somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহবাগের চলমান আন্দোলন নিয়ে এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর ভ্রান্ত ধারণা এবং আমার প্রতিউত্তর

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল সকালে প্রাক্তন একজন সহকর্মীর কাছ থেকে একটা লেখা পেলাম, লেখাটি লিখেছেন তাঁর ফেসবুকের একজন বন্ধু। লেখাটি নিচে হুবহু তুলে দিলাম, তার লেখার নিচে আমার প্রতিউত্তরও আমার ঐ সহকর্মীকে পাঠিয়েছি, আমার উত্তরটা তিনি ঐ লেখকের ফেসবুকে পোষ্ট করবেন। আমার ফেসবুকের সকল বন্ধুদের জ্ঞাতার্থে দুটি লেখাই নিচে দিলামঃ

মূল লেখাঃ

দয়া করে যুদ্ধঅপরাধীদের ‘রাজাকার’ বলে সম্বোধন করবেন না। ‘রাজাকার’ একটি উর্দু শব্দ যার অর্থ সাহায্যকারী। এর উৎপত্তি আরবী ভাষা থেকে যেখানে আল্লাহ্‌র সাহায্যকারীদের এই নামে ডাকা হত। তাই যেসব মুসলিম ভাইবোনরা দিনরাত ‘রাজাকার’ শব্দটি গালি হিসেবে ব্যবহার করছেন এবং সব রাজাকারদের মৃত্যু ও ধ্বংস কামনা করছেন তারা মূলত আল্লাহ্‌র সকল সাহায্যকারীদের গালি দিচ্ছেন। এর মধ্যে সকল নবী-রাসুল ও সাহাবীরাও পরে। আল্লাহ্‌ আমাদের সকলের জানা-অজানা গুনাহসমূহ যেন মাফ করেন।

যাইহোক গত কয়েকদিন দেশের পরিস্থিতি দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। আমিও চাই অপরাধীর সাজা হোক, সে অপরাধ অতীতের হোক কিংবা বর্তমানের, সে অপরাধী সরকার দলের হোক, বিরোধী দলগুলোর হোক কিংবা নির্দলীয়। তারপরও বিভিন্ন কারনে কোনোভাবেই শাহাবাগের এই আন্দোলনকারীদের মন থেকে সাপোর্ট করতে পারছিলামনা। সত্যি বলতে মানুষের উত্তেজনা দেখে ভাবলাম কিছু বলে লাভ হবেনা উল্টো গালমন্দ শুনবো তাই চুপ ছিলাম। কিন্তু গত ২-৩ দিন ধরে এমনসব ব্লগ আর পোস্ট দেখলাম যেগুলো পড়ার পর আর চুপ থাকতে পারলামনা। এখন আমি নির্ভয়ে বলতে পারি না আমি কোন অপরাধীদের সাপোর্ট করি না শাহাবাগের আন্দোলনকারীদের। কিছু লেখার আগে এই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী তথাকথিত নেতাদের ফেসবুক প্রোফাইল ও ব্লগগুলা ঘেটে দেখলাম। এদের মধ্যে কেউ কেউ আওয়ামীলীগ করে আর অনেকেই আবার গর্বিত নাস্তিক। শুধু যদি নাস্তিক বা কাফের হত এত কথা বলতামনা্‌, কিন্তু এরাতো অসুস্থ তাই না বলে পারছিনা। এরা আল্লাহ্‌র নামে ও তার রাসুল(সাঃ)এর নামে যেসব জঘন্য আর নোংরা কথা বা কবিতা লিখে লিখে শেয়ার করছে তা কোনো সুস্থ মানুষ লিখতে পারেনা সে যে ধর্মেরই হোক না কেনো। যারা আল্লাহ্‌ বা রাসুল(সাঃ)এর প্রতি সম্মান দেখানোতো দূরের কথা এদেশের লক্ষ্য কোটি মুসলমানের ধর্মীয় মনোভাবকে এভাবে অপমান করতে পারে তারা কিভাবে দেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণ করবে? এদের দ্বারা কারো মঙ্গল হতে পারেনা। মাত্র কয়েকমাস আগের কথা, কারোকি মনে পরে? আমাদের প্রিয় নবী(সাঃ)কে বেঙ্গ করে যখন শর্টফিল্ম তৈরী করা হল তখন এই আমরাই সারা পৃথিবীর মুসলমানদের সাথে একযোগে আন্দোলন করি। এর ফলস্বরূপ এদেশে ইউটিউব তো এখনো বন্ধ। ধর্ম নিয়ে এতটাই স্পর্শকাতর আমরা। তাহলে এখন কোথায় গেছে আমাদের সেই ধর্মীয় বিশ্বাস। যেসব ব্লগাররা খোলাখুলিভাবে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুল(সাঃ) কে নিয়ে বেঙ্গ করছে তাদের বিদ্রোহ বা তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করাতো দূরে থাক উল্টা এই আমরাই তাদের সাপোর্ট করছি যে যেখান থেকে পারি। এদের এক ডাকে ছুটে যাচ্ছি শাহাবাগ চত্বরে যেখানে বেশীরভাগ মানুষেরই এক ওয়াক্ত নামাজ পড়ার সময় নেই, যেখানে রাসুল(সাঃ) এর সুন্নত নিয়ে বেঙ্গ করা হচ্ছে আর প্রতিনিয়ত আল্লাহ্‌র আদেশ অমান্য করা হচ্ছে। এরাতো স্পষ্ট কুফরি করছে আর এদের সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও কি কাফেরদের দলে শামিল হয়ে যাচ্ছিনা? তাই আমার মুসলমান ভাইবোনদের কাছে প্রশ্ন করি, এ ধরনের একটি আন্দোলনকে আমরা কিভাবে সাপোর্ট করতে পারি? আমাদের ঈমান কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে?

