প্রতিবছর এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়৷অনেক পরিশ্রম আর নিরবচ্ছিন্ন অধ্যবসায় এবং সেই সাথে অভিভাবকদের সচেতনতার ফলস্বরূপ এসব শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়৷কেউবা পাস করে জিপিএ ৫·০০ পেয়ে,কেউবা ৪·০০ পেয়ে,আবার কেউবা এর চেয়ে ও কম পয়েন্ট নিয়ে৷সবাই আবার সমান স্বপ্ন নিয়ে উত্তীর্ণ হয়না৷কেউ হতে চায় ডাক্তার,কেউ ইঞ্জিনিয়ার,কেউ শিক্ষক,কেউ বিসিএস ক্যাডার৷
এরকম আরো বিভিন্ন স্বপ্ন থাকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীরই৷
স্বপ্ন সকল শিক্ষার্থীর সমান হবে এমন নয়৷যারা লেখাপড়াকে জীবনের হাল হিসেবে ধরে নেয় কেবল তাঁরাই সোনালি জীবনের স্বপ্ন দেখে৷তাঁদের মধ্যেও স্বপ্নের তারতম্য আছে৷আবার সকলের স্বপ্ন পূরণ হয়না৷
কেবল মেধাবীদের মধ্যে মেধাবী যারা,যারা বইকে আপন সন্তান মনে করে পরম স্নেহে কাছে টেনে নিয়ে পড়াশোনা করে কেবল তাঁরাই ওই সোনালি স্বপ্নকে বাস্তবিক রূপ দিতে পারে৷
এখন প্রশ্ন হল,প্রতিবছর তো হাজার হাজার শিক্ষার্থী জিপিএ ৫·০০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়৷এরা সবাই কী মেধাবী?
আসলে,জিপিএ ৫·০০ যারা পায় তারা প্রত্যেকে মেধাবী নয়৷অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা সারা বছরেও একদিন বইয়ের একটি পৃষ্ঠাও উল্টিয়ে দেখেনি৷পরীক্ষার ২/৪ মাস আগে তাঁরা কোচিং সেন্টারের দ্বারস্থ হয়৷সেখানে গিয়ে গাদা গাদা নোটখাতা গলাধঃকরণ করে৷তারপর পরীক্ষালয়ে গিয়ে উত্তরপত্রে তা উদগীরণ করে৷যাকে জ্বর হলে ঔষধ খাওয়ার সাথে তুলনা করা যায়৷আবার কোন কোন শিক্ষার্থী আছে যারা পাঠ্যবইয়ের সব খুঁটিনাটি বিষয় আয়ত্ত করে৷নিরবচ্ছিন্ন অধ্যবসায়ের ফলস্বরূপ পায় জিপিএ ৫·০০ বা জিপিএ ৪·০০৷
প্রকৃত মেধাবী বলেন অথবা মেধাবীদের মধ্যে মেধাবী বলেন,এদের পরিচয়টাই কিন্তু আলাদা৷বলা হয়ে থাকে,পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা চান্স পায় তাঁরা প্রত্যেকেই মেধাবী৷কথাটি সর্বাংশে সত্য না হলেও সর্বাংশে সত্যের সহোদর৷প্রকৃতপক্ষে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য যেসব প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয় সেগুলো প্রথম শ্রেণি থাকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের অন্তর্ভুক্ত খুঁটিনাটি বিষয় এবং কিছু জেনারেল নলেজ থেকে৷
ফলে,যেসব শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অক্ষরের হাড়ে হাড়ে ঢুকে গবেষণা করে অধ্যয়ন করেছে তারাই উত্তীর্ণ হয় ভর্তি পরীক্ষায়৷অনেক জিপিএ ৫·০০ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী আছে যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় না৷আবার অনেক শিক্ষার্থী এর চেয়ে কম পয়েন্ট পেয়ে চান্স পেয়ে যায়৷এ থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে,শুধু মুখস্থ আর ঠোটস্থ করলেই মেধাবী হওয়া যায়না৷মেধাবী হতে হলে প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন অধ্যবসায়৷
আবার,আমাদের সমাজে দুই শ্রেণির অজ্ঞ-বিজ্ঞ লোক আছেন৷এক শ্রেণির লোক আছেন যারা মনে করেন কেবল ধনীর সন্তানেরাই মেধাবী হয় বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়৷কারণ তারা বিভিন্ন অভিজাত কোচিং সেন্টারে গিয়ে লেখাপড়া করে৷আবার আরেক শ্রেণির অজ্ঞ-বিজ্ঞ লোক আছেন যারা এই ধারণাটির ঠিক উল্টো হিসাব-নিকাশ কষেন৷তারা ধারণা করেন যে,পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গরীবের সন্তানেরাই চান্স পায়৷কারণ তারা ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারেনা৷আবার বিদেশ ও যেতে পারেনা৷এসব শিক্ষার্থীদের মাথা গোঁজানোর ঠাঁই কোথাও নেই৷তাই এরা বই নামক পুঁথি পাঠেই ব্যস্ত থাকে৷
আমার মতে,দুই শ্রেণীর লোকের ধারণাই সর্বাংশে ভুল৷প্রথম শ্রেণির লোকের উদ্দেশ্য আগেই বলেছি,গাদা গাদা বই মুখস্থ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া যায় না কিংবা মেধাবী হওয়া যায় না৷এখন দ্বিতীয় শ্রেণির লোকদের উদ্দেশ্যে বলছি,মেধাবী তারা হয়না অথবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা চান্স পায়না; যাদের মাথা গোঁজানোর ঠাঁই কোথাও হয়না৷পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তারাই ভর্তির সুযোগ পায়; যারা সবসময় অধ্যবসায়ের সাথে নিয়োজিত থাকে,লেখাপড়াকে নিয়ে গবেষণা করে,গাদা গাদা বই মুখস্থ না করে গাদা গাদা বই নিয়ে গবেষণা করে৷
পরিশেষে,সকল শ্রেণির লোকদের উদ্দেশ্যেই বলছি:আসুন এসব বাজে কথা ডাস্টবিনে রেখে দেই৷সেই সাথে সমস্বরে সুর তুলি,ধনী-গরীব নয়; মেধাবীদের পীঠস্থানই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়৷এতে মেধাবীরা লেখাপড়া করতে উৎসাহ পাবে৷দেশ ও জাতি হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ৷সোনার বাংলার সোনার সন্তানেরাই পারবে তৃতীয় বিশ্বে মাথা উঁচু করে সগৌরবে দাঁড়াতে৷
লেখক:নাসিম আহমদ লস্কর
শিক্ষার্থী;ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ (১ম বর্ষ)
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়৷