somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি অসুস্থ বাঙালি ।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-হ্যালো নাঈম,যাবি?

-কই যামু?

-আরে লাউঞ্জে যামু ।

-আমি তো আমার জীবনেও যাই নাই,যায়া ইন্সাল্ট খামু?

-আরে ধুরো বাল,আমরা আছি না ?

-তোরা আমার কি করবি জানা আছে,তাছাড়া আজকে তোদের ঐ বালের সীসা খাওয়ার কি প্রয়োজন পড়ল ?

-পুরাই স্মোকি একটা মেয়ে-তুইতো চিনস মনে হয় ঐযে আমাদের সাথে ব্রিটিশ কাউন্সিলে পড়ছিল যে হাংকি পাংকি টাইপ,ও অফার করল । আমারে আর তোরে । ওর সাথে নাকি আরেকটা ফ্রেন্ড যাবে,মেয়ে ।

-ও আচ্ছা । আমার কি যাওয়া উচিত হবে কিনা বুঝতেছি না তবে কখন যাবি?

-এইতো হাফ এন আওয়ার পর । ভালো কথা, আজকে চে এর জন্মদিন না ?আসার সময় চে এর টিশার্ট টা পড়া আসিস ।

-ওকে। রাখি তাইলে,রেডি হই । ওক্কে বাই ।

নাঈম ৩.৩০ এ রাইফেলস স্কোয়ার এ পৌছল । গিয়ে দেখে আকাশ আর ২ টা মেইয়ে দাঁড়িয়ে আছে ,যার মধ্যে একজনকে সে চিনে আরেকজন হচ্ছে তার বান্ধবি may be .নাঈম আগায়া গেল । চে'র টি-শার্ট আর ঠোঁটের উপরে হালকা গোঁফ এবং নিচে খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে নাঈম কে পুরা চে গুয়েভারার মত মনে হচ্ছে । যদিও সে একটু শুকনা । তবে দেখতে এত খারাপ না । নাঈম তাদের কাছে পৌছালে তার বান্ধবীরা তাকে এসে জড়িয়ে ধরে বলে -- তোর এত্ত সময় লাগল? আমরা সেই কতক্ষণ ধরে টোর জন্য ওয়েট করছি ইউ নো ? বাদ দে,ঐটা ব্যাপার না। চল,গুলশানের দিকে বা বনানীর দিকে যাব । গাড়িতে উঠ । গাড়ি ড্রাইভ করবে কে ?প্রিয়াংকা বলে উঠল - আমি । গাড়িতে উঠে নাঈম সামনের সিটে বসল । আকাশ আর প্রিয়াংকার বান্ধবী পিছনে । নাঈম প্রিয়াংকাকে বলল - তুই এইটা কি পড়ছিস ?

-কই? টপস আর জিনস ।

-জিনস কই এইটা তো হাফপ্যান্ট ,মেয়েরা এইসব পড়ে? তোকে দেখে মানুষ কিভাবে তাকাইতেছে তুই জানিস?

-তাকানোর জন্যেই তো পড়া। ইট মেক্স মি কমফর্টেবল ।

-হোয়াটসোএভার । বাই দা ওয়ে গাড়িতে উঠার পর থেকেই তোর বান্ধবী আর আকাশের মধ্যে ঘুচুরপুচুর চলতেছে,কাহিনী কি?

-জানি না,বাট এটা টাদের ব্যাপার ।ঐযে এসে গেছি । সীটবেল্ট খুইলা ফেল,ইটস পার্টি টাইম,ম্যান ।

নাঈম সিটবেল্ট খুলে ফেলল । তার কেন জানি মনে হচ্ছে দুইমাস এইসব মানুষদের সাথে ক্লাস করেছে,ঘুরেছে ।বাট তাদেরকে আজকে নতুন করে চিনতেছে । সে নেমে আকাশের কাধে হাত রেখে উপরে দোতলায় উঠতে লাগল । পিছনে দুই স্মোকি তরুণী -ভাব ই আলাদা । টাকা পয়সার চিন্তা নাই । মাইয়ারা দিবে । আজকে তো যত টানা যায় ।কি শান্তি মনে !

ভিতরে ঢুকে প্রথমে হালকা অন্ধকার,পরে আরো গাড়,পরে আরেকটু গাড়ো অন্ধকারের মধ্য দিইয়ে অবশেষে সবুজাভ এবং হালকা লাল একটা ঘরে ঢুকল। গান চলতেছে -

''আমি তোর মত না,তুই আমার মত না

আমি তোর মত ফাপঁড় মাইরা কাপড় ছিড়ি না ...''