আমার কষ্ট হচ্ছে শুধু সেসব মুসলমান ভাইবোনদের জন্য যাদের দেশপ্রেমের মনোভাবকে ব্যবহার করে কাফেররা আন্দোলনের নামে নিজেদের স্বার্থ আদায় করে নিচ্ছে। সত্যিকার অপরাধীদের বিচার আমরা সবাই চাই, তবে তা শুধু ৭১ এর অপরাধীরাই কেন? বিগত ৪১ বছর ধরে যারা দেশপ্রেমের মুখোশ পরে আমাদের স্বাধীনতাকে প্রতিমুহূর্তে হত্যা করছে, দেশের সম্পদ চেটেপুটে খাচ্ছে, আমাদের বাকস্বাধীনতা কেরে নিয়ে বড়বড় মঞ্চে বক্তৃতা দিচ্ছে, যখন যাকে ইচ্ছা গুম করছে, যাকে খুশী খুন করছে; এরাকি দেশদ্রোহী না? শাহাবাগ এর আন্দোলনের যারা মূল নায়ক তারা যদি সত্যিই কোন দলনিরপেক্ষ হত তাহলে তারা ৭১ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যত দেশদ্রোহী আছে সবার বিরুদ্ধে আন্দলন করত। আফসোস! এখন আর এই আন্দোলন যুদ্ধাপরাধী বিচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটি এখন মোর নিয়েছে ইসলাম বিরোধী আন্দোলনে।

আমি কোনো কলামিস্ট না, না আমি ব্লগার, রাজনীতির নোংরামি সম্পর্কেও আমি তেমন কিছু জানিনা, তাই আমি অত ভাল লিখতেও পারিনা। শুধু জানি আমি কোনো দেশদ্রোহীকে সাপোর্ট করিনা না আমি ইসলামের শত্রুদের সাপোর্ট করি কারণ আমাকে একদিন মহান আল্লাহ্‌র কাছে ফিরতে হবে আর সেদিন আমাকে জবাবদিহী করতেই হবে। আমার লেখা পরে অনেকেই হয়ত বিরক্ত বা রাগ হবেন। উল্টাপাল্টা কমেন্ট ও আসবে, তবে আমি নিশ্চিত আপনি যদি মুসলমান হয়ে থাকেন তাহলে আমার পয়েন্ট অবশ্যই বুজবেন। আল্লাহ্‌ যেন আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করেন।



আমার প্রতিউত্তর যেটা আমি তৈরী করেছি সেটা নিচে দিলামঃ



প্রিয় "স" (লেখকের নামের আদ্যক্ষর "স" দিয়ে শুরু)


আপনার লেখাটা পড়লাম কয়েকবার। পড়ে মনে হল আপনি লেখাটা লিখার আগে প্রয়োজনীয় হোমওয়ার্ক করে আসেননি। আমার কেন সেকথা মনে সেগুলো নিচে এক এক করে বলছি দয়া করে মনোযোগ দিয়ে আমার যুক্তিগুলো পড়বেন।

