আগের পর্ব ...
মৃত্যু ও বয়স :
রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম দিন হ’ল জুম‘আর দিন। এ দিনেই আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিনেই তার মৃত্যু হয়েছে এবং এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে...’।*৩৮* আদম (আ.)-কে এক হাযার বছর বয়স দেওয়া হয়েছিল। রূহের জগতে দাঊদ (আ.)-এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি নিজের বয়স থেকে ৪০ বছর তাকে দান করেন। ফলে অবশিষ্ট ৯৬০ বছর তিনি জীবিত ছিলেন।*৩৯*
আদম (আ.)-এর জীবনী থেকে শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ :
১. তিনি সরাসরি আল্লাহর দু’হাতে গড়া এবং মাটি হ’তে সৃষ্ট। তিনি জ্ঞানসম্পন্ন ও পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসাবে জীবন লাভ করেছিলেন।
২. তিনি ছিলেন মানব জাতির আদি পিতা ও প্রথম নবী।
৩. তিনি জিন জাতির পরবর্তী প্রতিনিধি হিসাবে এবং দুনিয়া পরিচালনার দায়িত্বশীল খলিফা হিসাবে প্রেরিত হয়েছিলেন।
৪. দুনিয়ার সকল সৃষ্ট বস্তুর নাম অর্থাৎ সেসবের জ্ঞান ও তা ব্যবহারের যোগ্যতা তাকে দান করা হয়েছিল।
৫. জিন ও ফিরিশতা সহ সকল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সৃষ্টির উপরে মানব জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত। সকলে তাদের অনুগত ও তাদের সেবায় নিয়োজিত।
৬. আদমকে জান্নাতে সৃষ্টি করা হয়। যা পৃথিবীর বাইরে আসমানে সৃষ্ট অবস্থায় তখনও ছিল, এখনও আছে।
৭. জান্নাতে আদমের পাঁজরের হাড় থেকে তার জোড়া হিসাবে স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়। সেকারণ স্ত্রী জাতি সর্বদা পুরুষ জাতির অনুগামী এবং উভয়ে পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট।
৮. আদম ও হাওয়াকে আসমানী জান্নাত থেকে দুনিয়ায় নামিয়ে দেওয়া হয় এবং পৃথিবীর নাভিস্থল মক্কার সন্নিকটে না‘মান উপত্যকায় অর্থাৎ আরাফাতের ময়দানে ক্বিয়ামত পর্যন্ত জন্মগ্রহণকারী সকল মানুষের ক্ষুদ্রদেহী অবয়ব সৃষ্টি করে তাদের নিকট থেকে ‘আহদে আলাস্তু’ অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি দাসত্বের স্বীকৃতি ও প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়।
৯. মানুষ হ’ল পৃথিবীর একমাত্র জ্ঞান সম্পন্ন প্রাণী। তাকে ভাল ও মন্দ দু’টিই করার ইচ্ছাশক্তি ও স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
১০. আদমের মধ্যে মানবত্ব ও নবুওয়াতের নিষ্পাপত্ব উভয় গুণ ছিল। তিনি শয়তানের প্ররোচনায় আল্লাহর নিষেধাজ্ঞার কথা সাময়িকভাবে ভুলে গিয়ে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খেয়ে অনুতপ্ত হন ও তওবা করেন। তওবা কবুল হবার পরে তিনি নবুঅত প্রাপ্ত হন। অতএব নিঃসন্দেহে তিনি নিষ্পাপ ছিলেন। একইভাবে আদমের আওলাদগণ পাপ করে তওবা করলে আল্লাহ তা মাফ করে থাকেন।
~~~ সমাপ্ত ~~~
রচনাঃ
প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
*৩৮* মুওয়াত্ত্বা, আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/১৩৫৯; সনদ ছহীহ, 'ছালাত' অধ্যায় 'জুম'আ' অনুচ্ছেদ।
*৩৯* তিরমিযী, মিশকাত হা/১১৮ 'তাক্বদীরে বিশ্বাস' অনুচ্ছেদ; সনদ ছহীহ, তিরমিযী হা/৩০৭৬ 'তাফসীর সূরা আ'রাফ'। একই হাদীছ মিশকাত হা/৪৬৬২ 'শিষ্টাচার' অধ্যায় 'সালাম' অনুচ্ছেদে এসেছে। যেখানে 'আদম তার বয়স থেকে ৬০ বছর দান করেন' বলা হয়েছে। তিরমিযী হাদীছটিকে 'হাসান গরীব' বলেছেন ছাহেবে মিরক্বাত ও ছাহেবে তোহফা উভয়ে বলেন যে, '৪০ বছর দান করার হাদীছ অগ্রগণ্য। দ্রঃ তুহফাতুল আহওয়াযী হা/৫০৭২-এর ব্যাখ্যা।