somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বকপোলকল্পিত ভালোবাসা

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গল্পের শিরোনাম দেখে ভুল করবেন না,গল্পটি সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন আশা করি ,কয়টা মিনিট ই তো লাগবে !



এই নীহাল,হলে যাবি না?
-মা,আরেকটু ঘুমাতে দাও তো,কতদিন এভাবে ঘুমাই না,কয়টা বাজে?
-সাত টা বাজে । তোর মোবাইলটা সকাল থেকে বাজছে । তুই কি ঘুম ঘুমাস? আমি জেগে গেলাম আর তোর কোনো খবর নাই ।
-সাতটা বাজে? আয় হায়! সকালেই ক্লাস আছে ।হলে জিনিসপত্র রেখেই ক্লাসে যেতে হবে । শিট ।আম্মা নাস্তা রেডি কর । ড্রাইভার কে বল গাড়ি বের করতে,আমি ৫ মিনিটের মধ্যে আসছি ।

নাস্তা খেয়ে নীহাল ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল । জাবিতে পড়ে সে । আজকেই হলে উঠার কথা ।এতক্ষণে মোবাইল দেখার সময় পেল ,আনলক করেই দেখে ৯ টা মিসড কল,প্রায় সবগুলোই নাতাশার দেয়া,নাতাশা ওর গার্লফ্রেন্ড । এইটা তো আজকালকার ফ্যাশন হয়ে গেছে । ভার্সিটিতে পড়লে তো গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড থাকবেই ।

ছোট বেলা থেকেই নীহাল বেহেশতী ভালোবাসার প্রতি আকর্ষীত । রোমিও-জুলিয়েটের জন্য যখন সবাইকে এসাইনমেন্ট লিখতে দেয়া হয়েছিল,তখন নীহাল ৩ পাতার এসাইনমেন্টে লিখেছিল--ধুর,এইসব কিছুতে কোন লাভ নাই,রোমিও তো আন্ডারএজ।এই রসকষ হীন মানুষ হচ্ছে নীহাল ।

নীহালের আশেপাশে সবাই ব্যাটিং করছে । নীহাল কি অডিয়েন্স হবে নাকি? তাই নাতাশার আগমন । নাতাশাও কম যায় না। নীহাল কে যতটা টাইট দিয়ে রাখতে পারে ।

আসলে ভালোবাসা কি? ভালোবাসা হচ্ছে নিঃস্বার্থ ভাবে নিজেকে কোন কিছুর জন্য বিলিয়ে দেয়া -অনেকের কাছে এইটা ব্যাক্তি বিশেষ হতে পারে,অনেকের কাছে অন্য কিছু ।

হলে ব্যাগ রেখেই ক্লাসে দৌড় । পথে নাতাশা । নাতাশা জিজ্ঞেস করল-কি ব্যাপার? ফোন করলে ফোন ধরনা?তুমি কি অন্য কারো সাথে রিলেশন করতেছ নাকি?

-আরে ধুর! কি যে কও না! তোমারে ছাড়া আমার চোখে আর কিছু পড়ে নাকি ? এখন ক্লাস আছে,ক্লাস থেইকা বের হইয়া কথা বলব নে । টাটু ।

ক্লাসে ঢুকতেই সামি জিগাইল-ঐ হারামি,কালকে ফোন ধরস নাই ক্যান,গাঞ্জা খাইয়া ঘুমাইতাছিলি? শালা,তোর ভিতরে ফিলিংস নাই? ভাইব্রেট হইলেও তো জাইগা যাওয়ার কথা।

-কেন ফোন দিছিলি ঐটা ক।

-ভার্সিটির যেই অবস্থা,তোরে হলে আসতে মানা করার জন্য ফোন দিছিলাম ।

-আরে ধুর! এইগুলা ব্যাপার না ।

নাতাশার কি খবর? তুমি তো আবার হেরে ছাড়া থাকতে পারবা না?এল্লিগাই নি আয়া পড়ছ?

-বাদ দে তো!

