৫০ বছর পুর্তি, এ যেন নতুন পুরাতনদের এক মিলন মেলা। ঠিক ৫০ বছর পূর্বে ১৯৬৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাংমাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় গড়ে উঠেছিল একটি বিশ্বমানের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। পূর্বে এর নাম ছিল Sweden Bangladesh Institute of Technology সংক্ষেপে SBIT। বর্তমানে এটি Bangladesh Sweden Polytechnic Institute নামে পরিচিত। সুইডেন এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত বলে এহেন নামকরণ। পাহাড় আর গাছগাছালির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ঘেরা মনোরম পরিবেশে বর্তমান BSPI অবস্থিত।
জানুয়ারী ২০১৩। ভরপুর শীত। এ মাসেই “50 years Golden Jubilee” উদযাপিত হবে বলে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম যাব না তাই রেজিস্ট্রেশনও করিনি। পকেটের অবস্থাও ভাল না। নির্ধারিত তারিখের আগের দিন বিকেলে একটা Meeting থেকে ২০০০ টাকা ওনারিয়াম পেলাম। অফিস থেকে বের হতে হতে সন্ধ্যা। এখনও দোটানায় ভুগছি। ঢাকা থেকে যাবার মত কোন সাথীও নেই। হঠাৎ সাগর ফোন করে বলল, আমিও যেতে চাই কিন্তু সাহস পাচ্ছি না। তুই গেলে যাব। আমিও বললাম তাহলে আমিও যাব। দু’জনের নিমরাজি একত্রিত হয়ে হল রাজি। ঢাকা থেকে অনেকেই ট্রেনের বগী রিজার্ভ করে যাচ্ছে। সাগর বলল, সেখানে একটু খোঁজ নিতে। যাবার কোন ব্যবস্থা হয় কিনা। ফোন করে ব্যর্থ হলাম। এরপর সরাসরি চলে গেলাম ফকিরাপুল বাস স্ট্যান্ড। সৌদিয়া পরিবহণ ছাড়া কোন সার্ভিসের টিকেট নেই। তাও আবার একেবারে পেছনের দুটো সিট। কি আর করা, কেটে নিলাম। বাসায় গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে, নামাজ পড়ে, প্রস্তুত হয়ে বাসস্ট্যান্ডে এলাম। সাগরও এসে গেছে।
বাসে উঠে সিটে বসে গল্প করতে করতে ভোর বেলা কাপ্তাই পৌঁছলাম। স্থানীয় একটা হোটেলে নাস্তা সেরে এলাকার বন্ধু রিটুর বোনের বাসায় গিয়ে উঠলাম। অনুষ্ঠান শুরু হবে দুপুরে। দুই দিন ব্যাপী প্রোগ্রাম। প্রতি বেলার খাবারের ব্যবস্থাও এখানে। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
প্রায় ৭ বছর পর পুরনো চেনা মানুষগুলোর সাথে দেখা হল। সবার মধ্যেই পরিবর্তন এসেছে। যুবক থেকে এখন পরিপক্ক হয়েছে। অনেকে দাম্পত্য জীবনে পদার্পন করেছে। সাইফুল এসেছে বউ এবং মেয়ে নিয়ে। আরও এসেছে মাহবুব, শাহাদাৎ, আমিন, শওকত, ফরহাদ, মেহেদি, পুজন, জুয়েল, বিউটি, রোকন, আলমগীর, সাইদ, সাইদুর, সাবের, মিজু, সোহাগ, প্রবাল, আসাদ, দিপায়ন, বখতিয়ার, উথাইনু, প্রিয়বরণ, লীনা, পেকি, পারভেজ, রায়হান সহ আরো অনেকে। যারা রেজিস্ট্রেশন করেছে তাদের খাবারগুলোই সবাই মিলে শেয়ার করলাম।
সবাই মিলে দুটো দিন এক সাথে খেলাম, ঘুরলাম, ঘুমালাম, প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করলাম। চেনা ক্যাম্পাসটাকে বহুদিন পর ঘুরে দেখলাম। আমদের সময় যারা পড়াতেন সেই স্যাররা কেউ নেই। পুরনো দু এক জন যারা ছিলেন তাদের সাথে দেখা করলাম।
প্রথম থেকে শুরু করে চলমান ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেছে। তবে প্রথম থেকে ১০/১৫ ব্যাচের উপস্থিতি তুলনামুলক কম। অনেকেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। অনেকেই বয়স্ক। কেউবা ব্যস্ত। সব কিছু মিলিয়ে দুটো দিন ভালই কাটল। অনেক স্মৃতিচারণ হল। এখানে অনেকে এসেছেন স্ব-পরিবারে। স্বক্রিয় অংশগ্রহপণের জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে দুটো বন্ধের দিন।
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে এসেছে সবাই। দুটো দিন একসাথে কাটাতে, মজা করতে। আমাদের তৎকালীন সমসাময়িক সিনিয়র ব্যাচ এবং জুনিয়র ব্যাচের অনেকের সাথে দেখা হল, কুশল বিনিময় হল।
চিরচেনা সেই ক্যাম্পাসটাকে রঙ, ব্যানার, ফেস্টুন, লাইটিং ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয়েছে উৎসবের আদলে। ক্যাম্পাস মাঠে স্থাপন করা হয়েছে সুবিশাল প্যান্ডেল। সবকিছু মিলিয়ে ক্যাম্পাস যেন তার যৌবন ফিরে পেয়েছে।
অনেকদিন পর বন্ধুরা সবাই পুনরায় একসাথে। যেন ফেলে আসা দিনে ফিরে গেছি। এমনিতেই অনেকের সাথে মাঝে মাঝে দেখা হয় আবার কারো সাথে একদমই না। এ উপলক্ষ্যে দেখা হয়ে গেল। জানিনা আবার কবে এমন দেখা হবে। আদৌ হবে কিনা তাই বা কে জানে।
দুই দিন পর হাতে আর ছুটি নেই। ফিরে যেতে হবে আপন ঠিকানায়। ভাবতেই ভেতরে হু হু করে কেঁদে উঠল। চির চেনা পুরনো মানুষগুলোকে একসাথে পেয়ে যাবার কথা একেবারেই ভুলে গেছি। ফিরে যেতে চরম অনিহা। কিন্তু কি আর করা ফিরে তো যেতেই হবে।
আবার দেখা হবে, আবার ফিরে আসব এই প্রাঙ্গনে এমনসব প্রলোভন দেখিয়ে মনকে শক্ত হতে বললাম। অবশেষে দু দিনের অনেক আনন্দ, অনেক মজা, অনেক দুষ্টুমিকে স্মৃতির ডায়রীতে স্থান দিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে প্রত্যাবর্তন। এরপরও যে কথাটি না বললেই নয়, “বন্ধু, তোদের বড্ড মিস করি”।