somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজাকার, আলবদর, আলশামস- এদের কুকর্মের দলিল সহ শহরে শহরে স্থায়ী যাদুঘর চাই

১৫ ই অক্টোবর, ২০০৭ দুপুর ২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বুদ্ধিবৃত্তি, শিক্ষা, সমাজবোধের পাশাপাশি প্রতিটি মানুষের ভেতরেই তার অভিজ্ঞতালব্ধ পরিয়ে যাওয়া সময়কে সম্বল করে কিছু বোধের জন্ম নেয়। আমাদের দৈনন্দিন পদচারণায় প্রতিটি বোধই বর্তমান ও ভবিস্যতকে লক্ষ করে সমান ভাবেই মুল্যবান। আনন্দবোধ আমাদেরকে আনন্দকে অনুভব করতে শেখায়, অন্যের সাথে ভাগ করতে শেখায়। দু:খবোধ আমাদেরকে দু:খকে অনুভব ও জয় করতে শেখায়। পাপবোধ সম্ভ্যাব্য পাপ থেকে নিজেকে দুরে রাখার পাথেয় হিসেবে কাজ করে। পুন্যবোধ আত্মাকে পবিত্র করে, ও সে পবিত্রতাকে সন্মান করতে শেখায়। মোদ্দা কথা হচ্ছে, ধনাত্বক বোধ হিসেবে আনন্দ ও পুন্যবোধ আমাদেরকে যে ভাবে আমাদের পুর্ণশক্তিতে সামনের দিকে এগুতে শেখায়, তেমনি ঋনাত্বক বোধ হিসেবে পাপ আর দু:খ বোধ আমাদেরকে সে চলার পথে নিজেদের কর্মের প্রতি সতর্ক হতে সহায়তা করে। এমনি আরো অনেক অনেক বোধের জন্ম ঘটে ভিন্ন ভিন্ন মানসে, ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতার আলোকে। এ বোধগুলোকে পাশ কাটিয়ে না গিয়ে এগুলোকে অনুভব করা যে মানুষ, মানবতা, সমাজ তথা রাষ্ট্রের জন্যে কতোটা জরুরী, একটি ঐতিহাসিক ঘটনার উদাহরণে তাকে জোরালো করতে চাইছি।

সেটা ছিল ১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বরের কোন এক শীতার্ত দিন। অন্যান্য অতিথিদের পাশ কাটিয়ে ধীরে ধীরে সবাইকে ছাড়িয়ে মঞ্চের দিকে এগিয়ে গেলেন রাষ্ট্রনায়ক। চোখ নীচের দিতে নিবদ্ধ। তারপর নঞ্চের উপর হাঁটু গেড়ে সন্মান জানালেন মৃতদের। শুধুমাত্র মৃতদের প্রতি সন্মান জানানোই নয়, ক্ষমা চাইলেন সমস্ত পৃথিবীর কাছে। পুরো অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের মুখে কোন কথা নেই। এক নীরব বেদনায় যেন বাকহারা সবাই। পোলান্ড ও সোভিয়েট ইউনিয়নের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দ্যেশ্য পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে এসেছেন জার্মান চ্যন্সেলর উইলী ব্রান্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার প্রায় চৌদ্দ বছর পর। হিটলার বাহিনীর হাতে ইহুদীদের ও অনার্যীয়দের নির্বিচার গনহত্যা, বর্বরতায় বিশ্বের সামনে ঘৃণিত জার্মান জাতি। ইউরোপের দেশে দেশে বিভিন্ন এলাকায় ছড়ানো কন্সেট্রেশান ক্যম্প এই হনহত্যার দলিল হয়ে বিশ্ববাসীকে জানান দিচ্ছে। এমনি এক সময়ে উইলী ব্রান্ট তার এই ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে নিজেকে বিশ্ববাসীর সামনে এক বিরল উচ্চতায় তুলে ধরলেন নিজেকে। এ ক্ষমা প্রার্থনা পরবর্তীতে নোবেল পুরস্কার এনে দিয়েছিল তাঁকে। কিন্তু বিশ্ববাসীর সামনে জার্মান জাতিকে সন্মান ফিরিয়ে দেওয়ার প্রয়াসে তার এই পদক্ষেপ নোবেল পুরস্কারের চেয়ে অনেক বেশী মূল্যবান।

তার কিছুটা সময় পরই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। এ যুদ্ধে স্বাধীনতার বিরূদ্ধ, অশুভ এ বর্বর শক্তি হিসেবে রাজাকার, আলবদর, আলশামস এদের ভুমিকা কথা তো করোরই অজানা নেই। এ ভুমিকা যারা অস্বীকার করবে, তারা দেশের ও আমাদের শত্রু। এদেরকে সুংগঠিত করতে যে জামায়াতে ইসলামীর প্রচ্ছন্ন ও প্রত্যক্ষ হাত ছিল, সেটাও প্রমানিত সত্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতি যে গৌরবের নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক দলগুলোর আরো বেশী ক্ষমতা ও অর্থলিপ্সা, তাদের দুর্নীতি ও সুবিধাবাদী কর্মকান্ডকে পাথেয় করে জামায়াত আবার জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। আজ প্রায় আটত্রিশ বছর পরও জামায়াত একটি বারও তাদের কুকর্মের জন্যে ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন বোধ করে নি। যে হানাদার প্রভুর প্রভুত্বকে বাংলাদেশের মাটিতে টিকিয়ে রাখার তাদের এই নিশৃংশ পদচারণা, তারাও একটি বারের জন্যেও তারাও কোন অনুতাপ প্রকাশ করে নি।