প্রথমতঃ “রাজাকার” শব্দটির ব্যাখ্যায় আপনি বলেছেন শব্দটির অর্থ সাহায্যকারী আর আল্লাহ্‌র সাহায্যকারীকে এই নামে ডাকা হত, তাই রাজাকার শব্দটি গালি হিসেবে ব্যবহার করা ঠিক নয়। আপনার এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে চাই, আপনার যদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন ইতিহাস সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র ধারণা বা পড়াশুনাও থেকে থাকে, তাহলে আপনার জানার কথা “রাজাকার” শব্দটি ১৯৭১ সালে যারা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর এদেশীয় দোসর ছিল, তাদেরকে বোঝানো হয়েছে। সেই সময়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী নামে একটি বাহিনী গঠন করা হয়েছিল, যাদের একমাত্র কাজ ছিল পাকিস্তানী দোসরদের সহায়তার উদ্দেশ্যে দেশের সাধারণ জনগণের ওপর নির্বিচারে হত্যা,ধর্ষণ,লুটতরাজ,অগ্নিসংযোগ এসমস্ত কর্মকান্ড চালানো। দয়া করে লক্ষ্য করুন, এখানে আমি বলেছি পাকিস্তানী দোসরদের সহায়তায় বাহিনী গঠনের কথা, রাজাকার শব্দটির অর্থ এখানে পাকিস্তানী দোসরদের এদেশীয় সহায়তাকারীকেই বোঝানো হয়েছে। আপনার মত জ্ঞানী একজন মানুষের এটা অবশ্যই জানা থাকার কথা যে যেকোন ভাষাতেই এমন অনেক শব্দ আছে যার অর্থ এক এক জায়গায় এক একরকম ভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এখানে রাজাকার শব্দটির অর্থও সেই অর্থেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে, কোন অবস্থাতেই কোন নবী রাসুল বা সাহাবীদের অপমানের উদ্দেশ্যে এই শব্দটি কেউ ব্যবহার করেনি।

