somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

(ডিপ্রেশন) বিষণ্ণতা ১০১ :: মোড়ক উন্মোচন পর্ব

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




উপরের 'বস্তু'টি দ্য ভিঞ্চি কোড নয় কিন্তু - এটা ব্লুপ্রিন্ট - এক নজরে 'বিষণ্ণতা' নিয়ে ধারাবাহিক লেখাটির নীলনকশা। (যুম-ইন করতে ব্লগপোস্টের নিচে সংরক্ষিত ছবিগুলোতে ক্লিক করতে হবে।) মেগা ধারাবাহিক লেখার প্রস্তুতি নিচ্ছি যেহেতু, শেষমেশ তালগোল যেন না পাকিয়ে যায়, তাই এই নীলনকশা'র আঁকিবুঁকি। আমার ব্লগপোস্ট যাঁরা এই প্রথমবারের মত পড়ছেন, তাঁদের সুবিধার জন্য এই পর্বের ঠিক আগের পর্বের লিঙ্ক যোগ করে দিলাম এখানে।

(ডিপ্রেশন) বিষণ্ণতা ১০১ :: অন্দরমহল পর্ব http://tinyurl.com/pwldklz

আগের পর্বের রি-ক্যাপ::

* প্রতি পাঁচজনে একজন জীবনের কোন না কোন সময়ে বিষণ্ণতা রোগে আক্রান্ত হয়। এই রোগের তীব্রতা এবং সময়কাল রোগীর প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেদে বদলায়।
* প্রতি বিশজনে একজন (ক্রনিক) 'ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার'-এর স্বীকার হয়।
* বিষণ্ণতা রোগের জেনেটিক ফ্যাক্টর আছে। জেনেটিক সূত্রে কেউ কেউ বিষণ্ণতাপ্রবণ হয়ে থাকেন।
* শরীরে হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে বিষণ্ণতা রোগ দেখা দিতে পারে।
* সঠিক চিকিৎসায় বিষণ্ণতা রোগ থেকে পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
* জীবনে নানা প্রতিকূলতায় মনে বেদনা, সংশয়, যাতনা দানা বাঁধতেই পারে। 'বিষণ্ণতা রোগ' আর 'বিষণ্ণতা'; এক এবং অভিন্ন নয়। চিকিৎসা শাস্ত্রে এটাকে তখনই *রোগ* হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যখন এর স্থায়িত্বকাল হয় মিনিমাম একটানা দু'সপ্তাহ। দু'সপ্তাহ যাবৎ একনাগাড়ে বিষন্ন থাকলে - কোন কাজে আনন্দ, উদ্দীপনা না থাকলে; দৈনন্দিন কাজকর্ম করাটাও কষ্টকর মনে হলে; যে সব কাজ শখের বশে করা, সেগুলোও বিরক্তিকর মনে হলে, চিকিৎসা শাস্ত্র মতে তবেই কেউ 'বিষণ্ণতা রোগে' আক্রান্ত বলে বিবেচিত হবেন।
==

এখন প্রশ্ন হল, এইসব ছাইপাশ তথ্য জেনে কী হবে? উত্তরটা খুবই সহজ - শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। মেরুদন্ড খানখান হয়ে গেলে মশা মারতে কামান দাগানোর স্টাইলে উড়োজাহাজ লাপাত্তা হয়ে গেলে বাটি চালান দেওয়া হবে। কাজেই বুদ্ধিমান হোন, ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করুন!

