পাঁচ দিনের হাওরে কাটানো স্মৃতির কথা উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘পাঁচ দিন ভালো ছিলাম। হাওরের আলো-বাতাস গায়ে লাগিয়ে আর পানি দেখে কাটিয়েছি। আজ আবার বঙ্গভবনে ফিরে যাব। সেখানে রাজার হালে থাকা-খাওয়া চলবে। কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠবে হাওরের স্মৃতি আর ৫৪ বছর যাঁদের নিয়ে রাজনীতি করেছি সেসব মানুষের মুখ।’ কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
রোববার ছিল রাষ্ট্রপতির নিজ জেলা শহর কিশোরগঞ্জ ও হাওর ভ্রমণের পাঁচ দিনের শেষ দিন। আইনজীবী সমিতির এ অনুষ্ঠানটিতে যোগ দিয়েই বেলা দেড়টার দিকে পাঁচ দিনের হাওর পরিদর্শন শেষ করে রাষ্ট্রপতি হেলিকপ্টারে করে ঢাকার উদ্দেশে কিশোরগঞ্জ ত্যাগ করে বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওনা হন।
এর আগে ওই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সংবিধান আমাকে অনেক ক্ষমতা দিয়েছে। তবে বিবেক-বিবেচনা করে অনেক কিছুই করতে পারি না।’ তিনি ক্ষমতা শব্দটির প্রয়োগের বিরোধিতা করে বলেন, ‘পাওয়ার শব্দটি শুনতে কেমন জানি লাগে। ক্ষমতার অপব্যবহার করার মতো কিছু বোঝায়। আমি মনে করি, রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে, ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি।’
বঙ্গভবন থেকে বের হলে সাধারণ মানুষের বিড়ম্বনায় পড়তে হয় উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সংসদ আমার পুরোনো জায়গা, পুরোনো স্মৃতি। সেখানে যেতে হলে আসা-যাওয়ায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ করে রাখা হয়। ওই সময় সাধারণ মানুষের মুখ থেকে কী বের হয়, তা আমি ভালো করেই জানি। ছাত্রজীবনের স্মৃতি মনে করে তিনি বলেন, ছাত্রাবস্থায় এই জাতীয় ভিআইপির কারণে যানজটে পড়তে হলে আমার মুখ দিয়ে গালি ছাড়া অন্য কিছু বের হতো না। এই কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিড়ম্বনার কথা মনে করে বঙ্গভবন থেকে বের হতে মন চাই না।’
মন চায় শুধু হাওরেই থাকতে কিন্তু আপনারা আমাকে বড় নেতা বানিয়ে পিঞ্জিরায় বন্দি করে ফেলেছেন। সেখান থেকে এখন আর আমার পক্ষে সহজে আসা-যাওয়া সম্ভব নয়। আজ এখানে এসেছি মনে হচ্ছে অতিথি পাখির মতো দুই/এক দিনের জন্য বেড়াতে এসেছি। আবার রাষ্ট্রের দ্বায়ীত্বে আমাকে ওই বন্দি জীবন, বঙ্গভবনে চলে যেতে হবে। হাওরের মানুষ আমি পানির সঙ্গে আমার বেড়ে উঠা কিন্তু ইচ্ছা থাকা সত্ত্বে ও আগের মত আমার হাওরের মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও কথা বলা সম্ভব হয় না। তিনি হাস্যরস করে বলেন, বঙ্গভবনে তো রাজার হালেই আছি। থাকলে কি হবে হাওরের বাতাস খাইতে পারি না। রাষ্ট্রপতি হওয়া আর জেলখানায় থাকার সমান কথা। রাষ্ট্রপতি হওয়া যে কি জ্বালা তা আমি তা টের পাচ্ছি। রাষ্ট্রীয় বিধানে আমাকে ‘বন্দি’ করে রাখা হয়েছে, এটাই হলো এখন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ এবং কষ্ট। পাখিকে যেমন দুধ-কলা দিয়ে পোষা যায় না, আমি যদি একবার এখান থেকে বের হতে পারি তাহলে আর এ খাঁচায় ঢুকব না।
এর আগে বুধবার বিকাল ৩টার দিকে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলা সদরে ডাক বাংলো সংলগ্ন হেলিপ্যাডে উপস্থিত জনতার উদ্দ্যেশ্যে ঠিক এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ। তিনি এর আগে দুপুর দুইটায় ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ অষ্ট্রগ্রাম অবতরণ করেন। অষ্ট্রগ্রাম ডাক বাংলোয় পৌঁছানোর পর পুলিশের একটি সু-সজ্জিত দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে সেখান থেকে প্রেসিডেন্ট নির্মানাধীন বাঙ্গালপাড়া-দেওঘর সংযোগ সেতুর কাজ পরিদর্শনে যান। অষ্টগ্রাম উপজেলায় সফরের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জে তার পাঁচ দিনের সফর শুরু করেছেন। অষ্ট্রগ্রাম ছাড়াও মিঠামইন, ইটনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে তিনি পূর্ব নির্ধারিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন তিনি।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৩৭