এবার আসা যাক আপনার লেখার দ্বিতীয় প্যারার বিষয়বস্তুতে। আপনি বলেছেন আপনি চান সকল অপরাধীর সাজা হোক, চাই সে সরকারী দলের হোক বা বিরোধী দলের, আপনার এই উপলব্ধির জন্য আপনাকে শ্রদ্ধা জানাই, কারণ সব মানুষের এই উপলব্ধি থাকেনা, অনেক মানুষ আছে যারা সরকারী বা বিরোধী দলের গোঁড়া সমর্থক, তারা মনে করে একমাত্র তাদের দল ছাড়া আর সব দলে যুদ্ধাপরাধী আছে, অন্ততঃ আপনি সেই দলে পড়েননা, এজন্য আপনাকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আপনি শাহবাগের চলমান আন্দোলনকে অত্যন্ত খোঁড়া যুক্তিতে ব্যাখ্যা করেছেন, তার প্রতিউত্তরে কিছু কথা এখানে বলতেই হয়। প্রথমেই আপনি বলেছেন, গত ২/৩ দিন এমন সব ব্লগ পড়ে আপনি আর চুপ থাকতে পারেননি, তাই আপনার কাছে শাহবাগের আন্দোলনের কোন অর্থই নেই। শাহবাগের আন্দোলন যারা শুরু করেছিলেন, তারা মূলত একদল তরুণ কিন্তু অভিজ্ঞ ব্লগার। এসমস্ত ব্লগারদের বাংলা ব্লগক্ষেত্রে বিচরণ ৬/৭ বছর ধরে। দেশের প্রত্যেকটি সংকটকালীন মুহুর্তে তাদের কিবোর্ড চলেছে দ্ব্যর্থহীনভাবে। ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহ, কিংবা তারও আগে-পরে দেশের নানান অস্থিরতার সময় সবচেয়ে আগে ব্লগাররাই তাদের কর্মকান্ড প্রকাশ করেছেন। অনেক অনভিজ্ঞ মানুষ যাদের ব্লগ তথা বাংলা ব্লগ সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই, তারা এখন বলে থাকেন দেশে এত সমস্যা বিরাজমান, যেমনঃ পদ্মা সেতু দুর্নীতি, সুরঞ্জিতের রেল কেলেঙ্কারী,চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, এসব ব্যাপারে যাদের কোন মাথাব্যাথা নেই, তারা হঠাৎ কেন শাহবাগের এই ফালতু আন্দোলন শুরু করলেন? তাদের এইসব ভ্রান্ত ধারণার প্রতিউত্তরে আমার একটাই কথা বলার আছে, ২০০৫ সালে বাংলা ব্লগ শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলা ব্লগে যে গণজাগরণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে, ব্লগ সম্বন্ধে মোটামুটি পড়াশুনা না থাকলে সেটা কারো অনুধাবন করার কথা নয়। ব্লগাররা শুধু দেশের সামাজিক সমস্যাগুলোতেই নয়, বিভিন্ন জনহিতকর কাজেও বিভিন্ন সময় সম্পৃক্ত ছিলেন এবং এখনো আছেন। আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তিরা অসুস্থ হলে ব্লগাররা সবসময় নিজেদের উদ্দেগ্যে ফান্ড কালেকশন করে তাদের সাহায্য করেছেন, সেসম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে গেলে এই লেখাটা অনেক বড় হয়ে যাবে তাই আর লিখলামনা। শাহবাগের আন্দোলনটা ব্লগাররা মূলত শুরু করেছিলেন চিহ্নিত রাজাকার (লক্ষ্য করুন এখানে আমি রাজাকার শব্দটি ইচ্ছাকৃতভাবেই উল্লেখ করলাম, কারণ এখানে রাজাকার শব্দের অর্থ ১৯৭১ এ পাকিস্তানী হানাদারদের এদেশীয় সাহায্যকারী, রাজাকার শব্দের অর্থ এখানে আল্লাহ্‌র সাহায্যকারী বোঝানো হয়নি) কাদের মোল্লার ফাঁসীর দাবীতে। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৩৪৫জন নিরস্ত্র মানুষকে ৭১ এ হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে, ঐ ৩৪৫ জন মানুষের মাঝে ছিল কবি মেহেরুন্নেসা, যিনি ৭১ এ মিরপুরে বিহারীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে একটি জনমত গড়ে তুলেছিলেন, তাঁর এই অপরাধের কারণে কাদের মোল্লা তাঁকে (মেহেরুন্নেসা) হত্যা করে লাশ সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে রেখেছিল। একবার কল্পনা করুণ এই ভয়াবহ দৃশ্যটা, আমি জানিনা ১৯৭১ সালে আপনার কাছের বা নিকট আত্মীয়দের কেউ হতাহত হয়েছিল কিনা, যদি হয়ে থাকে তবে আপনি অবশ্যই বুঝবেন স্বজন হারানোর বেদনা কি ভয়াবহ হতে পারে। আজকে ব্লগাররা যে আন্দোলন শুরু করেছেন কাদের মোল্লার ফাঁসীর দাবীতে, তাদের হয়তো অনেকেই এভাবে প্রত্যক্ষভাবে স্বজন হারানোর বেদনায় পড়েননি, কারণ তাদের জন্ম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পরে অথবা মুক্তিযুদ্ধকালীন তাদের বয়স খুবই কম ছিল। কিন্তু তারা এখন দেশকে তাদের মায়ের মতই ভালবাসেন, তারা জানেন এই দেশের ওপর দিয়ে জামায়াতে ইসলাম এবং সকল রাজাকার,আল-বদর,আল-শামস বাহিনী কি নারকীয় অত্যাচার চালিয়েছিল। অনেকেই বলে থাকেন যে যুদ্ধাপরাধী কি শুধু জামায়াতে ইসলামীতেই আছে নাকি? অন্যান্য দলেও তো আছে, তাদের বিচার হচ্ছেনা কেন? বিচার হলে সবার বিচারই হওয়া উচিৎ। তাদের এই কথার প্রতিউত্তরে একটা কথাই বলার আছে, এখন যাদের বিরুদ্ধে বিচার হচ্ছে, তাদের সবাই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, দেশে –বিদেশে সব জায়গায় তাদের যুদ্ধাপরাধের কুকীর্তির সবিস্তারিত বর্ণনা আছে, এই ক্ষেত্রেও ব্লগারদের ভূমিকা অনস্বীকার্য, কারণ যুদ্ধাপরাধীদের কুকীর্তি নিয়ে অনেক দালিলিক প্রমাণভিত্তিক লেখা এই ব্লগেই বহুবার প্রকাশিত হয়েছে। ব্লগার এবং সর্বোপরি তরুণ প্রজন্ম জামায়াত এবং বিএনপির এসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতেই শাহবাগের আন্দোলনে সামিল হয়েছেন, যা শুধু এখন শাহবাগেই সীমাবদ্ধ নেই, চট্টগ্রাম,খুলনা,সিলেট সহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, এমনকি সারা বিশ্বের আনাচে-কানাচে যেখানেই বাংলাদেশীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন, তারা তাদের সাধ্যমত আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, একটু চোখ কান খোলা রেখে ব্লগ বা অন্যান্য অনলাইন মিডিয়াতে গত কয়েক সপ্তাহ চোখ বুলালেই সেটা আপনার পরিষ্কার হওয়ার কথা। আপনি আরো বলেছেন ব্লগাররা ইসলাম সম্বন্ধে নোংরা কথা ফেসবুক বা অনলাইনে ছড়াচ্ছে, কতটা নির্বোধের মত বুদ্ধি থাকলে এ কথা মানুষ বলতে পারে আমার ধারণা নেই। বিশেষ করে যে ব্লগারকে উদ্দেশ্য করে এসমস্ত কথা ফেসবুক বা অন্যান্য অনলাইন মিডিয়াতে ছড়ানো হচ্ছে, তার বিপরীতে এটা ইতোমধ্যেই প্রমাণ হয়ে গেছে যে রাসুল(সাঃ) কে অশালীন ভাষায় গালি দয়ে খোলা ঐ ব্লগটি (নুরানীচাপা) নিহত ঐ ব্লগারের খোলা নয়, যার দালিলিক প্রমাণ ইতোমধ্যেই ফেসবুকে প্রকাশ পেয়েছে, দয়া করে সেগুলোতে একটু চোখ বুলিয়ে নেবেন।