নিচের ছবিটিতে নজর বুলানো যাক।






ছোটখাট গ্রাফের সাথে আমদের প্রাইমারী স্কুল থেকেই পরিচয়, তাই ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না। তারপরো, সুপ্রিয় পাঠক, ব্যাখ্যার দরকার হলে আওয়াজ দেবেন। আপাতত খুব সংক্ষেপে বলি, ওয়াই-অ্যাক্সিসে চিহ্নিত করা হয়েছে বিষণ্ণতা'র মাত্রাভেদকে। মানে হল, রেখা যত উপরে উঠছে, বিষণ্ণতার তীব্রতা তত বাড়ছে। এক্স-অ্যাক্সিসে দেখছি আমাদের 'আবেগিক ফিটনেস' এর রূপরেখা। এক্স-কোঅর্ডিনেটের ভ্যালিউ যত বাড়ছে, আমাদের 'আবেগিক ফিটনেস' তত কমছে। মানে হল, গ্রাফের সর্ববামে যাঁরা আছেন, তাঁরা সুস্থ - আমাদের সকলেরই কারণে-অকারণে কম-বেশী মন ভারী হয়। সমস্যাটা হয় তখনই যখন মনের মেঘ বর্ডারলাইন ক্রস করে যায় (সর্বডানে)। আমাদের লক্ষ্য থাকবে এই মেঘকে টেনে-হিঁচড়ে লক্ষ্মণরেখার ভেতরে আনতে। এতেই কেল্লা ফতে - আমরা নিরাপদ!

'আবেগিক সুস্থতা' নিয়ে আগড়ম-বাগড়ম::

আবেগিক সুস্থতা বলতে ইমোশন্যল স্টেবেলিটিকে (stability) বুঝাচ্ছি। আমাদের আবেগিক সুস্থতার সাথে কী কী প্রত্যক্ষভাবে জড়িত?

-- প্রিয়জনদের সাথে সম্পর্ক
-- চাকরি, পড়াশোনা, অন্যান্য কর্মকাণ্ড করবার কর্মক্ষমতা
-- শারীরিক সুস্থতা
-- মননশীলতা এবং আত্মিক সুস্থতা
-- অর্থনৈতিক স্টেবেলিটি

আমরা সবাই জানি, বিষণ্ণতা আর আবেগিক সুস্থতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিষণ্ণতা আমাদের মোটিভেশন, আত্মবিশ্বাস, এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে আত্মসম্মানবোধের উপরও অনভিপ্রেত আঘাত হানে।




এই গ্রহে আমরা কতজন বাসিন্দা? সাতশ' কোটি? কেবল অস্ট্রেলিয়াতেই প্রতি বছর দশ লক্ষ মানুষের ডায়াগনোসিসে ধরা পড়ে 'বিষণ্ণতা রোগ'। এতো গেল ক্লিনিক্যল ডায়াগনোসিসের উপাত্ত। (আমার তথ্য-উপাত্ত সবই অস্ট্রেলিয়া-নির্ভর, আমার নীড় ওখানে।) অনেকেই ক্লিনিকের দ্বারস্থঃ হোন না; কাজেই, বিষণ্ণতা রোগে আক্রান্তদের সঠিক সংখ্যাটা যে আরও বড় অঙ্কের হবে, তা সহজেই অনুমেয়।

কিশোরী বয়সের কথা মনে আছে। আব্বুকে বললাম যে আমার সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। তিনি চোখ কপালে তুলে বল্লেন, "সাইকিয়াট্রস্টের কাছে তো পাগলরা যায়!! মা, তুই তো পুরোপুরি সুস্থ!" এই হল আমাদের দেশের চিত্র। বিষণ্ণতাকে রোগের মধ্যেই গণ্য করা হয় না। তাছাড়া, সাইকিয়াট্রিস্টের দ্বারস্থ হবার খবর দেওয়ালের কানে পৌঁছানো মাত্র ট্যাগ যোগ হয়ে যাবে নামের সাথে চিরতরে। স্কুলে লেখাপড়া নিয়ে যেহেতু কখনও কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি আমাকে, তাই আমাকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাবার জাস্টিফিকেশন খুঁজে পাননি আমার অভিভাবক। মনে রাখা প্রয়োজন,

* বিষণ্ণতা অসুখের প্রথম এপিসোড শুরু হয় ছোটবেলায়।



বিষণ্ণতার 'অ্যাক্সিস অফ ইভল' নিয়ে পরের পর্বে আলোচনা হবে। আজকের মত এখানেই অধিবেশনের সমাপ্তি। উল্লেখ্য, এই মেগা ধারাবাহিক চলবে কচ্ছপের গতিতে। ধারাবাহিকের রচয়িত্রী স্বয়ং যেখানে বিষণ্ণতা রোগে আক্রান্ত, সেখানে কচ্ছপের গতিই সই! ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন! আমার হাতে দূর্বা না গজালে আবারো দেখা হবে, ইনশাল্লাহ!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৯
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×