বোরিং লেকচারের পর ক্লাস থেকে বের হতেই দেখে নাতাশা দাঁড়ায়া আছে । নীহাল বলল-চলো,জেনেটিকের সামনে যাই ।

-হুম,চ্লো। সমাজবিজ্ঞানের সামনে যেই গ্যাঞ্জাম!

জেনেটিকের সামনে গিয়ে নীহাল যেভাবে লাজুক দৃষ্টিতে নাতাশার দিকে তাকিয়ে রইল মনে হইতেছিল যেন কিচ্ছু বুঝে না । নাতাশা আনলিমিটেড কথা বলতেছিল,যত রাগ ছিল সব ঝাড়তেছিল । কিন্তু নীহালের চেয়ে থাকা দেখে কথা থামিয়ে জিজ্ঞেস করল-এই,এমনে কি দেখো? আমার কি রূপ বাড়ছে?

--উহু! থামলে কেন? বলো না!!
--তুমি শুধরাবে না?
--হা হা! !আচ্ছা,তুমি সবসময় আমার বাম পাশে বস কেন?
--তোমার বাম পাশের পাঁজর দিয়েই যে আমাকে আল্লাহ বানাইছেন ,তাই!! আচ্ছা বাবু চলো না এখান থেকে বের হয়ে যাই !এখানে ভাল্লাগতেছেনা।প্রতিদিন মারামারি,ক্যাচাল।অস্বস্তি লাগে।
--আরে কিচ্ছু হবে না।চিন্তা কইর না। চল উঠি,অনেক ফাঁকি দিছি বাড়িতে গিয়ে । কিছু তো পূরণ করতে হবে।
--আচ্ছা,চল। ওহ!আরেকটা কথা।আমরা কিন্তু এই সপ্তাহের শেষে আমরা ঘুরতে যাব কিন্তু ।
-কই যাবা?
-জানি না , এইখানে এখন দম বন্ধ হয়ে আসতেছে ।

নীরবতা ভেঙ্গে নীহাল বলল-হুম!আজকে মিটিং এ বসার কথা সব দলের কর্মীদের সাথে । মিটমাট করে ফেলতে হবে ।আর একটা কথা -আমরা যাচ্ছি । অনেকদিন ডেটিং ও মারি না তোমার সাথে । এখন আপাতত হাতের উষ্ণতা ই দাও । আমি যাই । মিটিং এ যাব,ফোন দিও ।

পরের দিনঃ


ছাত্র হত্যার সংবাদে পুরো হল স্তব্ধ,পুলিশ ঘটনাস্থলে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না । ক্যাম্পাসের ভিতরে সব দোকানপাট বন্ধ । নীহালের নিথর দেহটি মেঝেতে পড়ে আছে । নাতাশা অজ্ঞান হয়ে তার বাম পাশেই পড়ে গেল । কবির সাহেব তার ছেলেকে নিতে আসলেন স্ত্রীকে নিয়ে। মিসেস কবির ছেলের নিষ্পাপ চেহারার দিকে তাকিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন । তাদের সবাইকে শুধু এতটুকুই জানানো হয়েছে যে--মিটিং এ যখন কোনভাবেই কোন সমাধান হচ্ছিল না,তখন ছাত্রবেশে কিছু পশু অস্ত্র বের করে একে অপরের দিকে তাক করে । তাদের মধ্যে মিল ঘটানোর জন্য নীহাল মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেলে পিঠে এবং বুকে ১৫ টি বুলেট ঢুকে ।

তাজা প্রাণ টি দুই মিনিটের মধ্যে নিথর দেহ হয়ে পড়ে গেল শুধুমাত্র ছাত্র রাজনীতির কারণে । ছাত্র রাজনীতির দরকার আছে কিন্তু তা ভালো কাজে ব্যবহার করার জন্য,যোগ্য নেতা গড়ে তোলার জন্য।খুনাখুনি,মারামারি ছাত্রদের বিষয় নয় ।

গল্পের শিরোনামের অর্থ হচ্ছে মনোকল্পিত বিষয়,নিজের মনগড়া । ব্যাপারটা পুরো কাল্পনিক । কিন্তু বাস্তবে যাতে রূপ না পায় তার জন্য ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা । দয়া করে সবাই সতর্ক থাকি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:১৯
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×