আমাদের দেশের পুরুষশাসিত সমাজে মেয়েরা সর্বদোষে দোষী। নিজের চাওয়া পাওয়াকে প্রকাশ করলে দোষী, ভালবাসলে দোষী, প্রতিবাদ করলেও দোষী! মেয়েদের বেলাতেই প্রযোয্য, "বুক ফাটে তো মুখ ফাটে না।"
যতোক্ষন অবধি মুখ না ফাটবে, ততক্ষন অবধি তারা স্নেহময়ী মা, আদরের বোন, আর আজকালকার আধুনিক ব্লগ জমানায় যোগ্য সহব্লগার।
একটু অন্যথা হলেই হলো!
চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হবে, তুমি মেয়ে। তুমি অন্য প্রজাতির জীব। তোমার অধিকার সীমিত। আমার যে ভাষা, সে ভাষা তোমার নয়। আমার যে অধিকার, সে অধিকার ভোগ করার যোগ্য তুমি নও! কারন তুমি পুরুষ নও, তুমি মেয়ে।
একটু টু শব্দও করবে না!
"টু শব্দ করলেই তোমাকে বেপর্দা ঘোষনা করা হবে! সে পথ জানা আছে আমাদের!"
আমাদের দেশের মেয়েদের সহজেই বেপর্দা করা যায়। কথায়, কাজে, শাসনে মেয়েদের বেপর্দা করা অতি সহজ। আমাদের গায়ের জোর আছে, আমাদের কথার জোর আছে, আমাদের ধর্মের জোর আছে।
যাবে কোথায়! সাবধান! টু শব্দও করবে না। তাহলেই মা, বোন কিংবা সহকর্মী। অন্যথায় কেউ নয়।
'মেয়েদেরকে সর্বংসহা হতে হয়! জাননা?'
সকাল, দুপুর, বিকেল, রাত, সবসময়ে সর্বংসহা। বাড়ীতে, রাস্তাঘাটে, অফিস আদালতে, সর্বক্ষেত্রে সর্বংসহা। শীত, গ্রীস্ম, বর্ষায়, সবসময়ে সর্বংসহা।
টু শব্দটি করবে না।
সতী সাবিত্রী হও! স্বামীর পায়ের তলায় স্থান করে বেহেশতে যাও! সহমরণে যাও! নিজেকে ভুলে যাও! নিজের জীবনকে ভুলে যাও। নিজের চাওয়া পাওয়াকে ভুলে যাও। স্বামী, পতিদেবতার সেবা, পদসেবা করে ধন্য হও!
রাগ ইমন ভালো কাজ করে নি। প্রতিবাদ করেছে। ইতরামোর প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু রাগ ইমন, তুমি জাননা, পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষদের ইতরামো, ইতরামো নয়। এ হচ্ছে তোমাদের জন্যে এক অলঙ্ঘনীয় বিধি, তোমাদের প্রতিদিনের ভাগ্য। তেমনি ভাগ্য, আস্তমেয়ে বা সরিয়ার ও আরো অনেকের। এ ভাগ্য নির্ধারণের জন্যে ধর্ম রয়েছে, শরিয়ত রয়েছে, রয়েছে ফতোয়া।
কারো ধর্মানুভুতিতে আঘাত করতে নেই। কারো বিশ্বাসে আঘাত করতে নেই। ধর্মানুভুতিতে আঘাত করলে নামবে পৃথিবীব্যাপী প্রতিবাদের ঝড়। শহর পুড়বে, গ্রাম পুড়বে, মরবে মানুষ!
কিন্তু মেয়েদেরকে তাদের নারীঅনুভুতিতে সবসময়েই আঘাত করা যায়। সামান্য টু শব্দ করলেই হলো! সেখানে প্রতিবাদ নেই। নারী অনুভুতির কথা প্রকাশ করতে যেওনা ইমন! ইতর সমাজে সে অনুভুতির কথা প্রকাশ করা পাপ!
তীরন্দাজের এ দুর্ভাগ্য নেই। তীরন্দাজ পুরুষ হয়ে এ পৃথিবীতে এসেছে। এক ত্রিভুজ, সহস্র ত্রিভুজ কথা বললেও কিছু ক্ষতি হবে না তীরন্দাজের। ইতর ত্রিভুজ ইতরই থেকে যাবে।
কিন্তু ইমনদের কথা আলাদা। এক ত্রিভুজ, এক তেলাপোকাই যথেষ্ট এই ইতরদের সমাজে। সুতরাং ইমনরা সাবধান! কথা বলবে না! মহাপাতকী হতে চাও?
মেয়ে, প্রতিবাদ করছো! মহাপাতকী হতে চাও?
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৫৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর
পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন
আলোচিত ব্লগ
=হিংসা যে পুষো মনে=

হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।
কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন
গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন
রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি
রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি
সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।
রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।