somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জনাব বজলে বিলাহী, আজিজ্যা ও প্রাণীকূল সমাচার

১৪ ই নভেম্বর, ২০০৬ বিকাল ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(এই রচনার পাত্র পাত্রীরা কাল্পনিক। কোন জীবিত, মৃত ও অর্ধমৃত মানব ও পশুর সাথে সাদৃশ্য নিতান্তই কাকতালীয়।)

সাড়ে তিন পৃষ্ঠার এক পুস্তক প্রনয়ন করিয়া নিজেকে এক মহামনিষীর স্তরে নামাইয়া আনিয়া বড়ই পুলকিত জনাব বজলে বিলাহী। ইহজগতের যাবতীয় সমাধান এই পুস্তকেই লিপিবদ্ধ ও তাহার উপর সওয়ার হইয়া পরলোকের হুরপরীরা তাহার গাত্র মর্দন করিয়া পুলকিত করিবে, ভাবিয়াই আত্বতৃপ্তির এক বিশাল ঢেকুড় তাহার উদরের ভিতর হইতে গলা ফুড়িয়া বাহির হইয়া আসিল। এই ঢেকুড়ের প্রকম্পনে তাহার কুড়েঘর কাঁপিয়া উঠিল, বেড়ার গায়ে টানানো আলখাল্লা, টুপী, তহবন মাটিতে লুটাইয়া পড়িল। বজলে বিলাহী খানিকটা বিরক্ত হইয়াই আলখাল্লা, টুপী, তহবন আবার যথাস্থানে ঝুলাইয়া দাওয়ায় আসিয়া দাঁড়াইলেন। দাঁড়াইয়াই দেখিলেন যাহাদেরকে তাহার কিতাবের বিপননে বাজারে ঢোল বাজাইতে পাঠাইয়াছিলেন, তাহারা ফিরিয়া আসিতেছে। জনাব বজলে বিলাহী একটু ভীত হইলেন যখন দেখিলেন যে তাহাদেরকে পেছনে পেছনে জঙ্গলের পশুপাখি ও মানুষেরাও আসিয়া ভীড় করিয়া দাঁড়াইল। তবে তাহারা সকলকেই শান্ত দেখিয়া তাহার ভীতভাব সামান্য দুর হইল।

প্রথমে কথা বলিল জঙ্গলের একমাত্র রাজা সিংহ। বলিল, আমি এই জঙ্গলের রাজা। বৃদ্ধ হইয়া গিয়াছি বিধায় এখন আর শিকার করিতে পারি না। প্রায়শ:ই উপবাসে দিন কাটাইতে হয়। তাছাড়া এখন একটি খরগোসও আমাকে দেখিয়া সন্মান করিতে চাহে না। আমার এই সমস্যার সমাধান কি তুমি তোমার বহিতে লিপিবদ্ধ করিয়াছ ?
জনাব বজলে বিলাহী প্রয়োজন বিধায় চেহারাটি বুজর্গের মতো করিলেন। এই বিশেষ ট্রেনিংটি তিনি জঙ্গলেরই এক শিয়ালের কাছ হইতে পাইয়াছিলেন।

বলিলেন, হ্যা সিংহ মাহাশয়। ..... সিংহকে মহাশয় না বলিয়া মাহাশয় বলিলে খুশী হয়, সেই তালিম তিনি একবার একটি রামছাগলের কাছে পাইয়াছিলেন। বিনিময়ে তাহাকে সেই রামছাগলের দাড়ি কাটিয়া সুন্দর করিতে হইয়াছিল। নাপিতের কাজ করিতে অপমানিত বোধ করিয়াছিলেন বটে। তবে ছাগলের ম্যা ম্যা তাহার সঙ্গীতশ্রবনস্পৃহাকে শান্ত করে বলিয়াই সেই অপমান তাহার গাত্রস্পর্শ করে নাই।

সুতরাং আরেকবার বলিলেন, হ্যা সিংহ মাহাশয়। আপনার সমস্যার কথাও আমি আমার সাড়ে তিন পৃষ্ঠার কিতাবে লিপিবদ্ধ করিয়াছি। আপনি পড়িয়া দেখুন, অভীষ্ট ফলাফল পাইবেন।

সিংহ লজ্জিত স্বরে বলিল, আপনি তো আমাদের ভাষায় কিতাবখানি লিখেন নাই। স্বর্গীয় ভাষায় লিখিয়াছেন। ইহাতে আপনার বেহেশতের পথ প্রশস্ত হইলেও, আমি তো তাহা পড়িতে পারি না।

মোলায়েম হাসি দিলেন জনাব বজলে বিলাহী। বলিলেন, সিংহ মাহাশয়। আপনাকে এই কিতাব পড়িতে বা বুঝিতে হইবে না। কিতাবে একবার চুম্বন করিয়া চোখ বুলাইলেই সমস্ত মুশকিল আসান হইয়া যাইবে।

সিংহ পড়ার পরিশ্রম না করিয়া আরামে চোখ বুলাইয়াই সমাধান পাইবে। ইহার বৃদ্ধ সিংহের জন্যে অতীব আনন্দদায়ক। তাহার পরও কিছুটা অবিশ্বাস রহিল মনে। 'সমাধান না হইলে ব্যাটাকেই খাইব' এই কথা মনে মনে ভাবিতে ভাবিতে প্রস্থান করিল সিংহ। জনাব বজলে বিলাহী হাফ ছাড়িয়া বাঁচিলেন।

তাহার পর শিয়ালের দল আসিয়া বজলে বিলাহীর কাছে দাঁড়াইল। তাহাদের নেতা, যাহার সাথে বজলে বিলাহী আগেই আত্মার বিনিময়, অন্য সকলকে তাহা বুঝিতে দিল না।

নেতা শেয়াল বলিল, গৃহস্থরা মুরগীর খোয়াড় বড়ই শক্ত করিয়া তৈরী করিতেছে। বড় বড় তালাও লাগাইয়া রাখে। আমরা মুরগী না চুরি করিলে তো মারা পরিব। হজুর আমাদের সমস্যা সমাধানের কোন উপায় আপনার পুস্তকে লিপিবদ্ধ করিয়াছেন কি ?

