ক্রিং!!! ক্রিং!!! ক্রিং!!!
(ঘুমজড়ানো কন্ঠে শুভ্র ফোন ধরল)
-হ্যালো
-কিরে শুভ্র তুই এখনও ঘুমাচ্ছিস! ভার্সিটি যাবিনা!!!
-কয়টা বাজে?
-সকাল ৯টা
-(বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে) কি!!! ৯টা বেজে গেছে? তুই কোথায়?
-আমি তো রওনা দিয়েছি, গাড়ীতে।
-আচ্ছা, তুই যা, আমি ১১টার আগেই পৌঁছে যাব যেভাবেই পারি।
-ঠিক আছে, তাড়াতাড়ি আয়, আজ কিন্তু নার্গিস ম্যাডামের ক্লাস, দেরী হলে তোর খবর আছে।
-খাইসে! ভুলেই গিয়েছিলাম আজ যে এই দজ্জাল ম্যাডামের ক্লাস, ঠিক আছে আমি বেরুচ্ছি কিছুক্ষণের মধ্যেই।
-ওকে আমি ফোন ছাড়লাম।
নিলা ফোনটা রাখার পর পড়িমড়ি করে ছুটল শুভ্র ওয়াশরুমে, দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নিয়ে বের হয়ে রেডি হয়ে ভার্সিটির ব্যাগ নিয়ে যেই না বের হবে, অমনি পেছন থেকে মায়ের হাঁক-
-কিরে তুই নাস্তা না করে কোথায় যাচ্ছিস?
-সময় নেই মা, আজ খুব ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস, নাস্তা করে বের হলে ক্লাস মিস হয়ে যাবে, পরে ভার্সিটিতে গিয়ে খেয়ে নেব।
বাসার গলি থেকে বের হয়ে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে শুভ্র দেখল বাস কাউন্টারের সামনে প্রচন্ড লম্বা লাইন। একে তো অফিস টাইম, তারউপর এই রুটের বাসের সংখ্যা কম, তাই এই সময়টাতে বাসের লম্বা লাইন প্রায়ই থাকে। শুভ্র ভাবল, যদি আজ সে এই লম্বা লাইন পেরিয়ে বাসে ওঠে, সেই বাস ভার্সিটিতে পৌঁছতে পৌঁছতে ক্লাসের অর্ধেক সময় পেরিয়ে যাবে, আর নার্গিস ম্যাডাম যে কড়া মহিলা, পাঁচ মিনিট লেট হলে ক্লাসে ঢুকতে দেননা। সামনেই পরীক্ষা, তাই এখন ক্লাস মিস দেয়া মানে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারা। তাই শুভ্র উপায়ন্তর না দেখে সিএনজি ট্যাক্সিতেই যাওয়া মনস্থির করলো। ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে গিয়ে গন্তব্যস্থলের কথা বলতেই ট্যাক্সি ড্রাইভার যা ভাড়া চাইলো, অন্যসময় হলে শুভ্র হয়তো ড্রাইভারের গায়ে দুটো চড় মেরে বসতো। কিন্তু এখন মেজাজ গরম করার সময় নেই, যেকোন উপায়েই হোক সময়মত ক্লাসে পৌঁছাতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে ট্যাক্সীতেই যাত্রা শুরু করলো।
রাস্তার ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম পেরিয়ে শুভ্র যখন ভার্সিটিতে পৌঁছালো, ক্লাস শুরু হতে তখন বাকি মাত্র মিনিট সাতেক। তাড়াতাড়ি ট্যাক্সি ড্রাইভারকে ভাড়া দিয়ে সে লিফটের দিকে দৌঁড়ে গেল। লিফট ক্লাসের ফ্লোরে থামতেই তাড়াহুড়া করে লিফট থেকে বের হয়ে শুভ্র ক্লাসে ঢুকলো।ক্লাসে পৌঁছে দেখল ছাত্র-ছাত্রী সবাই চলে এসেছে, সামনের দিকের সিটগুলো প্রায় সবই ফিল-আপ হয়ে গেছে। শুভ্র তাই আর দেরী না করে পেছনের সিটের দিকে বসার জন্য পা বাড়াতেই শুনতে পেল সামনের দিক থেকে তাকে কেউ ডাকছে-
-এই শুভ্র, এই ….....
শুভ্র তাকিয়ে দেখল নিলা ডাকছে, সে পাশে একটি জায়গা রেখেছে শুভ্রর জন্য। তাড়াহুড়ার করে ক্লাসে ঢোকার কারণে শুভ্র প্রথমে খেয়াল করেনি যে নিলা সামনের দিকে বসেছে। শুভ্র মনে মনে নিলাকে ধন্যবাদ জানালো, কারণ পেছনে বসলে এমনিতেই ক্লাসে মনোযোগ দেয়া যায়না, তারওপর এই দজ্জাল ম্যাডামের ক্লাসে মনোযোগ দিতে না পারলে পরীক্ষার সময় অবস্থা লেজেগোবরে হয়ে যাবে।
সিটে বসে নিলাকে যে শুভ্র থ্যাঙ্কস জানাবে, সেই সময়টুকুও সে পেলনা, কারণ এরইমধ্যে ম্যাডাম চলে এসেছেন ক্লাসে। ক্লাসে ঢুকেই কাঠখোট্টা কন্ঠে গুড মর্নিং বলার পরই ম্যাডাম তাঁর ক্লাস লেকচার শুরু করলেন।
(চলবে).....
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:২৬