এই গান শুইনা তো ভাব আরো বাইড়া গেল । নাচতে নাচতে সিট খুইজা বসল । কিন্তু একটা সমস্যা হইল সিট টা একটু নিচা ।

ব্যাপার না । আকাশ মিন্ট আর গ্রেপ ফ্লেভার অর্ডার করল । নাঈমের চোখে বিষ্ময় ।এত বড় হয়ে গেছে এই জিনিস আগে কখনো দেখে নাই । চোখ বড় বড় করে তাকায়ে আছে আশেপাশের মানুষগুলোর দিকে । ছেলে-মেয়ের পার্থক্য মনে হয় এই দুনিয়াতে করা হয় না । এই ঘরটা হচ্ছে আলাদা দুনিয়া । যাই হোক,সীসা আসল । জীবনের ফার্স্ট টান দিবে,অনেক চিন্তা । আরেকজন রে দেইখা টান দিল । পাশ থেইকা প্রিয়াংকা বলল-দোস্ত,জোরে টান দে,যত শক্তি আছে । নাঈম চোখ বন্ধ করে টান দিল । ভিতরে নিয়ে গলবিল দিয়ে ঢুকাইল ধোয়া । যখন বের করল তখন মনে হইল এর থেকে দশটা গোল্ড লিফ ও ভালো । ধুর বাল,ট্যাকা দিয়া মাইনষে এই জিনিস খায়? চরম মেজাজ খারাপ । কারো সাথে কথা না বলে টয়লেটে গেল আর প্রতিজ্ঞা করল আর জীবনেও খাবে না । আকাশকে বলল -চল দোস্ত,চলে যাই । ভাল্লাগতেছে না । এর থেকে রাস্তায় দাড়ায়া সিগারেট খাই । আর প্রিয়াংকা তোরে একটা কথাই বলার আছে -আর জীবনেও আমার সাথে যোগাযোগ করবি না ।

আকাশ কে নিয়ে নাঈম বের হয়ে বলল তুই না কস চে'র গ্যাঞ্জি পড়লে খুব ম্যানলি লাগে ?আজকে জাইনা রাখ -ম্যানলি গ্যাঞ্জি পড়লে না তোর ভিতরের মানুষকে ঘুম থেকে উঠাইতে পারলে লাগবে ।



অনেকদিন পরে আকাশ তার ফ্রেন্ড দের নিয়ে ছাদে বসে গান গাইছে আর পিনিক নিতেছে । হঠাৎ দেখল পাশের বাসায় আমাদের দেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়তেছে । কেন জানি হঠাৎ আকাশ চুপ হয়ে গেল । তার দেখাদেখি অন্য সবাই ঐ দিকি তাকাইল । আহমেদ বলল-ঐ কি দেখস ?

-দেখ,আমরা এখানে বসে মদ খাচ্ছি । আর আমাদের ভাইরা যারা যুদ্ধ করে কবরে শুয়ে আছেন ঐ পতাকার জন্য,তার সামনে বসেই আমরা মদ খাচ্ছি ।

আহমেদ বলল-ধুর বাল,কি কস না কস । কিয়ের মধ্যে কি ? এই যে আমরা ধানমন্ডিতে লীগ করি ,দল করি আমাদের কি কারো ধরার সাহস আছে ? সেন্টিমেন্ট কই রাখস ? আয় এইখানে বয় । কয়েক গ্লাস খাইসস তো । পিনিকে ধরছে । । । ।
************************************


স্কুল জীবনে প্রমথ চৌধুরীর একটা কথা খুব ভালভাবে অন্তরে গেঁথে গিয়েছিল।

''ব্যাধিই সক্রামক স্বাস্থ্য নয়''

পশ্চিমাদের ভাল জিনিস নেই তা বলবনা কিন্তু সেগুলো আমদানি না করে ভ্যালেন্টাইন্স ডে,থার্টি ফার্স্ট নাইট,লিভ টুগেদারের মত জিনিস সমানে আমদানি করে বাঙ্গালি প্রমথ চৌধুরীর কথা খুব ভালভাবেই প্রমান করে দিল।মাভৈঃ!মাভৈঃ!

১লা মে ২০১১ তে আমি ব্লগে আমার পড়া সবচেয়ে ভালো কমেন্ট পড়েছিলাম,সেটা হচ্ছে -

''তোরা বড় লোক আছিস ভালো মন্দ খাস পরী লাগাস..ফুল হয়...., আমরা গরিব মানুষ সুটকি খাই পেতনী লাগাই...ভুত হয়...।

ভাল আর মন্দ তফাতটা বেশী না

আগে মানুষ মন্দটাকে মন্দ মনে করে করত আর এখন মানুষ মন্দটাকে ভাল মনে করে করে।

কেউ সীসা লাউঞ্জে যায় আর কেউ পার্কে বইসাই কাম সারে।

নিজে লাইক করি না কিন্তু উঁকি মেরে দেখি >>> সাধ আছে সাধ্যও আছে কিন্তু খারাপ হওয়ার সাহস নাই।''

শেষে চে'র জীবনের সর্বশেষ উক্তির কথা বলি--''আমি ভাবছি,বিপ্লবের অমরত্বের কথা''

আমিও বিপ্লবের অমরত্ব চাই। ভাষা শহীদের প্রাণের বিনিময় চাই,এবং তা অবশ্যই নিজের ভাষার প্রতি আজীবন ভালোবাসা দেখিয়ে,পশ্চিমা কিংবা ভারতীয়দের অনুসারে নয় ।

ডিসক্লেইমারঃদাঁড়িকে অবজ্ঞা করি নাই,রাজনৈতিক ক্যাচালের জন্যে লীগ আর দল টানি নাই । এইটা শুধুই আমার হাবিজাবি চিন্তাভাবনা নিয়ে একটা পোষ্ট । পোষ্ট টা অনেকের কাছে দৃষ্টিকটু লাগলেও লাগতে পারে কিন্তু ব্যাপারগুলো সত্যি । আপুদের কাছে মাফ চেয়ে নিচ্ছি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৩৬
৪১টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×