনে আছে নাকি? না থাকলেই ভালো। আরো ক'টা দিন যাক। দেখি কি করা যায়।

২.
মোবাইলটা বেজে উঠলো।আমার একমাত্র বিলাস সামগ্রী।বাবা কিনে দিয়েছিলেন।পাঁচবছর ধরে যক্ষের মত মত আগলে রেখেছি। রিং বাজছে। অতি অবশ্যই তিথি। আমার ফোনবুকের একমাত্র সচল কলার এবং বিল বাহক। বাকী সব এখন,ইংরেজীতে যাকে বলে ইনেক্টিভ। আর সব কাজে আমি বিরাট অলস ব্যক্তিত্ব হলেও তিথির বেলা অলটাইম বান্দা হাজির। তার ক্ষুদ্রাতি-ক্ষুদ্র কাজে আমার আপত্তি নেই। আমার ও অনেক কিছু হলেও আমি যে তার কাছে কি আজ পর্যন্ত বুঝতে পারিনি।বুঝবই বা কিভাবে এখনো সামনা সামনি দেখিইনি। যার কারণে এই শহরে আসা।
স্ক্রিনের দিকে না তাকিয়েই ফোন কানে লাগালাম,'বান্দা হাজির।'
'কে,সুফল বলছেন?'ওপাশ থেকে একটা কর্কশ কন্ঠস্বর শোনা গেল।হালকা হার্ট এ্যাটাকের মত অবস্থা হলো। তিথির কন্ঠ হঠাৎ বদলে গেল কিভাবে? তা্ও মাত্রাতিরিক্ত কর্কশ? একমুহূর্ত চুপ থেকে বললাম,'জ্বী।
'তিথি ম্যাডামকে চেনেন?'' কঠিন গলায় প্রশ্ন।
আবার,'জ্বী।
'উনি আপনাকে চেনেন?'
'আমি চিনলেতো উনার ও চেনার কথা।' আমার গম্ভীর উত্তর। '
'আপনি একটু শংকর আসেন। আপনার সাথে কথা আছে।'
'কি ব্যাপার বলুন তো? তিথির কিছু হয়েছে?'
'আগে আপনি আসুন। আমি বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পারবোনা।'
'না পারলেই নেই। আমার ইচ্ছাও করছেনা অপরিচিত একটা লোকের সাথে দেখা করার।' গলায় যথা সম্ভব বিরক্তি এনে বললাম।
'মিস্টান সুফল আমি আপনার মেসের ঠিকানা চিনি। সোজা ওখানে গেলে আপনার সমস্যা হতে পারে।আপনি যদি চান আমরা আসতে পারি।' কন্ঠটা আরো কর্কশ হয়ে উঠলো।
'ঠিকাছে জনাব,আমি আসছি। তবে ভাববেন না আপনার হুমকিতে ভয় পেয়ে আসছি। অনেকদিন পর এই প্রথম আমাকে কেউ জনাব বলে সম্বোধন করলো। আবার অপেক্ষাও করছেন। কিছুটা আগ্রহী হয়েই আসছি।'
'এত কথা বলেন কেন? শংকর এসে আমাকে একটা কল দিবেন।'
'আমার মোবাইলে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা নেই যে?'একটু লজ্জা মাখা স্বরে বললাম।
'তাহলে মিসকল....'
'সে যোগ্যতাও নেই।'
'ও.কে. আপনি আসুন। আমি চিনে নিব।'লাইনটা কেটে গেল। আমি বিছানা থেকে নামলাম।এখনি যেতে ইচ্ছে করছেনা।মেস থেকে রিকশায় দশ মিনিট। পাঁচ টাকা ভাড়া। হেটে গেলে আধা ঘন্টা। হাটতেও তো ইচ্ছে করছেনা।










চলতে পারে.......
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×