আপনি আপনি আপনার লেখার শেষের দিকে বলেছেন যে শাহবাগে যারা আন্দোলন করেছেন তারা ইসলামের ধারেকাছেও নেই, এক ওয়াক্ত নামাজও পড়েন কিনা সন্দেহ আছে। আপনার এই মনোভাবেই পরিষ্কার প্রকাশ পাচ্ছে যে আপনি চলমান আন্দোলনে সত্যিকার অর্থে কি হচ্ছে সে সম্বন্ধে কোন ধারণাই রাখেননা। যদি ধারণা রাখতেন তাহলে আপনি জানতেন যে, শাহবাগের আন্দোলন চলাকালীন অনেক মানুষই জামাতে মিলিত হয়ে ঐ স্থানেই নামাজ আদায় করেছেন, অনেক দাঁড়ি-টুপিওয়ালা ভদ্রলোক যারা অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন আলেম হিসেবে সমাজে পরিচিত, তাঁরা শাহবাগের এই আন্দোলনে শরীক হয়েছেন, তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনে সহমর্মিতা জানিয়েছেন, এসমস্ত আলেমদের মধ্যে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া জামাতের ইমামও শরীক ছিলেন, আপনার হয়তো জানা নেই এই কথা। চট্টগ্রামের প্রেস ক্লাবে চলমান আন্দোলনেও নামাজের সময় হলে সকল স্লোগান,গান বাজানো বন্ধ থাকে, আন্দোলনকারীদের অনেকেই পার্শ্ববর্তী মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করেছেন। অন্যান্য শহরের আন্দোলনগুলোতেও নামাজের সময় যথেষ্ট শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হচ্ছে। সুতরাং আন্দোলনকারীরা ইসলামকে অবজ্ঞা করছেন, আপনার এই ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। ২/৩ দিন ব্লগ ঘেঁটে যদি আপনার ব্লগার এবং তরুন প্রজন্মের আন্দোলন নিয়ে এমন ধারণা হয়ে থাকে, তাহলে আপনাকে অনুরোধ করব, দয়া করে গত ৬/৭ বছরের বাংলা ব্লগের ইতিহাস নিয়ে একটু পড়াশোনা করুন, তাহলেই বুঝতে পারবেন দেশের প্রত্যেকটি সমস্যার সময় ব্লগাররা সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন এসবের প্রতিবাদে।

আমার লেখাটা অনেক বড় হয়ে গেল, সেজন্য দুঃখিত। কিন্তু আপনার ধারণাগুলোর কাউন্টার হিসেবে এসব কথা না বললেই চলছিলনা। দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি যদি আপনার বিন্দুমাত্র ভালোবাসা,শ্রদ্ধা থেকে থাকে, তাহলে অনুরোধ করব দয়া করে যারা দিনের পর দিন রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, সশরীরে না হোক, অন্ততঃপক্ষে হৃদয় দিয়ে হলেও তাদের মূল্যবোধটা অনুধাবন করুন।

মহান আল্লাহ্ আপনার অন্তরে শুভ বুদ্ধির উদয় করুন, এই দোয়া করছি। ভালো থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:২৮
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×