কিন্তু আমরা প্রমানিত ভাবেই এক নির্লজ্জ, বোধহীন, মেরুদন্ডহীন জাতি! আমরা এই জামায়াতকেই ভোট দিই। এদের গুনগান গাই। আওয়ামী, বিএনপির রাজনৈতিক অসদাচরণের প্রতিবাদ হিসেবে জামাতের হাত ধরে মুক্তি খুঁজি। আওয়ামী, বিএনপি আমাদেরকে রাজনৈতিক মুক্তি দিতে পারে নি, এটা যত বড় সত্য, তারচেয়ে বড় সত্য, “জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি ঘৃণিত, নারীধর্ষনকারী, খুনী, স্বাধীনতা বিরোধীর” জায়গা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হতে পারে না। আমরা তা মনে রাখি না, আমাদের পাপ ও কষ্টবোধ, যারা এ স্বাধীনতার জন্যে জীবন দান করলেন, তাদের প্রতি কুতজ্ঞতা ও সন্মান আজ অবধি এতটুকু শক্তিশালী হয়নি যে, আমরা এই অশুভ মানবতা বিরোধী শক্তিকে চিরদিনের জন্যে স্তব্ধ করতে পেরেছি। এর কারণ কি? কারণ আমরা আমাদের ইতিহাসকে তথা এই বিরদ্ধ শক্তির কুকর্মের ধরে রাখিনি, তুলে ধরিনি আমাদের চোখের সামনে। যদি করতাম, তাহলে তাদের অনাচারের যে দলিল আমাদের চোখের সামনে থাকতো সারাক্ষন, তাকে অস্বীকার করে জামায়াতকে ভোট দিতে যেতাম না। ভাষা আন্দোলন, উনসত্তুরের গনআন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধের জাতি আমরা, আমরা কি তারপরও এতোটা নির্লজ্জ হতাম?

জার্মান ও ইউরোপীয়ানরা তা করেনি। হিটলারের নাৎসী বাহিনীর অত্যাচারের দলিল হিসেবে “কন্সেট্রেশান ক্যম্প” গুলো জার্মানী সহ ইউরোপের বিভিন্ন এখনো তাদের কুকর্মের কথা মরে করিয়ে দেয়। ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহন করে তাদের উত্তরসুরীদের ভবিস্যতকে সামনে রেখে তারা এই বোধের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছে। তাদের উত্তরসুরীরা নাৎসীদের কুকর্মের এই দলিল দেখে লজ্জিত, ব্যথিত হয়, মানবিকতার এই অবমাননায় নিজেদের জাতিকে সামনে রেখে প্রতিবাদী হয়, তাদের নিজস্ব পাপ ও দু:খবোধের প্রভাবে তাদের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এদেরকে অযোগ্য ঘোষনা করে। এমনকি শিশুদেরকেও সচেতন করার উদ্দ্যশ্যে স্কুল থেকেই এসব ক্যাম্পগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। এটা তাদের শিক্ষারও একটি অংশ।

আমাদেরও এমনি এক শিক্ষার প্রয়োজন ছিল। শুধুমাত্র শহীদ স্মৃতিসৌধ, আমাদের গৌরব ও বীরত্বগাথার প্রকাশ না করে, আমাদের সত্যিকারের শত্রু কারা, তা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে জানিয়ে দেয়ার প্রয়োজন ছিল। শহরে শহরে ছবি-যাদুঘর, নানা ধরণের প্রতিষ্ঠান, পাঠ্যবই রাখা দরকার ছিল, যা আমাদেরকে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও তাদের দোসর জামাতে ইসলামীর ভুমিকা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতো। আমরা আমাদের ইতিহাসকে তুলে ধরতে পারিনি। আমাদের এই ব্যার্থতা আমাদের স্বাধীনতাপরবর্তি প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের সুবিধাবাদী কর্মেরই ফসল। মাঝে মাঝে নিজেদের পাল্লা ভারী করার জন্যে জামায়াতকে তারাও ব্যাবহার করেছেন। তাদের এ ব্যার্থতা, সুবিধাবাদী কর্মের জন্যে এদেরকে ধিক্কার জানাই।

আমরা আমাদের মুল্যবোধকে আবার সঠিকভাবে ফেরৎ পেতে চাই। সেজন্যে দাবী, সঠিক ইতিহাস সবার সামনে তুলে ধরা হোক। এখনো অনেকের কাছেই যথেষ্ট দলিল ও প্রামানাদি রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনীর আয়োজন করে তুলে ধরা হোক সবার সামনে স্বাধীনতা বিরোধীদের কুকর্ম। এ প্রদর্শনী কে ভিত্তি করে শহরে শহরে স্থায়ী মিউজিয়াম স্থাপন করা হোক, যাতে এ ইতিহাস আমাদের সত্বা ও বোধের অংশ হয়ে দাঁড়ায়। যতদিন না এ ইতিহাস আমাদের সত্বা ও বোধের অংশ হয়ে না দাঁড়াতে পারে, ততদিন কুচক্রীর কদর্য থাবা ঠেকানোর সাধ্য আমাদের হতে পারে না। জানিনা, দেশের ভবিস্যত শাসনভার কোন রাজনৈতিক দল গ্রহন করতে যাচ্ছে। সে যে দলই হোক না কেন, তাদেরন প্রতি এই দাবী জানানো প্রতিটি সমাজ ও মানবতা সচেতন নাগরিকের কর্তব্য। এ দাবী পুরণ হলে আমরা এক ইতিহাস-সচেতন জাতি হিসেবে আমাদের শত্রুদের সঠিক ভাবে চিনে নিতে পারবো।
৩৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×