আগের পর্ব ...
আল্লাহর দয়া ও রহমত প্রার্থনাকারী
আল্লাহর দয়া ও রহমত কামনা করা প্রত্যেক মানুষের জন্য একান্ত আবশ্যক। আল্লাহর দয়া তাঁর ক্রোধকে অতিক্রম করেছে। এজন্য তাঁর দয়া পাওয়া অতীব সহজ। মানুষ তাঁর সন্তানের প্রতি যত দয়াশীল, আল্লাহ মানুষের প্রতি তার চেয়ে অনেকগুণ বেশী দয়াশীল। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে আমার বান্দাগণ যারা অপরাধ করেছ আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই তিনি বড় ক্ষমাশীল ও দয়ালু’ {যুমার ৫৩}।
আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, রাসূল (ছা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন মাখলূক সৃষ্টির ইচ্ছা করলেন, একটি লিপি লিখলেন যা তাঁর নিকট তাঁর আরশের উপর আছে, আমার দয়া আমার ক্রোধ অতিক্রম করেছে’ {বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৬৪; বাংলা মিশকাত হা/২২৫৫}। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, আল্লাহ অন্যায়ের জন্য শাস্তি দিতে চান না; বরং সব সময় ক্ষমা করতে চান।
আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, রাসূল (ছা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর একশত রহমত রয়েছে যা হতে একটি মাত্র রহমত তিনি জিন, মানুষ, পশু ও কীট-পতঙ্গের মধ্যে নাযিল করেছেন। এ দ্বারাই তারা একে অন্যকে মায়া করে। এর মাধ্যমেই একে অন্যকে দয়া করে এবং এর মাধ্যমেই ইতর প্রাণীরা তাদের সন্তানদেরকে ভালবাসে। বাকী নিরানব্বইটি রহমত ক্বিয়ামতের দিনের জন্য রেখে দিয়েছেন। যা দ্বারা তিনি ক্বিয়ামতের দিন আপন বান্দাদের প্রতি রহমত করবেন’ {বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৬৫; বাংলা মিশকাত হা/২২৫৬}।
এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, আল্লাহ একটি রহমত সমস্ত প্রাণীর মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। যার কারণে সকল প্রাণী নিজ নিজ সন্তানকে আদর করে। মানুষ সন্তানকে আব্বু-আম্মু বলে ডেকে আদর করে চুমু খায়। গাভী তার বাচ্চাকে আদর করে জিহ্বা দিয়ে চাটে, মুরগী তার বাচ্চাকে আদর করে ডাকে। একটি দয়ার প্রতিক্রিয়া যদি এত হয়, তাহলে নিরানব্বইটি দয়া আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য ক্বিয়ামতের মাঠে নিয়ে আসবেন, তার প্রতিক্রিয়া কত হতে পারে। অতএব ক্বিয়ামতের মাঠে দয়া ও রহমত পাব বলে পূর্ণ আশাবাদী ইনশাআল্লাহ।
আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, রাসূল (ছা.) বলেছেন, ‘যদি মুমিন জানত আল্লাহর নিকট কি শাস্তি রয়েছে, তাহলে তাঁর জান্নাতের আশা কেউ করত না। আর যদি কাফের জানত আল্লাহর নিকট কি পরিমাণ দয়া রয়েছে, তবে কেউ তার জান্নাত হতে নিরাশ হত না’ {বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৬৭; বাংলা মিশকাত হা/২২৫৭}।
অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, আল্লাহর রহমত ও শাস্তির অবস্থা যখন এই তখন মানুষের পক্ষে আশা ও নিরাশার মধ্যাবস্থায় থাকাই উচিত। জীবদ্দশায় ভয় ও মরণকালে আশা পোষণ করাই বাঞ্ছনীয়। নির্ভীক হওয়া এবং নিরাশ হওয়া কুফরী।
আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, রাসূল (ছা.) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি কখনো কোন ভাল কাজ করেনি। তার পরিবার-পরিজনকে বলল, অন্য বর্ণনায় আছে, এক ব্যক্তি নিজের প্রতি অবিচার করল, বড় অপরাধ করল। কিন্তু যখন তার মৃত্যু উপস্থিত হল, তখন সে তার সন্তানদের অছিয়ত করল, যখন সে মারা যাবে তখন তাকে যেন পুড়িয়ে ফেলা হয়। অতঃপর অর্ধেক স্থলে ও অর্ধেক সমুদ্রে ছিটিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহর কসম! যদি তিনি তাকে ধরতে সক্ষম হন, তবে এমন শাস্তি দিবেন যা জগতের কাউকে কখনো দেননি। যখন সে মারা গেল তার নির্দেশ মত সন্তানরা কাজ করল। আল্লাহ সমুদ্রকে হুকুম দিলেন, সমুদ্র তার মধ্যে যা ছিল তা একত্র করে দিল। এভাবে স্থল ভাগকে নির্দেশ দিলেন, স্থলভাগ তার মধ্যে যা ছিল তা একত্র করে দিল। অতঃপর আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেন এরূপ করেছিলে? সে বলল, হে প্রতিপালক! তোমার ভয়ে এরূপ করেছি। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন’ {বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৬৯}।
ব্যাখ্যা : লোকটি অজ্ঞ ছিল। আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে তার সঠিক ধারণা ছিল না। কিন্তু অন্তরে আল্লাহর ভয় ছিল। লোকটির ধারণা সে এত বড় পাপী যে আল্লাহ তাকে এত কঠিন শাস্তি দিবেন যে শাস্তি পৃথিবীর আর কোন মানুষকে দিবেন না। এরপরও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন। অতএব যে কোন বড় অপরাধী ক্ষমা পেতে পারে ইনশাআল্লাহ।
ওমর (রা.) বলেন, একবার নবী করীম (ছা.)-এর নিকট কতক যুদ্ধবন্দী আসল। দেখা গেল একটি স্ত্রী লোকের দুধ ঝরে পড়ছে আর সে শিশু অন্বেষণে দৌড়াদৌড়ি করছে। হঠাৎ সে বন্দীদের মধ্যে একটি শিশু পেল এবং তাকে কোলে টেনে নিল ও দুধ পান করাল। তখন নবী করীম (ছা.) আমাদেরকে বললেন, তোমাদের কি মনে হয় এই স্ত্রী লোকটি নিজের ছেলেকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারে? সে যখন অন্যের সন্তানের প্রতি এত স্নেহ দেখায়, তখন নিজের সন্তানকে কি আগুনে নিক্ষেপ করতে পারে? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কখনো না, সে তার সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারে না। রাসূল (ছা.) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি এই স্ত্রী লোকের সন্তানের প্রতি দয়া অপেক্ষা অধিক দয়াবান’ {বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৭০; বাংলা মিশকাত হা/২২৬০}। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল আল্লাহ কত বড় দয়ালু। কাজেই এত দয়াশীল আল্লাহ সহজে তাঁর বান্দাকে জাহান্নামে দিবেন না। আমরা এ ব্যাপারে বড় আশাবাদী।
ইনশাআল্লাহ্ চলবে ...
রচনাঃ
আব্দুর রায্যাক বিন ইউসুফ