বজলে বিলাহী বলিলেন, হ্যা শিয়াল ভায়া। আপনার ও আপনার জ্ঞাতিগোষ্ঠির কথাও সমস্যার কথাও আমি আমার সাড়ে তিন পৃষ্ঠার কিতাবে লিপিবদ্ধ করিয়াছি। সবাই মিলিয়া পড়িয়া দেখুন, ভাল ফলাফল পাইবেন। বলিয়াই সকলের অগোচরে একবার চোখ টিপিলেন শেয়াল সর্দারের চোখে চোখ রাখিয়া।

সমস্ত শেয়ালগন হুয়াক্কা হুয়াক্কা রবে বলিল, আপনি তো আমাদের ভাষায় কিতাবখানি লিখেন নাই। স্বর্গীয় ভাষায় লিখিয়াছেন। ইহাতে আপনার বেহেশতের পথ প্রশস্ত হইলেও, আমি তো তাহা পড়িতে পারিতেছি না।

আবারও মোলায়েম হাসি দিলেন জনাব বজলে বিলাহী। বলিলেন, শিয়াল ভায়া। আপনাকে এই কিতাব পড়িতে বা বুঝিতে হইবে না। কিতাবে একবার চুম্বন করিয়া চোখ বুলাইলেই সমস্ত মুশকিল আসান হইয়া যাইবে।

শেয়ালের দল সর্দারের অগোচরে জনাব বজলে বিলাহীকে গালাগালি করিতে করিতে আস্তানার দিকে চলিল। মনে মনে বলিল, আমাদের দাবী পূরন না হইলে ব্যাটার মুরগী মুসাল্লাম ভোজন চিরদিনের জন্য বন্ধ করিয়া দিব।

এমনি করিয়া দলে দলে অনেক প্রানী আসিল। খরগোস আসিল, বাঘ আসিল, ভোদড় আসিল, চামচিকা আসিল, ইদুর আসিল, এমনকি পক্ষীকুলের সদস্যরাও বাদ রহিল না। সবাইকেই জনাব বজলে বিলাহী একই ভাওতা দিয়া বিদায় করিলেন। তাহারা প্রত্যেকেই অসন্তুষ্ট চিত্তে নিজেদের আস্তানার দিকে পথ ধরিল।

সবার শেষে আসিল মনুষ্যকুল। তাহাদের নেতা তেমন গাট্টাগোট্টা না হইলেও তাহার তেজের জন্য সর্বজনবিদিত। মনুষ্যকুলের নেতা বলিল, হুজুর, আমাদিগর সমস্যা বড়ই কঠিন সমস্যা। আজিজ্যাকে বিদায় করিতে পারিতেছি না। বিএনপি আজিজ্যাকে বিদায় করিলে আওয়ামী আজিজ্যা লগি বইঠা লইয়া আসে। আওয়ামী আজিজ্যাকে বিদায় করিলে জামাত আজিজ্যা রগ কাটার ক্ষুর লইয়া দৌড়ায়। তাহাকে কোনক্রমে বিদায় করিলে জাতীয় আজিজ্যা বাঁশের লাঠি ঘুরাইতে থাকে। জাতীয় আজিজ্যাকে বিদায় করিলেই বিএনপি আজিজ্যা পিস্তল লইয়া ফটাস ফটাস গুলি ছুড়িতে থাকে। আমরা অতীব নিরুপায় হইয়া আপনার কাছে আসিয়াছি। আপনার পুস্তকে কি আমাদের সমস্যার সমাধান রহিয়াছে ?

বজলে বিলাহী বলিলেন, হ্যা স্বজাতি ভায়েরা। আপনার ও আপনার জ্ঞাতিগোষ্ঠির কথাও সমস্যার কথাও আমি আমার সাড়ে তিন পৃষ্ঠার কিতাবে লিপিবদ্ধ করিয়াছি। সবাই মিলিয়া পড়িয়া দেখুন, আজিজ্যা মুহুর্তেই বিদায় হইবে।

সমস্ত মানবগন শোরগোল করিতে লাগিল। তাহাদের নেতা বলিল, আপনি তো আমাদের ভাষায় কিতাবখানি লিখেন নাই। স্বর্গীয় ভাষায় লিখিয়াছেন। ইহাতে আপনার বেহেশতের পথ প্রশস্ত হইলেও, আমরা তো তাহা পড়িতে পারিতেছি না।

আবারও মোলায়েম হাসি দিলেন জনাব বজলে বিলাহী। বলিলেন, জনাব নেতা ও মানব ভায়েরা। আপনাকে এই কিতাব পড়িতে বা বুঝিতে হইবে না। কিতাবে একবার চুম্বন করিয়া চোখ বুলাইলেই ইহজগতের সমস্ত মুশকিল আসান হইয়া যাইবে।

মানব জাতি জনাব বজলে বিলাহীর কথায় একেবারেই বিশ্বাস করিল না। নিজেদের মাঝে সামান্য তর্কাতর্কি করিল। অত:পর কি লইয়া আলাপ করিল শোনা গেল না। কিন্তু একে একে কোন বাক্যালাপ না করিয়া জনাব বজলে বিলাহীর সদর দরজার সামনে মুত্রত্যাগ করিয়া নিজেদের কুটিরের দিকে রওয়ানা হইল।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০০৬ বিকাল ৪:০৬
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×