somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতকদের কথা (১ম পর্ব)

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সৃস্টির সেরা জীব হয়েও মানুষের মধ্যে অনেক ঘৃণিত অভ্যাস রয়েছে যার অন্যতম হলো “বিশ্বাসঘাতকতা” । এই পৃথিবীর সব জায়গায় কিছু না কিছু বিশ্বাসঘাতক আপনি অবশ্যই খুঁজে পাবেন । তবে এই পৃথিবীতে এমন কিছু বিশ্বাসঘাতক জন্মেছিলো , যাদের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য সেই রাষ্ট্র বা জাতিকে অনেক চড়া মূল্য দিতে হয়েছিলো , আজ সেইরকম কিছু বিশ্বাসঘাতকের কথা বলবো


ব্রুটাসঃ


প্রাচীন রোমে একসময় আংশিক গনতন্ত্র প্রচলিত ছিলো , সেখানে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিলোনা । যাবতীয় প্রশাসনিক ক্ষমতা , আর্থিক ব্যবস্থা পৃথকভাবে চলতো । কিন্তু সেইসময় জুলিয়াস সিজার একজন একনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চান , অর্থাৎ যাবতীয় ক্ষমতা তার হাতের মুঠোয় নিয়ে আসাই ছিলো তার ইচ্ছা , এই ঘটনায় সিনেটররা ক্ষুব্ধ হন এবং তারা যেকোনো মূল্যে এই ব্যবস্থা ঠেকানোর জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন । তখন সিনেটররা সিজারকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে এবং এই পরিকল্পনার মূল হোতা ছিলো ব্রুটাস । সিজার আর ব্রুটাসের সম্পর্কে বন্ধুর মত ছিলো ,এমনকি ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার পরিকল্পনায় ব্রুটাস সিজারকে সমর্থনও দিয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত সেই ব্রুটাসের নেতৃত্বে অন্যান্য সিনেটরেরা , রাজদরবারে সিজারকে একের পর এক ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে । হত্যাকাণ্ডের সময় ব্রুটাস নিজে মুখ ঢেকে আসে , সিজার যখন একের পর এক ছুরিকাঘাতে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পরতে থাকেন , তখন ব্রুটাসের মুখের পর্দা সরে যায় ,এবং সিজার তাকে দেখতে পায় এবং বলে “Et tu, Brute?” অর্থাৎ ব্রুটাস তুমিও!!!!!

রবার্ট হ্যানসেন



আমেরিকায় জন্ম , একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে নিজের কর্ম জীবন শুরু করেন , ১৯৭৬ সালে FBI তে যোগ দেন । কম্পিউটার এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত কাজ যেমনঃ নেটওয়ার্ক ইনট্রুডার , ওয়ার ট্যাপিং ইত্যাদি কাজে অনেক দক্ষ ছিলেন । ১৯৮৩ সালে কাউন্টার ইন্টিলিজেন্সীর অংশ হিসেবে একটা দলের সাথে তাকে সোভিয়েত ইউনিয়নে (বর্তমান রাশিয়া) পাঠানো হয় । সেখানে সে টাকার বিনিময়ে মার্কিন ডবল এজেন্টদের নাম সহ অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য কেজিবির এক এজেন্টের কাছে বিক্রি করতে থাকে।পরবর্তীতে সে ধরা পরে , এবং বর্তমানে সে আজীবন দন্ড প্রাপ্ত একজন আসামী হিসেবে জেলে আছেন।


জন ড্যাস



১৯৪২ সালে আমেরিকার অর্থনীতিতে ধ্বস নামানোর জন্য , জার্মানরা এক নতুন কৌশল অবলম্বন করে । জার্মানদের উদ্দেশ্য ছিলো আমেরিকার বাজারে জাল টাকা ছড়িয়ে দেয়া , এই জন্য তারা আটজন ইংরেজী ভাষা জানা জার্মানকে আমেরিকায় পাঠায় । প্রথম দিকে জার্মানদের এই মিশন খুব ভালো ভাবেই চলছিলো , পরবর্তীতে জন ড্যাস অর্থলোভী সরাসরি জার্মানদের এই পরিকল্পনা FBI এর কাছে ফাঁস করে দেয় পরবর্তীতে ঐ মিশনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে মার্কিনীরা আটক করে ।


বেনেডিক্ট আর্নল্ড



আমেরিকান রেভুলশনারী ওয়্যার ,যেটা পৃথিবীর অন্যতম সফল বিপ্লব হিসেবে পরিচিত ,যার ফলাফল আজকের সুপার পাওয়ার আমেরিকা । আমেরিকান সিভিল ওয়্যারের অন্যতম সফল জেনারেল ছিলেন বেনিডিক্ট আর্নল্ড , অনেক বীরত্বপূর্ন কাজের জন্য তার অনেক সুনাম ছিলো , কিন্তু পরবর্তীতে সেও ব্রিটিশদের টাকার কাছে হার মানে এবং টাকার বিনিময়ে ব্রিটিশদের সাথে যোগ দেয় এবং পরবর্তীতে ইংল্যান্ডে চলে যায় , যদিও যুদ্ধের পরে ব্রিটিশরাও তাকে ছুড়ে ফেলে দেয় । তিনি অনেক কস্টে এবং জরাজীর্ণ অবস্থায় কানাডায় মৃত্যুবরণ করেন।

Vidkun Quisling


একজন নরোয়েজিয়ান আর্মী অফিসার এবং রাজনীতিবিদ । জার্মানদের নরওয়ে দখলের জন্য যাবতীয় সামরিক তথ্য হিটলারের কাছে পাচার করেন , অনেক ইহুদীদের অবস্থান নাৎসিদের হাতে তুলে দেন । পুরস্কার হিসেবে হিটলার তাকে দখলকৃত নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী বানান । ১৯৪৫ সালে জার্মানদের আত্মসমর্পণের পরে নরওয়ের জনগণ তাকে বিচারের সম্মুখীন করে এবং তার ফাঁসি হয়।

আলফ্রেড রেড



ইতিহাসের অন্যতম বিখ্যাত বিশ্বাসঘাতক ,যার বিশ্বাসঘাতকতার মূল্য দিতে হয়েছিলো অস্ট্রিয়ার ৫ লক্ষ্য মানুষের জীবন দিয়ে । আলফ্রেড ছিলেন অস্ট্রিয়ার কাউন্টার ইন্টিলেজেন্সীর প্রধান , কর্মক্ষেত্রে তার অনেক সুনাম ছিলো । কিন্তু কেউ জানতোনা সে গোপনে রাশিয়ার হয়েও কাজ করছিলো , সে মূলত ছিলো একজন ডবল এজেন্ট ,১৯০৩ থেকে ১৯১৩ পর্যন্ত সে একজন ডবল এজেন্টের কাজ করেছিলো ।১ম বিশ্বযুদ্ধের সময় সে অস্ট্রিয়ার ,সাইবেরিয়া আক্রমণের পরিকল্পনা রাশিয়ানদের হাতে তুলে দিয়েছিলো , যার ফলে অস্ট্রিয়ানদের সেখানে চরম মূল্য দিতে হয় একই সাথে রাশিয়ান সেনাবাহিনী সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনীকে বিভ্রান্ত করে , এমনকি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রাশিয়ায় নিয়োজিত অস্ট্রিয়ান এজেন্টদের নাম সে রাশিয়ানদের কাছে বিক্রি করে দেয় । যখন তার এই বিশ্বাসঘাতকতার কথা প্রকাশ হয়ে যায় তখন সে নিজে আত্মহত্যা করে।


২য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৫৮
৫৪টি মন্তব্য ৫৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×